এমপি আনার হত্যাকাণ্ড তদন্তে এবার নেপাল গেলো ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল। শনিবার (১ জুন) সকাল ১০টায় একটি ফ্লাইটে নেপালের উদ্দেশে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যান তারা।
ডিবি জানায়, এমপি আনার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আখতারুজ্জামান শাহীন নেপাল হয়ে আমেরিকায় পালিয়েছে এমন তথ্য পেয়েছেন তারা। এছাড়া সিয়াম নামে সন্দেহভাজন আরেক অভিযুক্ত এই মূহুর্তে নেপালে অবস্থান করছে বলেও তথ্য পেয়েছে ডিবি। এসব বিষয়ে খোঁজ নিতেই ডিএমপির ডিবি প্রধানের নেতৃত্বে নেপাল যাচ্ছে একটি দল।
এর আগে, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যান আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। পরে তার খোঁজ পাওয়া না গেলে ১৮ মে ভারতে একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন এমপি আনারের পরিচিত ও ভারতের বরানগরের বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাস। এরপর এমপি আনারের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে কলকাতা পুলিশ। কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে হত্যা করা হয়েছে বলে গত বুধবার (২২ মে) জানায় ভারতীয় পুলিশ। তারপর থেকে বেরিয়ে আসছে নানা তথ্য।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে গত বুধবার রাতে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। মামলার এজাহারে তার মেয়ে উল্লেখ করা হয়, ৯ মে রাত ৮টার দিকে আমার বাবা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর সংসদ সদস্য ভবনের বাসা থেকে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে যাওয়ার উদ্দেশে রওনা হন। ১১ মে ৪টা ৪৫ মিনিটে বাবার সঙ্গে মোবাইলে ভিডিও কলে কথা বললে বাবার কথাবার্তায় কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। এরপর বাবার মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলে বন্ধ পাই। ১৩ মে আমার বাবার ভারতীয় নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ আসে। মেসেজে লেখা ছিল, ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি আছে। আমি অমিত শাহের কাছে যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেয়ার দরকার নেই। পরে ফোন দেবো।
এই ঘটনায় ভারতে গ্রেফতার হওয়া জিহাদকে গত শুক্রবার (২৪ মে) উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাতের একটি আদালত ১২ দিনের জন্য সিআইডি হেফাজতে পাঠিয়েছে।
এমপি আনার খুনের ঘটনা তদন্তে বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় যায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার একটি প্রতিনিধি দল। গতকাল বৃহস্পতিবার তারা দেশে ফেরেন। দেশে ফিরে ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ জানান, এমপি আনারকে খুনের ঘটনায় কলকাতায় গিয়ে তাদের তদন্তকাজ সফল হয়েছে। এ ঘটনায় তারা যেসব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন, তা পেরেছেন।
হারুন অর রশীদ বলেছেন, আলামত উদ্ধার, পারিপার্শ্বিক ডিজিটাল তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করায় আনার হত্যার তদন্ত অনেকটাই এগিয়েছে। দুই দেশের গোয়েন্দাদের তথ্য সমন্বয় করে মামলার তদন্ত পরিচালনা করায় ফলপ্রসূ ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে।
এ খুনের ঘটনায় বাংলাদেশ ও ভারতে গ্রেফতার হওয়া আসামিদের বক্তব্য এবং পারিপার্শ্বিক অন্যান্য ঘটনা বিবেচনায় কলকাতায় সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার হওয়া মাংসের টুকরোগুলো এমপি আনারের বলে মনে করছেন হারুন অর রশীদ।
এ নিয়ে তিনি বলেন, আমরা কলকাতা পুলিশকে অনুরোধ করেছিলাম সুয়ারেজ লাইন ও সেপটিক ট্যাংক দেখার জন্য। সেখান থেকে কিন্তু ভিকটিমের মরদেহের খণ্ডাংশ উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা প্রাথমিকভাবে মনে করি, স্বাভাবিকভাবে ফ্লাশের মাধ্যমে মাংসগুলো সেখানে যায়নি। তাই আমরা মনে করছি, মরদেহের খণ্ডাংশগুলো এমপি আনারের। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।
মাংসের টুকরো উদ্ধারের ক্ষেত্রে ওয়াটার থিওরি ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেন হারুন অর রশীদ। এ বিষয়ে তিনি জানান, গ্রেফতারকৃত এক আসামি পানির শব্দ শুনতে পাওয়ার কথা বলেন। সে হিসেবে তাদের ধারণা হয়, মাংস লুকিয়ে ফেলতে ফ্লাশ করার বিষয়টি।
এ ঘটনায় কলকাতায় গ্রেফতার হওয়া আসামি জিহাদের দেয়া তথ্য যাচাইবাছাই করার কথাও জনান তিনি। বলেছেন, কলকাতার সিআইডিকে সঙ্গে নিয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং আসামিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করেছি।
/এমএইচ
Leave a reply