বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩ কঠিন সিদ্ধান্ত: নতুন সুদের হার নিয়ে দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা

|

তৌহিদ হোসেন:

অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি যে তিন কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। তবে অল্প সময়ে এই অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়াবে অর্থনীতি। ব্যাংকে টাকার প্রবাহ নিশ্চিত করা গেলে বাড়বে কর্মসংস্থানও এমন মতামত বিশ্লেষকদের।

তবে ব্যবসায়ীদের চিন্তা ভিন্ন। তারা বলছেন, নতুন সুদ হারে টিকে থাকাই কঠিন। যদিও ভালো গ্রাহকদের জন্য ঋণের অভাব হবে না, দাবি ব্যাংকারদের।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠিন ৩ সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে, ডলারের বিপরীতে টাকার দাম আরও সাত টাকা কমিয়ে ১১৭ টাকা করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশীয় মুদ্রার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয়ের পদ্ধতি ক্রলিং পেগ চালু করেছে। এই পদ্ধতিতে একটি মুদ্রার বিনিময় হারকে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওঠানামা করার অনুমতি দেয়া হয়।

দ্বিতীয়টি হলো— ব্যাংক খাতে ঋণের সুদ হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে সাড়ে আট শতাংশ করেছে। এ নিয়ে চলতি বছরে দ্বিতীয়বার সুদহার বাড়ানো হলো।

এই তিন সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এসব সিদ্ধান্তও আসে, আইএমএফের ঋণের ৩য় কিস্তি ছাড়ের আগে।

এদিকে, বাংলাদেশে বিনিয়োগ কাঠামো গড়ে উঠেছে ব্যাংককে ঘিরেই। পুঁজিবাজার বা বন্ডের মতো অন্য উৎসের এখানে খুব একটা প্রচলন নেই। সে ক্ষেত্রে ব্যাংকের সুদের হার বাড়লে কি অর্থনীতি সামাল দেয়া যাবে?

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এত উচ্চ সুদ দিয়ে কোনো ব্যবসা টিকে থাকতে পারবে না। তখন বাধ্য হয়ে ব্যবসায় লোকসান করে যেতে হবে। অন্যথায় ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে ক্রলিং পেগে সর্বোচ্চ ১১৭ টাকা করা যাবে ডলারের দাম। কারা কেমন দাম বাড়াবে কিংবা উল্টাপাল্টা করলো কিনা তা তারা দেখবে। যারা ভালো গ্রাহক তারা কম সুদের হারেই ঋণ নেবে এবং পাবে।

বহু দশক ধরে বাংলাদেশে কর-জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশের বেশি, যা বিশ্বে সর্বনিম্ন। ইদানিং ৯ শতাংশের নিচে নামছে না মূল্যস্ফীতি। গত দুই বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমেছে প্রায় ৩৫ ভাগ। নতুন সিদ্ধান্তে কি তাহলে মূল্যস্ফীতি কমবে?

অর্থনীতি বিশ্লেষক মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, পুঁজিবাজারকে এক ধরনের সহায়ক হতে হবে। এনবিআর অথবা সরকারকেও এক ধরনের সহায়ত হতে হবে। ফিসক্যাল মনিটিরিংয়ে সামজ্য রেখে এ কাজটা করতে হবে। অবশ্য ব্যবসায়ী ও ভোক্তার চাপ বাড়বে। টাকার সরবারহ কমিয়ে যদি মূদ্রার অবনমন কমানো যায়, সেজন্য করা হচ্ছে বলে আমি মনে করি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ডলারের দাম বেড়ে গেলো। এখন আমদানিসহ অন্যান্য জিনিসের খরচ বাড়বে। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়বে।

উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্বাভাস, আগামী বছরের জুনে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হবে ২০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply