ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্বের শেষ আটের মহারণের প্রথম লেগে প্যারিস সেইন্ট জার্মেইকে ৩-২ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে সেমিফাইনালে এক পা দিয়ে রাখলো বার্সেলোনা। দুই গোল করে কাতালান জায়ান্টদের জয়ের নায়ক ব্রাজিলের তারকা ফুটবলার রাফিনহা। আর বদলি হিসেবে নেমে জয়সূচক গোল করেন আন্দ্রেন ক্রিস্তেনসেনের। তাতে পিছিয়ে পড়েও পিএসজিকে স্তব্ধ করে দিল জাভি হার্নান্দেজের শিষ্যরা। পিএসজির হয়ে গোল দুটি করেন উসমান দেম্বেলে ও ভিতিনহা।
বুধবার (১০ এপ্রিল) নিজেদের ঘরের মাঠ পার্ক দ্য প্রিন্সেস স্টেডিয়ামে বার্সেলোনাকে আতিথ্য জানায় প্যারিস সেইন্ট জার্মেই। চেনা মঞ্চে নিজেদের দর্শকদের সমর্থন পাওয়া পিএসজি শুরু থেকে চেপে ধরে ধরেছিল বার্সাকে। তবে ম্যাচের ৬ষ্ঠ মিনিটে প্রথম সুযোগ পায় বার্সেলোনা। গোলরক্ষক মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেনের উঁচু করে বাড়ানো বল পিএসজির ডিফেন্স লাইনের পেছনে খুঁজে পায় রাফিনহাকে। বিপদ দেখে ডি-বক্স ছেড়ে অনেক বাইরে বেরিয়ে আসেন পিএসজি গোলরক্ষক জানলুইজি দোন্নারুম্মা। মূলত তার চ্যালেঞ্জের মুখেই বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেননি রাফিনহা।
ম্যাচের ১৯ মিনিটে পায়ের কারিকুরিতে দারুণ এক সুযোগ তৈরি করেন নুনো মেন্দেস। লামিনে ইয়ামাল ও জুল কুন্দেকে এড়িয়ে পৌঁছে যান বিপজ্জনক জায়গায়। কিন্তু হাঁটু গেড়ে চমৎকার ব্লকে তার শট ঠেকিয়ে দেন রোনাল্দ আরাউহো। এর মিনিট পাঁচেক পর ডি-বক্সের বাইরে থেকে রাফিনহার বুলেট গতির শট ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান দোন্নারুম্মা।
এরপর ম্যাচের ৩৭ মিনিটে রাফিনহার গোলে এগিয়ে যায় কাতালান ক্লাবটি। নিজেদের বক্সে ব্যস্ত সময় পার করতে থাকা পিএসজি গোলকিপার দোন্নারুমা লামিনে ইয়ামালের ক্রস রুখে দিলে বল পেয়ে বাঁ পাশে অরক্ষিত থাকা রাফিনহা। সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে কোনো ভুল করেননি তিনি। ঠাণ্ডা মাথার শটে ঠিকানা খুঁজে নেন পিএসজির রক্ষণে বারবার ভীতি ছড়ানো ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার। ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় জাভি হার্নান্দেজের শিষ্যরা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই চমৎকার এক গোলে স্বাগতিকদের সমতায় ফেরান দেম্বেলে। ম্যাচের ৪৮তম মিনিটে বল ক্লিয়ার করার চেষ্টায় ঠিকমতো শট নিতে পারেননি আরাউহো। ডি-বক্সে বল পেয়ে যান অরক্ষিত দেম্বেলে। বার্সেলোনার তিন খেলোয়াড় ছুটে গিয়ে প্রতিহত করার চেষ্টা করলেও কাজ হয়নি। ফরাসি ফরোয়ার্ডের বুলেট গতির শট তাদের ফাঁকি দিয়ে, টের স্টেগেনকে এড়িয়ে জড়ায় জালে।সাধারণত নিজের সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে গোল পেলে উদ্যাপন করতে দেখা যায় না। তবে বার্সা ছেড়ে এ মৌসুমেই পিএসজিতে যোগ দেয়া দেম্বেলে উদযাপন করতে একটুও কার্পণ্য করেননি।
দেম্বেলের গোলের মিনিট দুয়েক পরেই এগিয়ে যায় পিএসজি। ফাবিয়ান রুইজের পাস থেকে বল পেয়ে ব্যবধান ২–১ করেন ভিতিনহা। কিলিয়ান এমবাপ্পেকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ‘বোতলবন্দী’ করে রেখেছিলেন বার্সার ডিফেন্ডাররা। তবে দেম্বেলে–ভিতিনহাদের সুবাদে এগিয়ে যাওয়ায় জয়ের ব্যাপারে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিল পিএসজি। এর তিন মিনিট পর ব্যবধান বাড়তে পারত আরও। বাহলি বারকোলার জোরালো শট টের স্টেগেনের গ্লাভস ছুঁয়ে লাগে ক্রসবারে।
ম্যাচের ৬২তম মিনিটে আবারও অসাধারণ এক ফিনিশিংয়ে দলকে সমতায় ফেরান রাফিনহা। সবেই মাঠে আসা পেদ্রির বাড়ানো বলে ছুটে গিয়ে দুর্দান্ত এক ভলিতে খুঁজে নেন জাল। জায়গা থেকেই নড়তে পারেননি গোলরক্ষক। ৭৫ মিনিটে বড় বাঁচা বেঁচে যায় বার্সেলোনা। দেম্বেলের শট পোস্টে লেগে ব্যর্থ হয়।
এরপর ৭৭ মিনিটে বার্সেলোনার জয়ের মাহেন্দ্রক্ষণ চলে আসে। কর্নার থেকে পাওয়া বলে হেডে দারুণ গোল করেন ক্রিস্তেনসেন। বাকিটা সময় অনেক চেষ্টা করলেও বার্সার রক্ষণভাগের দৃঢ়তায় হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় প্যারিসিয়ানদের। এদিকে, ২০১৫ সালের পর এবারই প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগের নক আউট পর্বে প্রতিপক্ষের মাঠে ৩ গোল করলো বার্সেলোনা। সেবার পিএসজির বিপক্ষে ৩-১ গোলে তারা জিতেছিল।
আগামী মঙ্গলবার এগিয়ে থাকার স্বস্তি নিয়ে ঘরের মাঠে ফিরতে লেগে লড়াইয়ে নামবে বার্সেলোনা। টিকে থাকতে পিএসজির সামনে অপেক্ষা করছে কঠিন লড়াই।
/আরআইএম
Leave a reply