রাসেল আহমেদ:
২০১৭ সালে সুনামগঞ্জে বন্যার পানিতে ভেসে যায় কয়েক হাজার ঘরবাড়ি, পুকুর জলাশয়ের মাছ। ২০১৯ সালের জুনে ঘরের মধ্যে পানি ওঠে সুনামগঞ্জে। বাসিন্দারা টিনের চালে ঠাঁই নিতে পারলেও গবাদিপশু রক্ষা করতে পারেনি অনেকে।
২০২২ কিংবা ২০২৩, প্রতিবছরই বন্যার পানির সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দুর্ভোগ-দুর্দশা। এ বছরও বিপৎসীমার ৩৭ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার বেশি পানির ঢল নেমেছে সুরমা নদীতে।
বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পানি বণ্টনের অসমতা ও অপরিকল্পিত উন্নয়নকে বন্যার কারণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। যার প্রভাবে প্রতি বছর সুনামগঞ্জ-সিলেট এলাকায় পানিতে ডুবছে গ্রামের পর গ্রাম। এজন্য কার্যকরী ড্রেজিং ব্যবস্থা ও পানি ব্যবহারের মহাপরিকল্পনা করা জরুরি বলছেন তারা। তাগিদ দেন, হাওর বা নদীকেন্দ্রিক উন্নয়নে অন্তত ৩০ বছরের আবহাওয়া পর্যালোচনার।
আবহাওয়াবিদ মো. শাহিনুল ইসলাম বলেন, মেঘালয়, আসাম ও ত্রিপুরার বৃষ্টির পানি বের হওয়ার রাস্তা আমাদের বাংলাদেশ। এজন্য বাংলাদেশে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়। অনেক সময় নিয়ে পানিটা থাকে। আমাদের দেশে যে বৃষ্টি হয়, তা যতটুকু না বন্যার জন্য দায়ী, এরচেয়ে বেশি দায়ী ভারতের অঙ্গরাজ্যের পানি।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে। প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। যার পানি মূলত ভাটিতে আমাদের দেশে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নেমে আসে। আর হাওরগুলো পরিপূর্ণ হয়ে উঠে।
অভিজ্ঞ এই দুই কর্মকর্তা বলেন, পাহাড় বেষ্টিত বলে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে। এছাড়া আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়ের অতিরিক্ত বৃষ্টির জল পুরোটাই গড়ায় বাংলাদেশের ওপর দিয়ে।
মো. শাহিনুল ইসলাম আরও বলেন, তাদের ওখানে ড্যাম আছে, বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। সময় পানিটা ছাড়বে, অসময়ে ছাড়ে না। ফোঁটা দিয়ে নিয়মিত পানি এলে এত পলি জমতো না। গড়িয়ে গড়িয়ে সাগরের দিকে চলে যেত।
তাদের মতে, উজান থেকে আসা পলি জমে নদীতে চর পড়েছে বেশিরভাগ এলাকায়। ফলে প্রায় সব নদী পানির ধারণক্ষমতা হারিয়েছে। যা দুই কুল ছাপিয়ে ভেসে যায় ঘরবাড়ি।
সরদার উদয় রায়হান বলেন, বিপুল পরিমাণ পলি যেহেতু প্রতি বছর নদীগুলো বহন করে নিয়ে আসছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ড্রেজিং করার পরও পরবর্তী বছর আবারও ভরে যাচ্ছে। নিয়মিত ড্রেজিং করার ভিত্তিতে এ সমস্যা অনেকটা দূর করা যায়।
দুই বিশ্লেষকের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টির পরিমাণ বেড়েছে। তাই নিয়মিত বন্যা ঠেকাতে আন্তর্জাতিক চুক্তি ও নদী বা হাওরকেন্দ্রিক উন্নয়নে অঞ্চলভিত্তিক আবহাওয়ার গবেষণা প্রয়োজন।
মো. শাহিনুল ইসলাম বলেন, হাওর অঞ্চলে আমরা দেখছি, রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। কিশোরগঞ্জের কথাই ধরা যাক, সাধরণ ফোঁটাকে একটা নির্দিষ্ট অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছে। এতবড় নদীর পানি পাইপের মধ্যে ছাড়লে তো হবে না। পুরো প্রবাহটাকে বন্ধ করে দেয়া হলো। হাওর অঞ্চলে এসব কাজ করতে হলে অনন্ত ৩০ বছরের আবহাওয়া বিশ্লেষণ করতে হবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ভূখন্ড সমতল। তাই উত্তরে পানি বাড়লে তা সমুদ্র পর্যন্ত পৌঁছাতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। এ কারণে পানি প্রবাহের পথ সচল রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার তাগিদ দেন তারা।
/এমএন
Leave a reply