বিপৎসীমার ওপরে তিস্তার পানি, নিমজ্জিত চরাঞ্চল-নিম্নাঞ্চল

|

সিনিয়র করেসপনডেন্ট, রংপুর:

বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রংপুরে তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপরে উঠে গেছে। লালমনিরহাটের ডালিয়া পয়েন্টেও বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। পানি বেড়ে তা ঢুকে পড়েছে ভাটিতে অববাহিকার দুই পাড়ের চরাঞ্চল-নিম্নাঞ্চলে। ফলে এসব এলাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত দশ হাজার মানুষ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ব্যারেজ পয়েন্টে সবকটি জলকপাট খুলে দিয়েছে।

উত্তরাঞ্চল পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, বুধবার (১৯ জুন) সকাল ছয়টায় রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ২৮ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। সকাল ৯টায় আরও ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পায়। এখন এই পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তার পানি।  এর আগে, গত ১৪ জুন ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এই পয়েন্টে প্রবাহিত হচ্ছিল তিস্তার পানি। 

অন্যদিকে, লালমনিরহাটের ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে সকাল ৬টায় তিস্তার পানি রেকর্ড হয়েছে ৫১ দশমিক ৯৫ সেন্টিমিটার, এবং সকাল ৯টায় ৫১ দশমিক ৯২ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার যথাক্রমে ২০ এবং ২২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। 

তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব আরও জানান, উজানের ঢল আর গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতের কারণে বুধবার ভোর থেকে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের ৪৪টি গেটই খুলে রাখা হয়েছে। এছাড়াও সকাল ৯টায় রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

অবশিষ্ট এলাকাগুলো থেকে পাওয়া তথ্যমতে, তিস্তায় পানি বৃদ্ধির কারণে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালিগঞ্জ, আদিতমারী, সদর, নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে বাদাম, শাক-সবজিসহ উঠতি বিভিন্ন ফসলের জমি। এতে বিপাকে পড়েছেন তিস্তা অববাহিকার মানুষ। বাড়িতে ছেড়ে উঁচু স্থান এবং কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। 

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ তামান্না জানান, তিস্তায় পানি বাড়ার কারণে নদীর কিনারের চরাঞ্চলে বসবাসকারি জনগণকে গবাদি পশু ও অন্যান্য সামগ্রী উচু জায়গায় সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। বন্যা হলে রেসকিউ করার জন্য নৌযান প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

রংপুরের ডিসি মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, বন্যা মোকাবেলা করতে মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সম্ভাব্য সব ধরণের প্রস্তুতি আছে আমাদের। তবে বন্যায় যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে সরকারিভাবে সব ধরনের আগাম প্রস্তুতি নেয়া আছে। প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজ-খবর রাখছেন। যেহেতু তিস্তায় ফ্লাশ ফ্লাড হয়, সে কারণে পানি উঠলেও দ্রুত নেমে যায় বলেও জানান তিনি।

/এমএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply