আলমগীর হোসেন:
বেসরকারি বিনিয়োগে অনেকটা স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। তৈরি হচ্ছে না নতুন কর্মসংস্থানও। এর মধ্যেই জানা গেলো, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে। বছরের ব্যবধানে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১৪ শতাংশ। ৩৪৮ কোটি ডলার থেকে নেমে এসেছে ৩০০ কোটি ডলারে। কমেছে মোট বিনিয়োগের স্থিতিও। টানা কয়েক বছর বৃদ্ধির পর বিনিয়োগ কমে যাওয়ার এ তথ্য ওঠে এসেছে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিনিয়োগ পরিবেশের কিছুটা উন্নতি হলেও তা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে যায়নি। নেই নীতির ধারাবাহিকতা। যে কারণে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বিদেশি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান। রিজার্ভের পরিমাণ কমে যাওয়া এবং মুদ্রা বিনিময়ে স্থিতিশীলতা না থাকাও বিনিয়োগ কমার কারণ বলে মনে করেছেন তারা।
পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, এই বছর উদ্বেগের বিষয়ে হলো নতুন বিনিয়োগ। যেটাকে ফ্লো বলি… আর যেটা স্থিতি মানে যারা বাংলাদেশে আছে— দুইটিই কমে গেছে। সার্বিকভাবে এখানে বিনিয়োগের পরিবেশ দুর্বল। এখানকার আইনকানুন আধুনিক ব্যবসার যে প্রয়োজন এর জন্য প্রযোজ্য না।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ দেশে আসতে চাইলে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ দেশে রাখতে হবে। আমাদের দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নাই। আমরা আশা করেছিলাম যে, স্পেশাল ইকোনমিক জোনগুলো করে সেখানে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ করা যাবে। কিন্তু সেগুলোর কোনোটাই বিনিয়োগ করার পর্যায়ে যায়নি।
এদিকে, রিজার্ভের পরিমাণ কমে যাওয়ায় সময় মতো মুনাফা ফেরত নিতে পারবে কি না? তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। যা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বিদেশি বিনিয়োগের ওপর। নীতির ধারাবাহিকতা না থাকাও বড় কারণ বলেও মন্তব্য করেন বিশ্লেষকরা।
মাসরুর রিয়াজ বলেন, হুট করে ট্যাক্সের পলিসি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করে আমদানির ক্যাটাগরির কোড পরিবর্তন হচ্ছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, পুরো প্রকল্পটা অলাভজনক হয়ে যাচ্ছে। যেই তথ্যের ভিত্তিতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, সেটা উলটপালট হয়ে যাচ্ছে। তাই নিয়মিত নীতির ধারবাহিকতাটাও গুরুত্বপূর্ণ।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের ডলারের এক্সচেঞ্জ রেট এতদিন স্থিতিশীল ছিল না। এখন এসেছে। রিজার্ভ অর্ধেকেরও নিচে নেমে গেছে এবং এখনও নিম্নমুখী আছে বলা যায়, ১৮ বিলিয়নে থেমে আছে। ঊর্ধ্বমূখী হচ্ছে না এখনও। দেখার অপেক্ষায় আছি, কবে ঊর্ধ্বমূখী হয় এটা। এই জায়গাটা থেকে যখন বেরিয়ে আসবো, তখন আত্মবিশ্বাস আসবে।
বিদেশি বিনিয়োগের জন্য পরিবেশের উন্নতির পাশাপাশি সবক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করার তাগিদ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা।
/এমএন
Leave a reply