কে এই রসু খাঁ? কেন হলেন ‘সিরিয়াল কিলার’?

|

ফাইল ছবি

ঘটনাটি ২০০৯ সালের ৭ অক্টোবর। মসজিদের ফ্যান চুরির ঘটনায় টঙ্গী থেকে রসু খাঁকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার মোবাইল ফোনের সূত্রে স্থানীয় এক কিশোরী হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। রিমান্ডে মুখ খোলেন রসু খাঁ। বের হতে থাকে একের পর এক ‘লোমহর্ষক ও গা শিউরে ওঠা’ হত্যাকাণ্ডের তথ্য। নিজের মুখে স্বীকার করেন ১১ নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা।

এর আগে যেসব মামলায় কোনো তথ্য না পেয়ে পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল, সেরকম ঘটনারও তথ্য পাওয়া যায় তার জবানবন্দিতে।

অনেকের মনে প্রশ্ন আসে, কে এই রসু খাঁ? তার জীবনে এমন কী ঘটনা ঘটেছিল যে, শতাধিক নারীকে ধর্ষণ ও খুন করার ইচ্ছে পোষণ করতেন তিনি?

কেন?

চাঁদপুর সদর উপজেলার মদনা গ্রামের ছিঁচকে চোর রসু খাঁ। জানা যায়, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে একসময় সিরিয়াল কিলারে পরিণত হন তিনি। রসু খাঁর জীবনে হয়তো প্রেমের ফুল ফোটেনি কিংবা ফুল ফোটানোর প্রস্তাবে প্রত্যাখ্যাত ছিলেন। যার ফলে তিনি পরিণত হলেন নারী বিদ্বেষীরূপে। করতে থাকলেন একের পর এক ধর্ষণ ও খুন। এভাবে ১১ জন নারীকে হত্যা করলেন।

তার টার্গেট ছিল ১০১টি হত্যাকাণ্ড ঘটানোর। ১০১ নারীকে খুন করে এরপর সিলেটের মাজারে গিয়ে সন্ন্যাসী হওয়ার ইচ্ছার কথাও পুলিশকে জানায় রসু খাঁ।

কীভাবে?

রসু যাদের হত্যা করেছে, তারা সবাই ছিল গার্মেন্টস কর্মী। রসু হত্যার জন্য নারী গার্মেন্টসকর্মীদের বেছে নিতেন। ভালোবাসার অভিনয় করে নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়েদের ঢাকার সাভার ও টঙ্গী এলাকা থেকে চাঁদপুরে নিয়ে যেতেন। সেখানে ধর্ষণের পর হত্যা করতেন তাদের। হত্যার শিকার এসব হতভাগ্য মেয়ের অধিকাংশেরই সঠিক নাম-ঠিকানা বা পরিচয় আজও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যার ফলে অনেক মামলাতেই কোনো তথ্য না পেয়ে পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

২০০৯ সালের ২০ জুলাই রাত সাড়ে ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে রসু খাঁ ও অপর আসামিরা ফরিদগঞ্জ উপজেলার মধ্য হাঁসা গ্রামের নির্জন মাঠে পারভীন নামে এক নারীকে ধর্ষণ এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পারভীনের স্পর্শকাতর অঙ্গে ও দুই পায়ের উরুতে সিগারেট দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার ২০টি ক্ষতচিহ্ন ছিল।

পারভীন অজ্ঞাতপরিচয় হওয়ায় তৎকালীন সময়ের ফরিদগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মীর কাশেম আলী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলার বিবরণে আরও জানা যায়, সদর উপজেলার মদনা গ্রামের ছিঁচকে চোর রসু খাঁ ভালোবাসায় পরাস্ত হয়ে এক সময় সিরিয়াল কিলারে পরিণত হয়।

ওই হত্যা মামলায় সিরিয়াল কিলার রসু খাঁসহ (৪৫) তিনজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। অপর দুইজন হলেন, রসু খাঁর ভাগনে জহিরুল ইসলাম (৩৫) ও তার সহযোগী মো. ইউনুছ (৩৮)। পরবর্তীতে এই রায়ের ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য হাইকোর্টে আসে। একইসঙ্গে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন আসামিরা।

এই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে আজ মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সিরিয়াল কিলার রসু খাঁর ফাঁসির আদেশ বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। তবে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রসু খাঁর ভাগনে জহিরুল ইসলাম ও তার সহযোগী ইউনুছের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম ও বিচারপতি কে এম কামরুল কায়েসের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

এছাড়া,

রসু খাঁর বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর মধ্যে খুলনার পোশাককর্মী শাহিদা হত্যা মামলায় প্রথম মৃত্যুদণ্ডের রায় আসে ২০১৫ সালের ২২ এপ্রিল। চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ অরুণাভ চক্রবর্তী রসু খাঁর মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন।

রসু খাঁর বিরুদ্ধে চাঁদপুর ও ফরিদগঞ্জ থানায় মোট ১০টি মামলা করা হয়। এর ভেতর নয়টি হত্যা এবং অপরটি নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে।

/এএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply