চেন্নাইয়ের জয়রথ থামিয়ে দিল্লির প্রথম জয়

ছবি: সংগৃহীত

চলতি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ১৩তম ম্যাচে চেন্নাই সুপার কিংসকে ২০ রানে হারিয়েছে দিল্লি ক্যাপিটালস। আগে ব্যাট করতে নেমে ডেভিড ওয়ার্নার ও রিশাভ পান্তের জোড়া ফিফটিতে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৯১ রানের বড় সংগ্রহ পায় দিল্লি। লক্ষ্য তাড়ায় খলিল আহমেদ ও মুকেশ কুমারের বোলিং তোপে ১২০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় চেন্নাই। শেষ দিকে মহেন্দ্র সিং ধোনির ঝড়ো ব্যাটিংইয়েও জয়ের নোঙরে পৌঁছাতে পারেনি বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। ফলে টানা দুই ম্যাচ জয়ের পর হারের মুখ দেখতে হলো মোস্তাফিজুর রহমানের দলের।

রোববার (৩১ মার্চ) বিশাখাপতত্তনমে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন দিল্লি ক্যাপিটালসের অধিনায়ক পান্ত।  ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই আক্রমণাত্বক ছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার এবং পৃথ্বী শ। তুষার দেশপাণ্ডে দারুণ লাইন লেংথ বজায় রেখে বোলিং করলেও রান বিলিয়ে যাচ্ছিলেন দীপক চাহার। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে প্রথমবার মোস্তাফিজকে বোলিংয়ে আনেন রুতুরাজ। সেই ওভারে পৃথ্বী শ এবং ওয়ার্নারের রোষানলে পড়েন বাঁহাতি এই পেসার। চারটি চারে দেন ২০ রান।

দারুণ ব্যাটিংয়ে আইপিএল ক্যারিয়ারের ৬২তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ওয়ার্নার। টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়ার এই ওপেনারের পঞ্চাশ পেরোনো ইনিংসের সংখ্যা ১১০টি। এদিন সবচেয়ে বেশি পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেলা ক্রিস গেইলকে স্পর্শ করেছেন তিনি। বোলিংয়ে এসে রবীন্দ্র জাদেজাও সুবিধা করতে পারেননি। প্রথম ওভারে ২০ রান দেয়া মোস্তাফিজকে আবারও বোলিংয়ে আনা হয় দশম ওভারে। প্রথম বলেই ওয়ার্নারকে ফেরাতে পারতেন বাঁহাতি এই পেসার। তবে নিজের বলে ফলো থ্রুতে ক্যাচ নিতে পারেননি তিনি। তবে তৃতীয় বলেই দিল্লির ওপেনারকে ফেরান মোস্তাফিজ। শটটা ঠিকঠাক খেললেও বলে গতি না থাকায় বল চলে যায় শর্ট ফাইন লেগে থাকা মাথিশা পাথিরানার হাতে। ডানদিকে অনেকটা ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্যাচ নেন পাথিরানা।

হাফ সেঞ্চুরির আগে পৃথ্বী শ’কে ফেরান জাদেজা। ভয়ংকর হয়ে উঠতে থাকা মিচেল মার্শকে দারুণ এক ইয়র্কারে ফেরান পাথিরানা। ‘বেবী মালিঙ্গার’ একই রকম ডেলিভারিতে আউট হন ট্রিস্টিয়ান স্টাবসও। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে অবশ্য দ্রুত রান তুলেন পান্ত। পাথিরানার ইয়র্কারে স্কয়ার লেগ দিয়ে চার মেরে ৩১ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন দিল্লির অধিনায়ক। ক্রিকেটে ফেরার পর এটিই তার প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। যদিও পঞ্চাশ ছোঁয়ার পরের বলেই আউট হন পাথিরানার বলে রুতুরাজের দারুণ ক্যাচে। শেষ পর্যন্ত ১৯১ রানের পুঁজি পায় দিল্লি। চেন্নাইয়ের হয়ে একাই ৩ উইকেট নেন লঙ্কান পেসার পাথিরানা।

১৯২ রান তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি চেন্নাইয়ের। ইনিংসের প্রথম ওভারেই সাজঘরে ফেরেন রুতুরাজ। খলিল আহমেদের দারুণ এক ডেলিভারিতে বটম-এজ হয়ে উইকেটকিপার পান্তের গ্লাভসে ক্যাচ দেন ১ রান করা চেন্নাই অধিনায়ক। আরেক ওপেনার রাচিন রবীন্দ্রও ব্যাট হাতে ব্যর্থ হন। প্রথম দুই ম্যাচে দেড়শর বেশি স্ট্রাইক রেটে রান তোলা আউট হন ১২ বলে ২ রানে। খলিলের অফ স্টাম্পের অনেকটা বাইরের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করে সাজঘরে ফিরেছেন বাঁহাতি এই ওপেনার।

মাত্র ৭ রানে ২ উইকেট হারানোর পর চেন্নাইকে পথ দেখানোর চেষ্টা করেন আজিঙ্কা রাহানে এবং ড্যারিল মিচেল। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী দ্রত রান তুলতে পারেননি তারা। জুটি গড়লেও ধীরগতির ব্যাটিংয়ে চাপ বাড়ছিল চেন্নাইয়ের ওপর। মিচেল এবং রাহানে যখনই হাত খুলে খেলতে শুরু করেন তখনই জুটি ভাঙেন আক্সার প্যাটেল। বাঁহাতি এই স্পিনারের বলে তারই হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মিচেল। নিউজিল্যান্ডের এই ব্যাটার আউট হন ২৬ বলে ৩৪ রানে।

হাফ সেঞ্চুরির খুব কাছে থাকলেও পঞ্চাশ ছোঁয়া হয়নি রাহানের। মুকেশের লেংথ ডেলিভারিতে ব্যাটে পেয়েও ছক্কা মারতে পারেননি তিনি। বরং টাইমিংয়ে গড়বড় করে লং অনে থাকা ডেভিড ওয়ার্নারের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ৪৫ রান করা এই ব্যাটার। পরের বলে ফেরেন সামির রিজভীও। মুকেশের লেংথ ডেলিভারিতে গালিতে থাকা খলিলকে ক্যাচ দিয়েছেন রানের খুলতে না পারা তরুণ এই ব্যাটার। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে পরিচিতি পাওয়া শিভাম দুবেও ব্যর্থ হয়েছেন।

দিল্লির পেসারদের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ের সামনে হাতখুলে খেলতেই পারেননি দুবে। মুকেশের অফ স্টাম্পের অনেকটা বাইরের স্লোয়ার ডেলিভারিতে মিড অফের উপর দিয়ে খেলতে গিয়ে ট্রিস্টিয়ান স্টাবের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ১৭ বলে ১৮ রান করা এই ব্যাটার। শেষ দিকে ধোনি ১৬ বলে ৩৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেললেও চেন্নাইকে জেতাতে পারেননি। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের থামতে হয় ১৭১ রানে। দিল্লির হয়ে মুকেশ তিনটি এবং খলিল নেন দু’টি উইকেট।

/আরআইএম