বাজেট ২০২৪-২৫: অভ্যন্তরীণ আয় বাড়াতে বিস্তৃত হচ্ছে করজাল

|

রিমন রহমান:

মো. বেলাল, রাজধানীর ডাব বিক্রেতা। প্রতিদিন ডাব বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়েই টেনেটুনে চলে তার সংসার। বোঝেন না বাজেটের জটিল সমীকরণ। ব্যবসা পরিচালনা ও পারিবারিক যোগাযোগ রক্ষায় মুঠোফোনে দিনে তাকে কথা বলতে হয় অন্তত ১০ থেকে ১৫ মিনিট। বাজেটে এই কথা বলার ওপর বাড়তি শুল্ক বসাতে চায় সরকার। শুধু কথা বলাতেই নয়, বাজেটে রাজস্ব আয়ের যে পরিকল্পনা তাতে চাপে পড়বে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিপুল সংখ্যক মানুষ।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হচ্ছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৬ জুন)। আর্থিক টানাপোড়েন কমাতে অভ্যন্তরীণ আয় বাড়ানোই বাজেটের অন্যতম লক্ষ্য। তাই করজাল ছড়িয়ে দিতে ব্যস্ত অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

শূন্যশুল্ক থাকা প্রায় সাড়ে ৩শ’ পণ্যে বসছে ১ শতাংশ শুল্ক। এই তালিকায় আছে খাদ্যপণ্য, সার, ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল, কৃষি উপকরণ। অর্থাৎ দাম বাড়তে পারে গম, ভুট্টা, সরিষা বীজ, তুলা ও শাকসবজির বীজ, কয়লা, পেনিসিলিন, ইনস্যুলিন, পেপার বোর্ড ইত্যাদি। প্রায় ৩শ’ মূলধনী যন্ত্রাংশ আমদানিতে বাড়তে পারে শুল্ক। এক্ষেত্রে এয়ারকুলার, ফ্রিজ, লিফট, সিসিটিভি, ওয়াটার পিউরিফায়ারসহ একাধিক পণ্যের দাম বাড়তে পারে।

বিনা প্রশ্নে দেয়া হতে পারে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ। করমুক্ত আয়সীমা না বাড়লেও পুঁজিবাজারে বসতে পারে ‘ক্যাপিটাল গেইন’ ট্যাক্স। মূলত, আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ নেয়ার শর্ত পরিপালনে কর ব্যবস্থায় আনা হচ্ছে ব্যাপক পরিবর্তন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ঢালাও করহার না বাড়িয়ে ফাঁকি বন্ধ করতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমাদের মূল সমস্যা কিন্তু রেইড দেয়ায় না, সমস্যা হচ্ছে করপ্রশাসন ও প্রয়োগে। এটা জোরদার করলে অনেক টাকা আসবে। এখন এটা করা যায় না, মন্ত্রী-এমপিরা ব্যবসা করে, তাদেরকে ধরা যাবে না। এখানে কাউকে ছাড় দেয়া যাবে না।

এলইডি বাল্ব, টিউব লাইট, এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনে ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে হচ্ছে ১০ শতাংশ ভ্যাট। নিরাপত্তা সেবাতেও বাড়তি ভ্যাট পরিশোধ করতে হতে পারে গ্রাহককে। বাড়তি ভ্যাটের আওতায় আসতে পারে মোবাইল ফোনের সিম ও ইন্টারনেট সেবা। থিম পার্কে প্রবেশ ও রাইডে চড়তে বাড়তি ভ্যাট গুনতে হবে।

ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যবসায়ীদের উৎপাদন খরচ যদি অনেক বেড়ে যায়, তাহলে এটাও সমস্যা। এটি কিন্তু দেখতে হবে। আবার রাজস্বও দরকার। তাই সমন্বয় দরকার।

কোমলপানীয়, কার্বোসেটেড বেভারেজ, এনার্জি ড্রিংস ও সিগারেট কিনতে গুণতে হতে পারে বাড়তি অর্থ। অর্থনৈতিক অঞ্চলে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার হচ্ছে। বাতিল হবে হাইটেক পার্কে শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির সুযোগ। কয়েকটি খাতকে হারাতে হবে কর অব্যাহতি এবং শুল্ক ছাড়ের সুবিধা। প্রশ্ন হচ্ছে বিশাল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য কীভাবে পূরণ করবে সরকার?

অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশা খান বলেন, যতটা কর আদায় হয়, এর প্রায় সমপরিমাণ কিন্তু ছাড় আছে। সবরকম ছাড় যদি দিতে থাকি তাহলে কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানো কঠিন হয়ে পড়বে।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply