৬৩ বছর বয়সেই জীবনের ইতি ঘটলো ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসির। হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ নিহত হয়েছেন ৯ জন। রইসি বিশ্ব রাজনীতিতে এক আলোচিত ব্যক্তি। ইসরায়েল-আমেরিকার শত্রুও। অন্যদিকে, ফিলিস্তিন ও মুসলিম বিশ্বে বেশ জনপ্রিয় শাসক তিনি।
রইসিকে নিয়ে এত আলোচনার পেছনে কী রয়েছে? কেনইবা আমেরিকা-ইসরায়েলের মাথা ব্যথার কারণ ছিলেন তিনি?
প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসি ছিলেন ইরানের রক্ষণশীল নেতা। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির একজন শিষ্য ছিলেন তিনি। খামেনির উত্তরসূরিদের অন্যতম হিসেবে ভাবা হতো রইসিকে। কট্টরপন্থীদের কাছে তার জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী।
১৯৬০ সালে উত্তর-পূর্ব ইরানের পবিত্র শহর মাশহাদে জন্ম নেয়া রইসি মাত্র ২০ বছর বয়সে তেহরানের পার্শ্ববর্তী শহর কারাজের প্রসিকিউটর জেনারেল নিযুক্ত হন। ১৯৮৯ থাকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তিনি তেহরানের প্রসিকিউটর জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সাল থেকে তিনি এক দশক জুডিশিয়াল অথরিটির উপপ্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৯ সালে তাকে বিচার বিভাগের প্রধান নিযুক্ত করেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।
ইব্রাহিম রইসি ২০২১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হন। রইসি এমন সময়ে প্রেসিডেন্ট হন যখন ইরান একটি সামাজিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল এবং পারমাণবিক কর্মসূচির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার চাপে দেশটির অর্থনীতি কঠিন সময় পার করছিল।
এর আগে, রইসি ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ছয়টি প্রধান শক্তির সঙ্গে আলোচনা স্থগিতে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন। প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার এবং ওয়াশিংটনের সুইং পলিসির কারণে ইরানের কট্টরপন্থীদের কাছ থেকে বরাবরই উৎসাহ পেয়ে আসছিলেন ইব্রাহিম রইসি।
২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ছয় বড় শক্তির সঙ্গে যে পারমাণবিক চুক্তিতে সম্মত হয়েছিলেন তা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয় ইরান। এরপর তেহরানের ওপর পুনরায় কঠোর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। জবাবে তেহরান ধীরে ধীরে পারমাণবিক চুক্তির বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করতে শুরু করে। এসব সিদ্ধান্তের পেছনে রইসির অবদান রয়েছে।
দেশীয় রাজনীতিতেও রইসির কট্টরপন্থী অবস্থান ছিল স্পষ্ট। তিনি নির্বাচিত হওয়ার এক বছর পর ইরানে হিজাব এবং সতীত্ব আইনের প্রয়োগকে কঠোর করা হয়। এর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সেই আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় মাহসা আমিনি নামে এক তরুণ কুর্দি ইরানি নারী। পরে পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় মারা যান ওই নারী। এর প্রতিবাদে দেশব্যাপী ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষও হয় নিরাপত্তাকর্মীদের। এতে প্রায় ৫০০ জন নিহতের ঘটনা ঘটে। আটক করা হয় কয়েক হাজার বিক্ষোভকারীকে।
তবে নিজের এ কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসেননি রইনি। তার এই কঠোর অবস্থানের কারণে সমালোচনা হলেও কট্টরপন্থীদের কাছে রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন রইসি।
এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরি সম্পর্ক চলে আসছে ইরানের। ইব্রাহিম রইসি ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলায় প্রতিবেশীদের পাশাপাশি চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে বিশেষভাবে মনোযোগ দিয়েছিলেন। পশ্চিমাদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই চীন-রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে ইরান। একের পর এক অত্যাধুনিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে তেহরান।
সবশেষ ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছে ইরান। দীর্ঘদিনের শত্রু রাষ্ট্র হলেও এবারের আগে কখনোই ইসরায়েলে হামলা চালায়নি তেহরান।
/এনকে
Leave a reply