মেহেদী হাসান রোমান
মার্কো রয়েসের পরিচয় যতটা না জার্মান, তার চেয়েও মিস্টার ডর্টমুন্ড। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ইনজুরি তাকে বারবার বাঁধা দিয়েছে বড় টুর্নামেন্টগুলোতে অংশ নিতে। ২০১৪ সালে যখন জার্মানি বিশ্বকাপ জেতে সেই টুর্নামেন্টেও ছিলেন না তিনি। সতীর্থরা বিশ্বকাপ সেলেব্রেশনের সময় তার জার্সিটা প্রদর্শন করছিলো। বোঝা যাচ্ছিলো রয়েস ছিলেন, আছেন তাদের সাথে। অপরদিকে ডর্টমুন্ডের সাথে তার সম্পর্কটা ছিলো লয়্যালিটির- এমনটাই প্রচলিত ছিলো ফুটবলের আলাপ ও গল্পে। তবে এবার সেই গাঁটছড়াও ভেঙে গেলো। অবসান হলো এক যুগের রয়েস-ডর্টমুন্ড যুগলবন্দির।
চলতি মৌসুম শেষে সিগনাল ইদুনা পার্ক ছাড়ছেন ৩৪ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার। দিন দুয়েক আগে সেটি ঘটা করে জানিয়েছে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড। এদিকে অন্য ক্লাবগুলোও আগ্রহ দেখায়নি বিধায় সিজন শেষে ফ্রি এজেন্ট হয়ে ক্লাব ছাড়ছেন তিনি।
রয়েসের জন্ম নর্থ রাইন ওয়েস্টপালিয়া প্রদেশের ডর্টমুন্ড শহরে। যে শহরকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড ক্লাবটি। সিগনাল ইদুনা পার্কের বিখ্যাত সেই ইয়োলো ওয়ালের সাথে রয়েসের সখ্যতা তাই অনেক আগে থেকেই। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে ক্লাবটির একাডেমিতে পদচারনার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।
ক্লাবটির অনেক উত্থান-পতনের সাক্ষী রয়েস। তার সঙ্গে খেলা অনেক সতীর্থই ক্লাবটি ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন ইউরোপের নামিদামি অন্যসব ক্লাবে। প্রস্তাব পেয়েছেন তিনিও। তবে সবাই চলে গেলেও বিশ্বস্ত সাথীর মতো থেকে গেছেন রয়েস। ক্লাবটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হ্যানস ওয়াটৎজ রয়েস সম্পর্কে বলেছেন, ‘মার্কো ক্লাবের ইতিহাসে অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। সে ডর্টমুন্ডেই জন্মেছে, আমাদের একাডেমিতে কাটিয়েছে এক দশকেরও বেশি সময়। মূল দলে খেলেছে ১২ বছর। বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের সঙ্গে তাঁর বন্ধন অসাধারণ। আমরা মার্কোর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি। আশা করি, অবসর নেওয়ার পর সে ডর্টমুন্ডে ফিরবে, কারণ ভূমিকা রাখার মতো প্রচুর জায়গা তার জন্য আছে এখানে।
এখন প্রশ্ন মার্কোকে অ্যাথলেট হিসেবে বিদায় জানানোর পর ক্লাবটির দরজা কি ডাগআউট কিংবা অথরিটিতে অন্তর্ভুক্ত হবার জন্য খুলে রাখলো ক্লাবটি? ডর্টমুন্ডের হয়ে রয়েস খেলেছেন ৪২৪টি ম্যাচ। পরিসংখ্যান বলছে ১৬৮ গোল করার পাশাপাশি অ্যাসিস্ট করেছেন ১২৮টিতে। বরুশিয়ার হয়ে দুটি জার্মান কাপ (ডিএফবি পোকাল) এবং তিনটি জার্মান সুপার কাপ জিতেছেন তিনি।
খেলেছেন ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালেও। অল জার্মান ফাইনালে সেবার বায়ার্নের কাছে স্বপ্নভঙ হয়েছিলো তার। ক্লাবে থাকাকালীন ২বার বুন্দেসলিগার মৌসুমসেরা (২০১৩-১৪, ২০১৮-১৯) হবার পাশাপাশি ৩বার বুন্দেসলিগার মাসসেরা খেলোয়াড় ও ৬ বার লিগের মৌসুমসেরা দলে জায়গা পেয়েছেন রয়েস। এছাড়া ২০১৩-১৪ মৌসুমে বরুশিয়ার সেরা খেলোয়াড়ের তকমা জুটেছে তার।
২০১২ সালে বরুশিয়া মুনশেনগ্লাডবাখ থেকে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডে যোগ দিয়েছিলেন রয়েস। এর আগে ৩ বছর সেখানে খেলেছিলেন। ডর্টমুন্ডে ২০১৩-১৪ ও ২০১৫-১৬ মৌসুমে ২৩টি করে গোল করেছিলেন হলুদ-কালোদের হয়ে যা তার এক সিজনে সর্বোচ্চ।
এক যুগ সিগনাল ইদুনা পার্কে আলো ছড়িয়ে অবশেষে বিদায় নিচ্ছেন মার্কো। শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত শহর, বেড়ে ওঠা দুরন্ত কৈশোর কিংবা প্রাইম টাইমের দ্যুতিতে ভক্তদের মনে জায়গা করে নেয়া রয়েস কি ফিরবেন আবার ডর্টমুন্ডে? ফিরলেও কবে কিংবা কি বেশে ফিরবেন তিনি, তা আপাতত বলা যাচ্ছে না। জীবনানন্দের ‘আবার আসিবো ফিরে’ লাইনটি কি ইদুনা পার্কের প্রতিটা ঘাস চাইবে না, অন্তত মার্কোর জন্য একটি বার?
Leave a reply