বাউফল (পটুয়াখালী) করেসপনডেন্ট:
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় সহজলভ্য হয়ে উঠেছে মাদকদ্রব্য। হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক। এতে কিশোর ও যুবকদের বড় একটি অংশ মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে এই এলাকায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক স্থানে চলে মাদকের কেনা-বেচা। সন্ধ্যার পড়ে এসব স্থানগুলোতে জমে ওঠে মাদকের আড্ডা। কনকদিয়া, মদনপুরা, কেশবপুর, নাজিরপুর, কালাইয়া, কালিশুরি ও পৌরসভার কয়েকটি ঘরে রাত থেকে ভোর পর্যন্ত চলে মাদক সেবন ও জুয়ার আসর।
প্রায় অধিকাংশ মাদক সেবনের ঘরগুলোই নিয়ন্ত্রণ করেন সরকারদলীয় ও বিরোধী দলীয় ছাত্র এবং যুব সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। যার ফলে চাইলেই এসব স্থানে অভিযান পরিচালনা করতে পারছে না পুলিশ। কিছু মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার হলেও মূলহোতারা থাকছেন ধরাছোয়ার বাইরে। যার ফলে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না মাদকের সহজলভ্যতা।
গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য ও সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলা পৌর শহরের মুক্তিযোদ্ধা অডিটোরিয়াম, কাগুজিরপুল মল্লিক পাড়া, এমপির ব্রিজ, ধুলিয়া ইউনিয়নের ধুলিয়া লঞ্চঘাট, ধুলিয়া স্কুল, মঠবাড়িয়া চৌরাস্তা, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কালিশুরী ইউনিয়নের কালিশুরী ব্রিজ এলাকা, পোনাহুরা, বাহেরচর, নাজিরপুর ইউনিয়নের নিমদী লঞ্চঘাট, ধানদী বাজার, বাংলাবাজার, বড়ডালিমা এলাকা, কালাইয়া ইউনিয়নের কবরস্থান রোড, মুড়িঘর, খাদ্য গুদাম, কালাইয়া কলেজ ক্যাম্পাস, ডকইয়ার্ড, দাশপাড়া ইউনিয়নের কাঠের পোল, চৌমুহুনী, চরআলগী, বোর্ড অফিস, নওমালা ইউনিয়নের বাবুর হাট, নগরের হাট, আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের কাশিপুর বাজার, মাদবপুর, বগা ইউনিয়নের বগা লঞ্চঘাট, কেশবপুর ইউনিয়নের কেশবপুর বাজার, মমিনপুর বাজার, ভরিপাশা খেয়াঘাটে ইয়াবা ট্যাবলেট ও গাঁজা কেনা-বেচা চলে দিনভর।
অন্যদিকে, পৌরসভার গুলশান পাড়া, মহিলা কলেজ রোড ও সরকারি কলেজ রোডের কয়েকটি বাসায়, কনকদিয়া ইউনিয়নের জয়ঘোড়া এলাকার একটি বাসা, কালিশুরি ইউনিয়নের বাজার রোডের দুইটি বাসা, কেশবপুর বাজারের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কালাইয়া ইউনিয়নের কবর স্থান রোড এলাকার একটি বাসা ও টেম্পুস্ট্যান্ড এলাকার কয়লার ভাটার অফিস কক্ষ, ধুলিয়া ইউনিয়নের ব্রিজের ঢাল এলাকার কয়েকটি বাসায় রাতভোর মাদক ও জুয়ার আড্ডা বসে।
এ বিষয়ে এলাকাবাসী বলেন, সাংবাদিক বা পুলিশকে তথ্য দিলে সেটা যে ব্যবসায়ীরা জানবে না তার গ্যারান্টি নাই! আপনারাতো চব্বিশ ঘণ্টা আমাদের পরিবারকে নিরাপত্তা দিতে পারবেন না। বিপদে পড়ার ভয় সকলের আছে। মাদকের নিয়ন্ত্রণকারীরা সবাই সরকারদলীয় নেতাদের কাছের লোক বলেও জানান এসব ভীতসন্ত্রস্ত মানুষ।
গোয়েন্দা তথ্য বলছে, মাদক চোরাচালানের অন্যতম প্রধান রুট ঢাকা-কালাইয়া নৌ রুট। ঢাকা সদরঘাট, ফতুল্লা ও চাঁদপুর থেকে লঞ্চযোগে মাদকের চালান আসে এই উপজেলায়। এছাড়াও চট্টগ্রাম থেকে নোয়াখালী ও ভোলা জেলা হয়ে গভীর রাতে তেঁতুলিয়া নদী পারি দিয়ে মাদকের চালান আসে বাউফলে। অবৈধ মদের বোতলের চালান আসে কুরিয়ার সার্ভিসের পার্সেলের আড়ালে।
উপজেলার সচেতন নাগরিকরা বলছেন, মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে সামাজিক আন্দোলনের বিকল্প নেই। এগিয়ে আসতে হবে মাদকাসক্ত ব্যাক্তির পরিবারের অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও জনপ্রতিনিধিদের।
এ বিষয়ে বাউফল থানার অফিসার ওসি শোনিত কুমার গায়েন বলেন, পুলিশ নিয়মিত মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে। এটি আমাদের রুটিন ওয়ার্ক। মাদকের সাথে জড়িত ব্যাক্তি যত ক্ষমতাবান হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা ইতোমধ্যে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িতদের তালিকা তৈরি করেছি এবং তাদের নজরদারিতে রেখেছি। মাদকের বিরুদ্ধে সবসময় পুলিশ জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
/এমএইচ
Leave a reply