নিয়মিত ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় পান কি ক্ষতিকর?

|

শরিফুল ইসলাম নাফি

দেশের বাজারে কয়েক বছরের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে ইলেক্ট্রোলাইট পানীয়। গ্রাম-গঞ্জ, শহর ছাপিয়ে সুপারশপগুলোতেও এই পানীয় বিক্রি হচ্ছে। বাচ্চা থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষকে সচারচার এটি পান করতে দেখা যায়। কেউ শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের ঘাটতি মেটাতে আবার অনেকে প্রয়োজন ছাড়া এই পানীয় পান করেন।

তবে অনুমোদন ছাড়া বাজারে ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় বিক্রির অভিযোগে সম্প্রতি পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা শুরু হয় ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় নিয়ে। প্রশ্ন হচ্ছে নিয়মিত বা অতিরিক্ত ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় পান মানুষের জন্য কি ক্ষতিকর?

ইলেক্ট্রোলাইট পানীয়তে কী উপাদান থাকে?

সাধারণত ইলেক্ট্রোলাইটের মধ্যে রয়েছে পটাসিয়াম, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্লোরাইড ও ফসফরাস। সতেজ ও সুস্থ রাখতে এগুলো শরীরে কোষ ও শারীরিক কার্যকলাপকে সহায়তা করে। এগুলো সাধারণত দৈনন্দিন খাবারে পাওয়া যায়। কিন্তু মাঝে মাঝে এরচেয়ে আরও বেশি প্রয়োজন হয়। বাজারে যেসব ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় দেখা যায়, সেগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ইলেক্ট্রোলাইটের উপস্থিতি থাকে। সুগার, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম ও ক্লোরাইডের মতো পুষ্টি উপাদান ইলেক্ট্রোলাইট পানীয়তে থাকে।

ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় কখন দরকার হয়?

বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতি ছাড়া শারীরিক কার্যকালাপের জন্য সবার ইলেক্ট্রোলাইট পানীয়ের প্রয়োজন হয় না। আমাশয় কিংবা ডায়রিয়া হলেও শরীর থেকে ইলেক্ট্রোলাইট বের হয়ে যেতে পারে। গরম বা আর্দ্র অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ কঠোর ব্যায়াম করলে এ পানীয় ঘামের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া তরল ও প্রয়োজনীয় খনিজ প্রতিস্থাপন করতে সহায়তা করতে পারে। এছাড়া যারা দৈনন্দিন জীবনে সাধারণ কর্মকাণ্ড ও সহনীয় ব্যায়াম বা পরিশ্রম করেন, তাদের পানি খেয়ে হাইড্রেটেড থাকা যথেষ্ট।

ফ্লোরিডার মার্সি হাসপাতালের নেফ্রোলজিস্ট ডা. অস্কার গালভেজ বলেছেন, আমরা প্রতিদিন যে খাবারটি খাই, সেগুলোতে প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রোলাইটগুলো পেয়ে যাই। ফল, শাকসবজি, বীজ, বাদাম ও পনির সবই অপরিহার্য ইলেক্ট্রোলাইট ধারণ করে।

নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় পান করা সহায়ক। দীর্ঘ সহনশীল ব্যায়াম যেমন ম্যারাথন দৌড়ের পরে অতিরিক্ত ঘামের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া ইলেক্ট্রোলাইটগুলোকে ফিরিয়ে আনতে পারে এ পানীয়। বমি বা ডায়রিয়ার পরে ইলেক্ট্রোলাইট গ্রহণ শক্তি বৃদ্ধি করে।

ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় আসলেই কি গুরুত্বপূর্ণ?

মার্কিন চিকিৎসক ইন্টিগ্রেটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডানা কোহেন তার ওয়েবসাইটে একটি নিবন্ধে লিখেছেন, গরমে শরীর সুস্থ রাখতে দৌড়ালে বা জিমে গেলে শরীর থেকে ঘাম ঝরবে বেশি। যা ডিহাইড্রেট করতে পারে। এর মানে শরীর ইলেক্ট্রোলাইট হারাচ্ছে, যা সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। সেরা ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় শরীরকে দ্রুত ও কার্যকরীভাবে রি-হাইড্রেট করতে পারে।

বিষয়টি আরেকটু স্পষ্ট করে এই চিকিৎসক বলেন, মানবদেহ প্রায় ৬০ শতাংশ পানি দিয়ে গঠিত, আর সমস্ত কোষই ইলেক্ট্রোলাইট দিয়ে তৈরি। কিন্তু ঘাম, প্রস্রাব ইত্যাদির সময় ইলেক্ট্রোলাইট হারায়, তাই যে যেটা খাবেন বা পান করবেন তা দিয়ে পুনরুদ্ধার করা গুরুত্বপূর্ণ।

নিয়মিত ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় পান করলে কি ক্ষতি হয়?

নিয়মিত ইলেকট্রোলাইট পানীয় পান করলে অধিকাংশ মানুষের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তবে কারও কারও এড়িয়ে চলা উচিত।

এ বিষয়ে ডা. অস্কার গালভেজ বলেন, যদি কারও কিডনি ভালো থাকে এবং অতিরিক্ত ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় পান করলে তার কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিডনি দ্বারা অতিরিক্ত ইলেক্ট্রোলাইটগুলো নির্মূল হয়। যেভাবে কিডনি ইলেক্ট্রোলাইট সংরক্ষণ করতে পারে, তেমনি কিডনি ইলেক্ট্রোলাইটকে নির্মূল করতে পারে। কারও কিডনি, উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা থাকলে ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় পান বিপজ্জনক হতে পারে।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply