দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মায়ের দেখা পেলেন উম্মে মুরসেলিনা। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় হারিয়ে যান তার মা চমন আরা। ৫৩ বছর পর দেশে ফিরলেন চমন আরা। গতকাল শুক্রবার (৩ মে) রাত ৯টার কিছুটা আগে একটি ফ্লাইটে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি।
মাকে কাছে পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন উম্মে মুরসেলিনা। মায়ের সাথে বুকে বুক মিলিয়ে হৃদয় শান্ত করেন মেয়ে। এ সময় বিমানবন্দরে ছিলেন পরিবারের অন্য সদস্যরা। তখন তাদের মধ্যে পুনর্মিলনীর আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে।
উম্মে মুরসেলিনা বললেন, একটা কষ্ট ছিল…. মা না থাকলে কত দুঃখ-কষ্টের কথা বলা যায় না। অবশেষে পাওয়া গেলো।
বহুকাল আগের সব কথা মনে নেই দেশে ফেরা চমন আরার। তবে, নাড়ি ছেড়া ধনকে বুকে পাওয়ার অনুভূতির সাক্ষী দিচ্ছিল অশ্রুসজল চোখ।
১৯৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বিমানবাহিনীর তৎকালীন কর্মকর্তা এস এম মুসলিম স্ত্রী ও দুই কন্যা উম্মে মুরসেলিনা ও উম্মে তাসলিমাকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন ভারতের একটি শরনার্থী শিবিরে। সেখানেই হারিয়ে যায় তার স্ত্রী চমন আরা। বহু বছর ধরে খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান মেলেনি তার। অগত্মা দুই মেয়ে নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন এস এম মুসলিম।
বহু বছর পর পরে ফেসবুকে উম্মে মুরসেলিনাদের ছোটবেলার ছবি পোস্ট করেন তার মেয়ে জামাই জাহিদ হোসেন নিটুল। খোঁজ করতে থাকেন হারিয়ে যাওয়া নানী শাশুড়িকে। এটি দেখে সে ছবি পাকিস্তানের বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপে পোস্ট দেন দেশটির বিখ্যাত কনটেন্ট ক্রিয়েটর ওয়ালিউল্লাহ মারুফ। সেই সূত্রে ২০২২ সালে সন্ধান মেলে চমন আরার। একজন পাকিস্তানি দাবি করেন, চমন আরা আছেন সেখানে।
চমন আরার নাতনী জামাই জাহিদ হোসেন নিটুল জানান, ১৪-১৫ সাল থেকে তিনি চমন আরাকে সন্ধান করতে থাকেন। ২২ সালে এসে খোঁজ মেলে। ৫৩ বছর পর এখন মা-মেয়ের মুখোমুখি প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছে। এর আগে ভিডিও কলে তাদের মধ্যে কথা হয়েছে।
ছোটবেলার ছবিটির সুবাদেই মেয়েকে চিনতে পারেন মা চমন আরা। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে মাকে খুঁজে পাওয়ার সে গল্প ফলাও করে প্রচার করে পাকিস্তানের বিভিন্ন গণমাধ্যম।
জাহিদ হোসেন নিটুল বলেন, আরও দুইবার উনি (চমন আরা) ভিসার জন্য আবেদন করেছিলেন। কিছু জটিলতার কারণে ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান হয়। উনি বারবার লেগে ছিলেন, মা-মেয়ে সাক্ষাৎ করবেন। বাংলাদেশ থেকে যারা সহযোগিতা করেছে, তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।
উল্লেখ্য, ৬ মাস এ দেশে থাকার কথা রয়েছে চমন আরার।
/এমএন
Leave a reply