দুই ম্যাচ সিরিজের শেষ টেস্টে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশকে ১৭৮ রানে অলআউট করে দেয়ার পর শ্রীলঙ্কার সামনে সুযোগ ছিল ফলোঅন করানোর। তবে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা তা করেননি, দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তবে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে হাসান মাহমুদের বোলিং তোপে ১০২ রান তুলতেই ৬ উইকেট হারালেও তৃতীয়দিন শেষে লঙ্কানদের লিড ৪৫৫ রান।
সোমবার (১ এপ্রিল) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের চেয়ে ৩৫৩ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি লঙ্কানদের। দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় সফরকারীরা। দিমুথ কারুনারাত্নেকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান হাসান মাহমুদ। প্রথম ইনিংসের মতোই শর্ট লেংথ ডেলিভারির বল ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হন করুনারত্নে। ৪ রান করে আউট হন তিনি।
পরের ওভারে খালেদ আহমেদও স্টাম্প ভাঙেন, ২ রানের বেশি পাননি তিনে নামা কুশল মেন্ডিস। এরপর অবশ্য আঞ্জেলো ম্যাথুউজের সঙ্গে জুটি গড়েন টিকে যাওয়া আরেক ওপেনার নিশান মাদুশকা। এই জুটির রান যখন ৪৫, ফের ব্রেকথ্রু নিয়ে হাজির হন হাসান মাহমুদ। ৩৪ রানে ব্যাট করা মাদুশকাকে ফিরিয়েছেন ক্যাচ বানিয়ে। পরপর দুই ওভারে হাসানের জোড়া শিকার। এবার প্রথম স্লিপে দিপুর হাতে ক্যাচ বানান দিনেশ চান্দিমালকে। প্রথম ইনিংসে ৫৯ রানের ইনিংস খেলা চান্দিমাল আজ প্যাভিলিয়নে গেছেন কেবল ৯ করে।
ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে বিদায় করে হাসান মাহমুদ পান চতুর্থ উইকেটের স্বাদ। ৭ বল খেলা লঙ্কান অধিনায়ক ১ রান করতেই লিটনের গ্লাভসে হয়েছেন ক্যাচ। শ্রীলঙ্কার আউট হওয়া পাঁচ ব্যাটারের মধ্যে চারজনই হাসান মাহমুদের শিকার। পার্টিতে অবশ্য যোগ দিয়ে উইকেট সংখ্যা ডাবল করেন খালেদ আহমেদ। ২০ ওভারে ৮৯ রান ওঠতেই শ্রীলঙ্কা হারিয়ে বসে ৬ উইকেট।
চারে নামা আঞ্জেলো ম্যাথুউজ তখনও থিতু হয়ে আছেন উইকেটে। তাকে সঙ্গ দিতে আসা প্রবাথ জয়াসুরিয়াও বেশ দেখে-শুনে দিনের বাকি অংশের খেলা শেষ করেন। এই দুইয়ের দৃঢ়তায় শ্রীলঙ্কার আর কোনো বিপদ ঘটেনি শেষ বিকালে।
এর আগে এক উইকেটে ৫৫ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করেছিল বাংলাদেশ। জাকির হাসান ও তাইজুল ইসলাম দিনের শুরুটা করেছিলেন যথাযথ ধৈর্য নিয়ে। শ্রীলঙ্কার দুই পেসার লাহিরু কুমারা ও বিশ্ব ফার্নান্দোর চ্যালেঞ্জ সামলে প্রতিরোধ গড়েছিলেন তারা। প্রথম ঘণ্টায় কোনও উইকেটই হারায়নি বাংলাদেশ। কয়েকবার অবশ্য বিপদে পড়ার শঙ্কা ছিল জাকির-তাইজুলের। টানা লেংথ ও ব্যাক অব লেংথে বোলিং করেছেন লঙ্কান পেসাররা।
এর মধ্যে দুইবার অবশ্য জাকিরের ব্যাটের বাইরের কানাও ছুঁয়ে যায় বল। যদিও স্লিপের ফিল্ডার পর্যন্ত বল আর পৌঁছায়নি। দ্বিতীয় দিনের শেষ দিকে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা তাইজুলও দারুণ খেলছিলেন। সকালেই অবশ্য শ্রীলঙ্কা তাদের প্রথম রিভিউ হারায়। জাকির হাসানের বিপক্ষে কট বিহাইন্ডের আবেদন টিভি আম্পায়ারের কাছে পাঠালেও সেটা কাজে দেয়নি।
