নাজমুল হোসেন শান্তর অধীনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে গেছে বাংলাদেশ। তরুণ এই টপঅর্ডার ব্যাটার ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক থাকাকালীন ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ। কিউইদের মাঠে জিতেছে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। প্রথমবার নিউজিল্যান্ডের মাঠে তাদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ ড্র করে বাংলাদেশ।
ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়ে আগামনী বার্তা দিয়েই যেন রেখেছিলেন শান্ত। অধিনায়কত্বে ছিল পরিপক্কতা। মাঠের পারফরম্যান্সও ছিল বলার মতোই। এরপর লঙ্কান সিরিজের আগে তিন ফরম্যাটেই অধিনায়কের ভার ওঠে শান্তর কাঁধে। শুরু হয় ভারমুক্ত শান্ত অধ্যায়ের।
তবে অধিনায়কত্ব পাওয়ার পরই যেন, নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন নাজমুল শান্ত। বিশেষ করে ২০ ওভারের ম্যাচে যেন শান্তর ব্যাট মরিচা ধরা হাতিয়ার। কিছুতেই কিছু করতে পারছে না তার ব্যাট। কোনো ম্যাচে দল সাফল্য পেলেও শান্তর ব্যাটিং ব্যর্থতা প্রতিনিয়তই ভাবাচ্ছে বাংলাদেশকে। একে তো বড় ইনিংস খেলতে পারছেন না, তার ওপর স্ট্রাইক রেটও খুবই নিম্ন।
পরিপূর্ণ ক্যাপ্টেন্সি পাওয়ার পর শান্ত এ পর্যন্ত লাল-সবুজরে জার্সিতে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন ১২টি (ভারতের বিপক্ষের প্রস্তুতি ম্যাচসহ)। এর মধ্যে ১১ ইনিংসে ব্যাট করা শান্ত রান করেছেন মোটে ১৯৪। বিপরীতে রানের চেয়ে একটি বল বেশি খেলেছেন। অর্থাৎ আধুনিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার এই ১১ ইনিংসের স্ট্রাইক রেট ১০০-এর নিচে। আর এই সময়ে টি-টোয়েন্টিতে অর্ধশতকের দেখা পেয়েছেন মাত্র একবার।
শান্তর অধীনে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। ওই সিরিজের তিন ম্যাচে শান্তর ব্যাট থেকে এসেছিল ৭৪ রান। বল খেলেছিলেন ৬৬টি। প্রথম ম্যাচে ২০৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমেও খেলেছিলেন ২২ বলে মাত্র ২০ রানের ইনিংস। দ্বিতীয় ম্যাচে অধিনায়কের ব্যাটে জয় পায় বাংলাদেশ। শান্ত খেলেছিলেন ৩৮ বলে অপরাজিত ৫৩ রানের ইনিংস। শেষ ম্যাচে ব্যর্থ শান্ত করেছিলেন ৬ বলে মাত্র একরান।
এরপর টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসে জিম্বাবুয়ে। ৫ ম্যাচের ওই সিরিজে অধিনায়ক শান্তর ব্যাট থেকে আসে ৮১ রান। বিপরীতে বল খেলেন ৭৮টি। অর্থাৎ কোনোমতে ১০০-এর ওপরে স্ট্রাইক রেটে এই রান তোলেন তিনি। দল ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতলেও শেষ ম্যাচ হারা নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কা বলা যায় যুক্তরাষ্ট্র সিরিজ। প্রথমবার তাদের সাথে খেলতে গিয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ খোয়ায় শান্ত বাহিনী। এই সিরিজেও ব্যাটিংয়ে পুরোপুরি ব্যর্থ ছিলেন। দুই ম্যাচে ব্যাট করা শান্ত ৪৫ বল মোকাবিলায় তুলেছিলেন মাত্র ৩৯ রান। এর মধ্যে প্রথম ম্যাচে ১১ বলে করেন তিনরান আর দ্বিতীয় ম্যাচে করেছিলেন ৩৪ বলে ৩৬ রান। দুইটি ম্যাচই হেরেছিল বাংলাদেশ।
আর সবশেষ শনিবার বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ৬ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি শান্ত। শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক। বাংলাদেশ ম্যাচটি হেরেছে ৬০ রানে।
ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক থাকাকালীন শান্ত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের দুই ইনিংসে ব্যাট করেছিলেন। ওই সিরিজে ২৯ বলে করেছিলেন ৩৬ রান।
অধিনায়ক শান্ত দলে ওপরের দিকে ব্যাটিংয়ে নামেন। বাংলাদেশের টপঅর্ডাররা প্রায় সব ম্যাচেই ধুঁকছে। ওপেনাররাও প্রায় প্রতি ম্যাচেই ব্যর্থ হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে দলের হাল ধরার দায়িত্ব থাকলেও ব্যাটিংয়ে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরছেন অধিনায়ক নিজেও। এতে চাপ বাড়ছে দলের ওপর। অল্প রানেই থামছে বাংলাদেশের ইনিংস। শান্তর এমন হতশ্রী পারফরম্যান্স হতাশ করছে টিম ম্যানেজমেন্ট, দল ও সমর্থকদের। শান্ত দলের বোঝা নয়, বিশ্বকাপে দলের পথপ্রদর্শক হবেন এটিই প্রত্যাশা।
/এনকে
Leave a reply