চট্টগ্রামে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ পাহাড়ে ৮ শতাধিক পরিবারের বসবাস

|

ফাইল ছবি

শহিদুল সুমন, চট্টগ্রাম

বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসে প্রাণহানি, চট্টগ্রামে প্রতি বছরের নিয়মিত চিত্র। টানা বৃষ্টি শুরু হলেই ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদে তোড়জোড় শুরু করে প্রশাসন। তবে বছরের বাকি সময় নীরব থাকে সব সংস্থাই। পাহাড়ে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের জন্য রয়েছে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগও। এতে প্রতিবছর অসংখ্য প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও পাহাড় থেকে সরানো যায় না অবৈধ বাসিন্দাদের।

গত দেড় দশকে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসের ঘটনায় প্রাণ গেছে অন্তত তিনশ জনের। বন্দরনগরীর ২৬টি পাহাড়ের মধ্যে ১৭টিই অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত। যেখানে বসবাসকারী বাসিন্দাদের প্রতি মুহূর্তেই রয়েছে মৃত্যুঝুঁকি। এরপরও ঝুঁকি নিয়ে এসব পাহাড়ে অন্তত ৮ শতাধিক পরিবার বসবাস করছে। আর এসব বাসিন্দাদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করে পাহাড় দখলকারিরা। তালিকা তৈরির পরও ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে দলখদাররা।

সচেতন নাগরিকরা বলছেন, রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর নজরদারি না থাকার কারণেই পাহাড় ধসের ঘটনায় প্রাণহানি ঘটছে। এছাড়া, পাহাড় দখলদারির সাথে দায়িত্বশীল কিছু অসাধু ব্যক্তি জড়িত বলেও জানিয়েছেন তারা।

চট্টগ্রাম পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন মোহাম্মদ রেজা বলেছেন, পরিবেশ অধিদফতর, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি এ সংক্রান্ত সরকারের চারটি সংস্থা কঠোর হলেই অবৈধ দখলদারি বন্ধ হবে। এটি বন্ধ হলে ভূমিধসে ক্ষতি কমবে। পাহাড় ধসে প্রাণহানিও বন্ধ হবে।

কমিটির আরেক সদস্য চৌধুরী ফরিদ বলেন, পরিবেশ অধিদফতর আছে, তারপরও যেন দেখার কেউ নেই। পাহাড় দখল করে অবৈধ বসতি নির্মাণ কিংবা পাহাড় কাটার দায়ে চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত কতজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে কিংবা গ্রেফতার হয়েছেন, কতজনের শাস্তি হয়েছে এই তথ্য অধিদফতর দিতে পারবে না। কারণ, তারা কার্যকর তেমন কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। এজন্যই দেদারসে পাহাড় কেটে দখল করা চলছে।

জানা গেছে, পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি ৩৬ দফা সুপারিশ করেছিল প্রশাসনকে। যার একটিও বাস্তবায়িত হয়নি। প্রতিবারের মতো এবারও বর্ষার শুরুতে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়। সেখানে নানা সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল আহমেদ বলেন, যারা পাহাড়ে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে তাদেরকে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন, এসিল্যান্ড বা পুলিশ দিয়ে তাদেরকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এটি একটি চলমান কার্যক্রম। এক-দুইদিনের কার্যক্রম নয় এটি। আবার যখন এমনটি (অবৈধবসতি) হবে, আবার উচ্ছেদ চলবে। আবার দখল হবে, আবার অভিযান চলবে। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে।

পাহাড় দখলকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, এখানে অনেকেই সম্পৃক্ত রয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের মামলায় দুই-একজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এর বাইরে দুই-একজন কাউন্সিলের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাদেরকে শোকজ করা হয়েছে। এছাড়া এসব কাউন্সিলরকে বরখাস্ত করতে স্থানীয় সরকার বিভাগে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

/এনকে/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply