কোটা আন্দোলনে ক্রমেই দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের রায় বাতিল ও কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে বৃষ্টি উপেক্ষা করে আজও বিভিন্ন স্থানে মহাসড়ক অবরোধ করছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। করছেন আন্দোলন, চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিবাদ।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরুদ্ধ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। একইসময়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে কোটা বাতিলের দাবিতে অনঢ় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। চতুর্থ দিনের মতো তারাও শাহবাগ মোড় অবরোধ করে আন্দোলন ও শ্লোগান চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’ ‘কোটা না মেধা-মেধা মেধা’, আপোষ না সংগ্রাম-সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘আঠারোর পরিপত্র-পুনর্বহাল করতে হবে’, ‘কোটাপ্রথা নিপাত যাক-মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘সারা বাংলায় খবর দে-কোটাপ্রথার কবর দে’, ‘আমার সোনার বাংলায়-বৈষম্যের ঠাই নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
এদিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে প্রায় হাজারখানেক শিক্ষার্থী। অন্যদিকে সকাল ১১টার পর থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচির কারণে অসংখ্য যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহনে আটকে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও সংশ্লিষ্টরা। ঘোষিত চার দফা দাবি বাস্তবায়িত না হলে লাগাতার আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবি
১. ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধা ভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা।
২. পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠনপূর্বক দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরির সমস্ত গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে (সুবিধা বঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী ব্যতীত)।
৩. সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে।
৪. দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় স্থগিতে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে আপিল বিভাগে শুনানি হওয়ার কথা ছিল আজ। সেটিও মুলতবি করেছে আদালত। ফলে আপাতত কোটা পুনর্বহালই থাকছে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল।
ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটাব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন তখনকার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। এর পর থেকে চাকরিপ্রত্যাশী ও শিক্ষার্থীরা সরকারের জারি করা সেই পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে মাঠে নামেন।
/এমএইচ
Leave a reply