এক ঘণ্টা পার হওয়ার কিছুক্ষণ পরই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন জাকির। ৯৭ বলে আটটি চারে ক্যারিয়ারের পঞ্চম হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি। যদিও এর একটু পরই ফার্নান্দোর দারুণ একটি ডেলিভারিতে ফিরে যান তিনি। ওভার দ্য উইকেট থেকে টানা বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারি করতে করতে একটি ডেলিভারি ভেতরে ঢুকিয়ে দেন ফার্নান্দো, তাতেই বোল্ড হন জাকির। আটটি চারে ১০৪ বলে ৫৪ রান করে ফিরেন এই ওপেনার। তাইজুলের সঙ্গে তার ৪৯ রানের জুটি ভেঙে যায়।
তারপর চটজলদি আরও দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। প্রবাথ জয়সুরিয়ার ফুল লেংথ ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেট ফিল্ডারের হাতে ক্যাচ তুলে দেন নাজমুল হোসেন শান্ত। বাংলাদেশের অধিনায়ক ১১ বলে মাত্র ১ রান কর ফিরে যান। ১০৫ রানের মধ্যে তাইজুলকেও ফেরান ফার্নান্দো। অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে ভেতরে ঢোকা ডেলিভারি ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হন তাইজুল। ফেরার আগে করেন ৬১ বলে ২২ রান। ১ উইকেটে ৯৬ থেকে ৪ উইকেটে ১০৫ রানে পৌঁছে যায় তারা। বাংলাদেশ প্রথম সেশনে করে চার উইকেট হারিয়ে ১১৫ রান।
মধ্যাহ্নভোজ বিরতি থেকে ফিরেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ৪৫তম ওভারে আম্পায়ার্স কলে এলবিডব্লিউ হয়ে ড্রেসিং রুমে ফিরে যান সাকিব আল হাসান। আসিথা ফার্নান্দোর ভেতরে ঢোকা একটি ডেলিভারিতে অন সাইডে খেলার চেষ্টা করতে ব্যর্থ হন সাকিব। বল প্যাডে আঘাত করলে আম্পায়ার আউট দিয়ে দেন। সাকিব রিভিউ নিলে রিপ্লেতে দেখা যায়, লেগ স্টাম্পের বাইরের অংশ হালকা ছুঁয়ে যেত বল। যদিও মাঠের আম্পায়ার ‘আউট’ দেয়ায় সেই সিদ্ধান্তই বহাল থাকে। ফলে ২৩ বলে ১৫ রান করে ফিরে যেতে হয় প্রায় এক বছর পর টেস্ট দলে ফেরা সাকিবকে
একই ওভারে ফিরে যান লিটন দাসও। ফলে ১৩০ রানে ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আসিথা ফার্নান্দোর লেংথে পড়ে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে খোঁচা মেরে কট বিহাইন্ড হন লম্বা সময় ধরে অফ-ফর্মে থাকা লিটন। এর একটু পর শাহাদাত হোসেন দিপুও সাজঘরে ফেরেন। লাহিরু কুমারার অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে দূর থেকে খোঁচা মেরে ফিরে যাওয়ার আগে ৩৬ বলে ৮ রান করেন তিনি। দ্বিতীয় স্লিপে তার ক্যাচটি নেন কামিন্দু মেন্ডিস।
ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মিছিলে টিকতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজও। প্রবাথের অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করা আর্ম ডেলিভারিটি ভুল লাইনে ডিফেন্ড করতে গিয়ে লেগ বিফোর উইকেটের শিকার হন এই অলরাউন্ডার। ৩১ বলে ৭ রান আসে তার ব্যাটে। মিরাজ এবং দিপু- দুজনই একটি করে ‘জীবন’ পান যেটি তারা একেবারেই কাজে লাগাতে পারেননি।
একদিকে কেবল টিকে ছিলেন মুমিনুল হক। আসিথা ফার্নান্দোর ফুল লেংথের একটি ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হন তিনি। রিভিউ নিয়ে উইকেটে আম্পায়ার্স কল হওয়াতে ফিরতে হয় তাকে। ফেরার আগে ৮৪ বলে ৩৩ রান করেন এই ব্যাটার। এ দিন টেস্ট ক্রিকেটে চার হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। মুমিনুল ফেরার পর আসিথা ফার্নান্দোর বলে খালেদ আহমেদ বোল্ড হলে বাংলাদেশের ইনিংস ১৭৮ রানে থামে।
/আরআইএম
Leave a reply