গত কয়েকদিন ধরে রাজনৈতিক নেতাদের ফোন আলাপ ফাঁস হওয়া নিয়ে এক প্রশ্নে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, অনেকগুলো ফোন আলাপ ফাঁস হয়েছে কিন্তু সরকার পক্ষের কারো নয়। শুধু বিরোধী দলের সাথে বিরোধী ফোন ফাঁস হচ্ছে। আর এটা ষড়যন্ত্র। আড়িপাতা এক ধরণের ষড়যন্ত্র। সরকারের উচিত কে আড়িপাতলো তা খুঁজে বের করা। আমরা এ ব্যাপারে মামলা করতে পারি কিন্তু মামলাই নেয় না। এই পুরোটাই চক্রান্ত। সরকার ব্যক্তিগত অধিকারে হস্তক্ষেপ করেই যাচ্ছে। যমুনা টেলিভিশনের সন্ধ্যা কালীন নির্বাচন নিয়ে টকশো ‘রাজনীতি’ তে তিনি এ কথা বলেন।
রোকসানা আঞ্জুমান নিকোলের উপস্থাপনায় “কী বার্তা দিলো ঐক্যফ্রন্ট” শীর্ষক আজকের আলোচনায় অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এবং বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, নাগরিক ঐক্য’র আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপি’র বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, ডিবিসি নিউজের প্রধান সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে তারেক রহমান নিয়ে ব্যরিস্টার মঈনুলের ফোন আলাপের কথা নিয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ব্যরিস্টার মঈনুল নিয়ে অযথা হাইপ তৈরি করা হচ্ছে। আর তিনি সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি হিসেবে ঐক্যফ্রন্টে এসেছেন। তিনি এই ঐক্যফ্রন্ট বানান নাই বা মেন্টরও না। তার যদি মনে হয় আন্দোলনের পর সরকার পরিবর্তন হয়, সেই সরকারে কে আসবে?। সেটা বেগম জিয়ার সরকার নাকি তারেক রহমানের সরকার। তার যদি মনে হয় ড. কামালের সরকার ভালো হবে এবং তাকেই সরকারে নিয়ে আসি। তাহলে তার ভাবনার মধ্যে অসুবিধার কি আছে। যে কারোর মনে হতেই পারে একটি স্বৈরতন্ত্রের বদলে আরেকটি স্বৈরতন্ত্রের চেয়ে ড. কামালের সরকার বেশি গণতান্ত্রিক। আর এই মঈনুলের কথাটা ঐক্যফ্রন্টের কোন কথা না বলে জানিয়েছেন তিনি।
সিলেটে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ নিয়ে তিনি বলেন, আমরা আমাদের প্রত্যাশা মতো সাড়া পেয়েছি যদিও সরকার নানাভাবে আমাদের বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে তারপরও বলবো সিলেটের আজ ঐতিহাসিক সমাবেশ হয়েছে। সমাবেশে যতদূর চোখ যায় শুধু মানুষ ছিলো। আজকের সমাবেশে মানুষ স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ করেছে। এটা সত্যিকারের গণতন্ত্রের উৎসব ছিলো। দল মত নির্বিশেষে সবাই এই সমাবেশ কে সমর্থন দিয়েছে।
মাহমুদুর রহমান মান্না আজকের সমাবেশ উপলক্ষে নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের কড়া সমালোচনা করেন। ২০১৪ সালে সরকার ধাপ্পাবাজি নির্বাচন দিয়ে পার পেয়েছিল কিন্তু এই বার জনগণ দাবি আদায়ে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবে। জনগণই তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করবে এমনটা বলেছেন তিনি।
সিলেটে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ নিয়ে আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম বলেন, আজকের সমাবেশ সফল হয়নি। বিএনপি নেতা তারেক রহমান, খালেদা জিয়া আদালত কর্তৃক দুর্নীতির দ্বায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত। মানুষ বিএনপির অপর্কম ভুলে যায়নি আর এসব বিতর্কিত লোকদের নিয়ে জোট করেছে কামাল হোসেন। প্রধানমন্ত্রী সবাইকে গণতন্ত্রের সুবিধা দিয়েছেন বলেই ঐক্যফ্রন্ট আজ সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে। সরকার বিরোধীদের কখনোই চাপে রাখেনা বরং তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার অনুযায়ী সহযোগিতা করে।
সমাবেশ উপলক্ষে যারা গ্রেফতার হয়েছেন তাদের সম্পর্কে শ ম রেজাউল করিম বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেপ্রণিত হয়ে সরকার কাউকে গ্রেফতার করিনি। যারা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছে পুলিশ শুধু তাদেরকেই গ্রেফতার করেছে। ২০১৪ সালে বিএনপি জোট নির্বাচন প্রতিহতের নামে ১৭৩ জন মানুষ কে হত্যা করেছে। অসংখ্য মানুষকে পুড়িয়েছে, দেশের সম্পদ বিনষ্ট করেছে তারপরও সরকার আইন অনুযায়ী নির্বাচন করেছে। সরকার কে হুমকি না দিয়ে তিনদিন বিএনপি কে নিজেদের হারানো সংকট পুনরুদ্ধার করতে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
সমাবেশের পাশে লিফলেট বিতরণ ও মিছিল করা নিয়ে শ ম রেজাউল করিম বলেন, এই সমাবেশ কে কেন্দ্র করে হয় নি। এটা আমাদের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি। সমাবেশ বিঘ্নিত করার জন্য এটা করা হয়নি। এটা আমরা করতে পারি না যে, সিলেটে কেউ মিটিং করছে তাই আমরা আমাদের প্রচার অভিযানটা বন্ধ রাখবো।
টকশোতে বিএনপি’র বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন,আগের সমাবেশ বিএনপির সমাবেশ ছিল তাই প্রতিকী চেয়ার খালি ছিল।এটা ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ তাই খালি রাখা হয়নি। তবে আমাদের দাবি ছিল অবাধ নির্বাচন ব্যবস্থা, আদালত স্বাধীন, কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠন এবং খালেদা জিয়াকে জেল থেকে মুক্ত করা। আমাদের সমাবেশকে ভিন্ন ধারায় নেয়ার জন্য অনেকের উদ্বেগ ছিল। আর নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, বাড়িতে হামলার পরও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এটাই আমাদের সফলতা।
সরকারের সাথে সংলাপ নিয়ে এক প্রশ্নে ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, নির্বাচনী জোট হিসেবে না, অবাধ নির্বাচনের জন্যই এই ফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনই আমাদের সরকারের কাছে দাবি। ঐক্যফ্রন্ট থেকে সরকারের সাথে সংলাপের বসার জন্য বলা হয়। কিন্তু সরকার তা নাকচ করে দেয়। তাই লিখিত আকারে আমরা আমাদের দাবি জানিয়েছি।
Leave a reply