পরপর তিনবার আফগানিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ স্থগিত করেছে অস্ট্রেলিয়া। সামনের আগস্টে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার কথা ছিল এ দুই দলের। কিন্তু আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের ওপর নারীদের মানবাধিকার ক্ষুণ্নের অভিযোগ এনে গত মার্চে সেই সিরিজ স্থগিত করে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়াকে ২১ রানে হারিয়ে ইতিহাস রচনা করে আফগানিস্তান। বিশ্ব মঞ্চে সাবেক চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে সেসব নিয়ে কথা বললেন আফগান অধিনায়ক রাশিদ খান। অতীতে অস্ট্রেলিয়ার সিরিজ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি, তাদের বিপক্ষে খেলতে না পারার আক্ষেপও ঝরল আফগান অধিনায়কের কণ্ঠে।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ের আনন্দটা কি অন্যান্য ম্যাচজয়ের তুলনায় বেশি? সংবাদ সম্মেলনে এমনই প্রশ্ন করা হয়েছিল রশিদ খানকে।আফগান অধিনায়ক অবশ্য হ্যাঁ বা না কিছুই বলেননি। তবে দিলেন বিশাল এক উত্তর। যেখানে তিনি নিজেও রেখেছেন এক প্রশ্ন। বিশ্বকাপে যদি খেলা যায় তাহলে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে কেন নয়।
রশিদ বলেন, আমরা খেলোয়াড় এবং খেলাধুলাকে ভালোবাসি। দেশের মানুষ খেলাকে ভালোবাসে এবং আমি আগেও বলেছি, সেখানে ক্রিকেটই একমাত্র খুশির উপলক্ষ। আফগানিস্তানে এটাই একমাত্র উৎস যেখানে মানুষ উদযাপন করতে পারে। আর সেই উৎসকে যদি আমরা নিজেদের থেকে দূরে রাখি, তাহলে আমি জানি না আফগানিস্তানের অস্তিত্ব কোথায় থাকবে।
রশিদ আরও যোগ করেন, এখন আপনি পুরো বিশ্বের যেখানেই নিজেকে আফগানিস্তান হিসেবে পরিচয় দেবেন, পরবর্তীতে সেই লোক যেকোনো ক্রিকেটারের নাম নিয়ে বলবে, সে এখানে খেলছে, সে ওখানে খেলছে। কিন্তু সেই উৎসটা যদি কেড়ে নেয়া হয়, তাহলে আমাদের খুশিটাও কেড়ে নেয়া হবে। আমার মনে হয়, এটা আমাদের জন্য কঠিন হবে।
অস্ট্রেলিয়া-আফগানিস্তান সিরিজ কেন হয় না, এর উত্তর নেই রশিদের কাছে। তিনি বলেন, আমরা খেলোয়াড়, আমরা কেবল ক্রিকেট নিয়েই ভাবি। সবাই যেমন বলে, খেলাধুলা একটি জাতিকে একত্রিত করে এবং সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে। তাই আমরা সবসময়ই যেকোনো দলের বিপক্ষে খেলে খুশি থাকি এবং কেবল এভাবে আমাদের ক্রিকেটের দিনকে দিন উন্নতি হচ্ছে।
রশিদ বলেন, ক্রিকেটে কিছু জিনিস কারও নিয়ন্ত্রণে নেই এবং এ ব্যাপারে আমরা কিছুই করতে পারব না। যদি কিছু করতে পারতাম এবং সমাধান খুঁজে পেতাম এর জন্য তাহলে আমরা খুশিই হতাম। কিন্তু আমি জানি না এই সমস্যার সমাধান কী। তবে জাতি হিসেবে এটাই আমাদের একমাত্র উৎস, যেখানে আমরা খেলতে পারি, উপভোগ করতে পারি দেশে খুশি এনে দিতে পারি এবং দিনকে দিন আরও ভালো হতে পারি।
তিনি আরও যোগ করে বলেন, তাই আমরা যেকোনো দলের সঙ্গে খেলে খুশি, কিন্তু আগেও বলেছি রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক ব্যাপারগুলো আমার খুব একটা জানা নেই এবং আমি সেটা পছন্দও করি। তাই এর জন্য আমার কোনো উত্তর নেই। তবে একটা বিষয় সবসময় মাথায় থাকে আমি বড় দলের বিপক্ষে খেলতে ভালোবাসি। খেলার জন্য বিশ্বের সব জায়গায় যেতে ভালোবাসি এবং সবার কাছ থেকে অনেক ভালোবাসা পেয়েছি।
অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া টুর্নামেন্ট বিগ ব্যাশে পরিচিত মুখ রশিদ। সেখানে তার ভক্তের অভাব নেই। কিন্তু এমন একটি জায়গায় নিজের দেশকে আলাদাভাবে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাচ্ছেন না বলে আক্ষেপ আছে তার।
তিনি বলেন, যখন বিগ ব্যাশ খেলতে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছি, আমার মনে হয় সেখানে ভক্তদের কাছ থেকে অনেক ভালোবাসা ও সমর্থন পেয়েছি। তারা আমাকে অনেক ভালোবাসা দিয়েছে। এমনকি ২০২২ বিশ্বকাপেও যখন আমরা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অ্যাডিলেইডে খেলছিলাম, তখন তাদের চেয়েও বেশি সমর্থন পেয়েছি আমি। এবং সেটা খুব আনন্দদায়ক ছিল। আফগানিস্তানি হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে এসে অনেক সমর্থন পাচ্ছি আমি। ২০১৯ সালে যখন আমি অস্ট্রেলিয়ায় ছিলাম, আমার বাবা মারা যায়, সেই সময়টা সবচেয়ে কঠিন ছিল আমার জন্য। এবং দলের সবার ও ভক্তদের কাছ থেকে যে ভালোবাসা সমর্থন পেয়েছি, তাতে আমার মনে হয় তারা আমার পরিবার।
তিনি যোগ করেন, আমার অনেক ভক্ত আছে সেখানে। তবে যেমনটা আমি বলেছি বিশ্বের সব জায়গায় খেলতে ভালোবাসি আমি এবং এসব বিষয় যা নিয়ন্ত্রণে নেই তাতে ক্রিকেট কোনো সমাধান নয়। আমার মনে হয় না, সেখানে খেলাধুলাকে টেনে আনতে পারি আমরা। যদি অন্য কোনো সমাধান থাকে তাহলে সেটা করতে পারেন। তবে ক্রিকেট যে রাজনীতি ও এমন ধরনের সমস্যার সমাধান হতে পারে, তা ভাবতে যাবেন না।
শেষ বেলায় এসে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার জন্য প্রশ্নটা রেখে যান রশিদ। তিনি বলেন, তাই আমরা যদি বিশ্বকাপে খেলি, তাহলে কেন দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে পারব না। সেরা দলের বিপক্ষে খেলতে পেরে আমরা খুশি। তাদের কাছ থেকে শিখি আমরা। দিনকে দিন আরও ভালো হচ্ছি। কেবল এটুকুই আমি বলতে পারি।
/আরআইএম
Leave a reply