ফরিদপুর প্রতিনিধি:
ফরিদপুরের নগরকান্দার স্কুলছাত্র আলাউদ্দিন মাতুব্বর অন্তর (১৪) হত্যা মামলায় তিনজনের মৃত্যুদণ্ড ও তিনজনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের অন্য ধারায় যাবজ্জীবন এবং বাকি আসামিদের একটি ধারায় ১৪ বছরের এবং অপর একটি ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও সর্বমোট এক লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
আজ বুধবার (২৭ মার্চ) দুপুর ১২ টার দিকে ফরিদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন– নগরকান্দার চর মানিকদী গ্রামের হাবিব বেপারির ছেলে মাহাবুব আলম, পিপরুল গ্রামের আলতাফ মাতুব্বরের ছেলে কামাল মাতুকার ও দক্ষিণ বিলনালিয়া গ্রামের মোবারক মাতুব্বরের ছেলে খোকন মাতুব্বর। তাদের প্রত্যেককে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ৭ ধারায় ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ৮ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
এছাড়া, এ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন– পাগলপাড়া গ্রামের দুলাল শেখের ছেলে আশরাফ শেখ, আজিজুল শেখ এবং দক্ষিণ বিলনালিয়া গ্রামের আক্তারুজ্জামানের ছেলে সুজন মাতুব্বর।
রায় ঘোষণার সময় আজিজুল শেখ ছাড়া বাকি পাঁচ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে পুলিশ পাহারায় তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৭ জুন রাতে তারাবি নামাজ পড়ার জন্য বাসা থেকে বের হওয়ার পরে অপহরণ করা হয় ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের চর মানিকদী পাগলপাড়া গ্রামের প্রবাসী আবুল হোসেন মাতুব্বরের ৮ম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে আলাউদ্দিন মাতুব্বর অন্তরকে। পরদিন এ ঘটনায় অন্তরের মা জান্নাতি বেগম নগরকান্দা থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করার পরে ওই রাতেই জান্নাতির মোবাইলে ফোন করে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
১৪ জুন পুলিশের উপস্থিতিতে একটি ইরিব্লকের মেশিনঘরে টাকা রেখে অপহরণকারীদের নগদ ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দেয়া হয়। ১৫ জুন অন্তরের মা ১৬ জনের নামোল্লেখ করে নগরকান্দা থানায় অপহরণ মামলা করেন।
এরপর ২২ জুন ফরিদপুর প্রেসক্লাবে অন্তরের পরিবার সংবাদ সম্মেলন করে। পরদিন পত্রপত্রিকায় এ খবর ছবিসহ প্রকাশের পর ২৪ জুন পুলিশ মুক্তিপণ দাবিকৃত মোবাইলের মালিক মাহবুব আলম ও তার ভাই জুবায়ের বেপারীকে গ্রেফতার করে। এরপর তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ২৬ জুন রাতে পুলিশ চকের মধ্যে উল্টো করে পুঁতে রাখা অন্তরের মরদেহ উদ্ধার করে।
২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর নগরকান্দা থানার এসআই নিখিল চন্দ্র অধিকারী ৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। তিনি বস্তুনিষ্ঠ সাক্ষ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় গ্রেফতারকৃত অপর আসামি জুবায়েরকে দায় হতে অব্যাহতির আবেদন করেন।
এদিকে, রায়ের প্রতিক্রিয়ায় নিহত অন্তরের মা জান্নাতি বেগম আবেগে বাকরুদ্ধ হয়ে যান। তিনি বলেন, সন্তানের হত্যাকারীদের ফাঁসির আদেশ দেয়ায় আমি সন্তুষ্ট। আমি চাই, এই রায় অবিলম্বে কার্যকর করা হোক।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) স্বপন কুমার পাল জানান, দীর্ঘ সাক্ষ্য শুনানি শেষে মামলার রায় ঘোষণা করা হলো। এর মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলো।
আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট অনিমেষ রায় ও অ্যাডভোকেট বিমল তুলশিয়ান বলেন, এ রায়ে তারা সন্তুষ্ট নন। তারা উচ্চ আদালতে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।
/এএম
Leave a reply