একদিকে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের কথা চলছে। অপরদিকে, রাখাইনে এখনও রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার সরকার। রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে উঠে এসেছে এ তথ্য। অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে মিয়ানমারের পাল্টা অভিযোগ- সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানকে ‘গণহত্যা’ বলে অভিহিত করছে বিশ্ব সম্প্রদায়।
রাখাইনে গেল বছর সেনা বর্বরতার মুখে পালিয়ে নতুন করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। নির্যাতন সহ্য করে ভিটেমাটিতে রয়ে গেছে আড়াই থেকে চার লাখ মানুষ। সবচেয়ে নিপীড়িত সংখ্যালঘু এই গোষ্ঠীর পক্ষে বারবার বিশ্ব সম্প্রদায় উচ্চকণ্ঠ হলেও দৃশ্যপট বদলায়নি এক বছরেও।
বুধবার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক শেষে, সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন জাতিসংঘে মিয়ানমারের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত এবং ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের চেয়ারম্যান। তারা জানান, অব্যাহত সহিংসতায় প্রাণে বাঁচতে এখনও প্রতিদিন বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে শত শত রোহিঙ্গা। তাদের ওপর নির্যাতন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় অং সান সু চি’র কড়া সমালোচনাও করেন তারা।
জাতিসংঘ ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের চেয়ারম্যান মারজুকি দারুসমান বলেন, রাখাইনে এখনও অরাজকতা চলছে। এমনকি এই মুহূর্তেও অঞ্চলটিতে বসবাসরত রোহিঙ্গা সম্প্রদায় ভয়াবহ নিপীড়ন সহ্য করছে। ২০১৭ সালের আগস্টে শুরু হওয়া বর্বরতায় দৃশ্যত বা কার্যত কোনো পরিবর্তনই আসেনি। চলমান এ গণহত্যা বন্ধে দোষীদের জবাবদিহিতার বিকল্প নেই, যা রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে হবার নয়। মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে পারে বিশ্ব সম্প্রদায়ই।
জাতিসংঘে মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি বলেন, মিয়ানমার সরকার প্রমাণ করেছে যে প্রকৃত গণতন্ত্রে দেশটির আগ্রহ নেই। রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিক অধিকার বা স্বাধীনতা নিশ্চিতে তারা অক্ষম। মুখে ন্যায় আর আইনের শাসনের কথা বললও এসবের তোয়াক্কা করেন না দেশটির রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা। নাহলে নিপীড়নের অস্ত্র হিসেবে বৈষম্যমূলক আইন বা অপরাধীদের পুরস্কৃত করার প্রবণতা থাকতো না মিয়ানমারে।
জাতিসংঘের বক্তব্যে সমর্থন জানিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন। যদিও বরাবরের মতোই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে নেইপিদো।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে বিতাড়নের স্পষ্ট ও প্রাসঙ্গিক তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করেছে ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন। রাখাইনে চলমান সহিংসতার সত্যতা নিয়ে সন্দেহের সুযোগ নেই। যে উপায়ে রোহিঙ্গা-নিধন চলছে, তা আন্তর্জাতিক আইনে বর্বরতম অপরাধ।
জাতিসংঘে মিয়ানমারের স্থায়ী প্রতিনিধি হাউ দো সুয়ান বলেন, রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানকে ‘গণহত্যা’ বলা হচ্ছে। উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়াই এসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার প্রমাণ থাকলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স-সহ নিরাপত্তা পরিষদের নয় সদস্য রাষ্ট্রের উদ্যোগে বসে বুধবারের এই বৈঠক। যেখানে বরাবরের মতোই মিত্র মিয়ানমারের পক্ষে সাফাই গেয়েছে চীন আর রাশিয়া।
Leave a reply