আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, গণআন্দোলনসহ মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন তরিকুল ইসলাম। বেশ কয়েকবার কারভোগও করতে হয় তাকে। তথ্যমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সবশেষ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন তরিকুল ইসলাম।
জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৬ নভেম্বর যশোরে। স্কুল জীবন থেকেই তুখোড় ছাত্র হিসেবে পরিচিতি তরিকুল ইসলামের। রাজনীতিতে হাতেখড়ি ছাত্রজীবনেই। যশোর এমএম কলেজের শিক্ষার্থীকালে কলেজের শহীদ মিনার সংস্কার করে পাকিস্তান জান্তা সরকারের রোষানলে পড়েন। সেই প্রথম কারাগারে যাওয়া।
কারাগারে কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সাথে পরিচয়। সেই সূত্রে দীক্ষা নেন বাম রাজনীতির। ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থী হিসেবে যশোর এমএম কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বৃহত্তর যশোর জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতিও ছিলেন তিনি। ১৯৬৮ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ৬৯ এ গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় গ্রেফতার হন। পরের বছর যোগ দেন মওলানা ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে। ১৯৭৩ সালে তিনি যশোর পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৭৮ সালে তিনি একই পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ শেষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন। জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ৭৬ সদস্যের প্রথম আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম।
৭৯ সালে বিএনপিতে যোগদানের পর তিনি যশোর সদর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং একইসাথে তিনি দলটির জেলা আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮২ সালে তিনি সড়ক ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। একই বছর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতাগ্রহণের পর তরিকুল ইসলামকে আটক করে কোনো এক অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে তিনমাস নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। ১৯৮৬ সালে তিনি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পান। ১৯৯১ সালে তরিকুল ইসলাম সমাজকল্যাণ ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং পরের বছর একই মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান।
১৯৮০ সালে বিএনপির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে পর্যায়ক্রমে তিনি দলের যুগ্ম মহাসচিব, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, ভাইস চেয়ারম্যান ও ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত দলের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে স্থায়ী কমিটির সদস্য পদ পান। যশোর থেকে ৪ বারের নির্বাচিত এমপি। চারদলীয় জোট সরকারের তথ্যমন্ত্রী এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
অসুস্থতার কারণে গত কয়েক বছর ধরে দলীয় কার্যক্রমে অনিয়মিত হয়ে পড়েছিলেন বিএনপির এই নেতা। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে শেষবার তাকে দেখা গিয়েছিল।
Leave a reply