অপ্রতিরোধ্য কলম্বিয়ার জয়রথ নাকি উরুগুয়ের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি

|

ছবি: সংগৃহীত

লাতিন আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে কলম্বিয়ার ও উরুগুয়ে। ২৩ বছর আগে কলম্বিয়া এবং ১৩ বছর আগে উরুগুয়ে সর্বশেষ কোপা আমেরিকার প্রতিযোগিতায় ফাইনাল খেলেছে। এবার যে কোনো একটি দলের পক্ষে ভাগ্যের শিঁকে ছিঁড়বে। টানা ২৭ ম্যাচ অপরাজিত কলম্বিয়া। ৬ ড্র করে জিতেছে ২১টি। এমনকি জার্মানি, স্পেন, ব্রাজিলকেও হারিয়েছে। অন্যদিকে, উরুগুয়েকে আসা দেখাচ্ছে ইতিহাস, কোপার সেমিফাইনালে তৃতীয়বারের মতো মুখোমুখি হচ্ছে উরুগুয়ে ও কলম্বিয়া। ১৯৭৫ ও ১৯৯৫ সালে জিতেছিল উরুগুয়ে।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ব্যাংক অব আমেরিকা স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় ভোর ৬ টায়। সেমিফাইনালে উঠে আসার পথে দুই দলের চিত্রটা একই রকম—পাঁচ ম্যাচে চার জয় এবং একটি করে ড্র। কাকতালীয় মিল হচ্ছে, উভয় দল ড্র করেছে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেয়া ব্রাজিলের সঙ্গে। কলম্বিয়া গ্রুপ পর্বে, উরুগুয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে। গোলশূন্য ড্রয়ের পর টাইব্রেকারে ব্রাজিলকে বিদায় করে এসেছে মার্সেলো বিয়েলসার উরুগুয়ে।

ম্যাচের আগে আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছে দুই দলই। ১০ জনের দল নিয়েও শেষ ১৬ মিনিটে ব্রাজিলকে ঠেকিয়ে রেখেছিল উরুগুয়ে। পরে টাইব্রেকারে সেলেসাওদের বিদায়ের পথ দেখায় ১৫ বারের চ্যাম্পিয়নরা। অন্যদিকে পানামাকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে সেমিফাইনালে উঠে এসেছে কলম্বিয়া। এমনকি সব মিলে টানা ২৭ ম্যাচে অপরাজিতও আছে দলটি।

ইতিহাস-পরিসংখ্যানে উরুগুয়ের চেয়ে বেশ পিছিয়েই আছে কলম্বিয়া। উরুগুইয়ানদের ২০ জয়ের বিপরীতে কলম্বিয়ানদের জয় ১৪টি, ১১ ম্যাচ হয়েছে ড্র। উরুগুয়ে যেখানে দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, আর্জেন্টিনার সঙ্গে যৌথভাবে রেকর্ড ১৫ বারের কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন; সেখানে কলম্বিয়া কখনো বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালের গণ্ডি টপকাতে পারেনি, কোপায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মাত্র একবার, সেই ২০০১ সালে।

কলম্বিয়ার পক্ষে হামেস রদ্রিগেজ ও লুইজ দিয়াজরা যেভাবে আক্রমণের পসরা বসাবেন, তাতে মাতিয়াস অলিভেরাদের বেশ বেগ পেতে হবে। এই জায়গা থেকে উরুগুয়ের জন্য আরো অস্বস্তির খবর হলো রোনাল্ড আরাউহোর ইনজুরি। বার্সেলোনার এই তারকা ডিফেন্ডার চোট কাটিয়ে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ফিরতে না পারলে দলকে বেশ ভুগতে হবে।

অন্যদিকে দারউইন নুনেজ, ফেডেরিকো ভালভার্দেরা থাকবেন উরুগুয়েকে এগিয়ে নেয়ার দায়িত্বে। এই জায়গা থেকে যোগ দিতে পারেন লুইস সুয়ারেজও। অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ দলটি তাই কলম্বিয়ার বিপক্ষে কিছুট স্বস্তিতে থাকতেই পারে। গোললাইনের নিচে অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে একদিকে ক্যামিলো ভার্গাস, অন্যদিকে উরুগুয়ের জার্সিতে সার্জিও রামন রোচেট। ভার্গাস ব্রাজিলের বিপক্ষে উড়ন্ত একটি সেভ দিয়ে দলকে পরাজয়ের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। ব্রাজিলের বিপক্ষে নিজেকে প্রমাণ করেছেন রোচেটও। টাইব্রেকারের শট ঠেকিয়ে তিনিই দলকে টেনে এনেছেন সেমি পর্যন্ত।

কোপা আমেরিকার ফুটবলে পেশিশক্তির ব্যবহার নিয়মিতই দেখা যায়। কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল-উরুগুয়ে ম্যাচে যেন এই শক্তিই ফুটবল থেকে বড় হয়ে উঠেছিল। এই শক্তির বেশি ব্যবহার করে কলম্বিয়া। বিগত বিভিন্ন টুর্নামেন্টে সেই প্রমাণ দলটি রেখেছে। বিশেষ করে যখন পরাজয়ের মুহূর্তে থাকে দলটি, তখনই পেশিশক্তির ব্যবহার তারা বাড়িয়ে দেয়। ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে স্বাগতিক ব্রাজিলেরই বড় তারকা নেইমার জুনিয়রের পিঠে আঘাত করেছিলেন কলম্বিয়ার ডিফেন্ডার হুয়ান ক্যামিলো জুনিগা। তারপর নেইমার ছিলেন দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে।

সেই জুনিগা এখন দলের সঙ্গে নেই। তবে বিকল্প এই ধারা ধরে রেখেছে দলটি। তাতে আগামীকালের ম্যাচে মূল ফুটবল থেকেও পেশিশক্তির বিষয়টি থাকবে আলোচনায়। চলতি আসরে এখন পর্যন্ত কলম্বিয়া কার্ড ছাড়া কোনো ম্যাচ খেলতে পারেনি। অর্থাত্, প্রতিটি ম্যাচেই দলটির ডিফেন্ডার কিংবা মিডফিল্ডারের কেউ না কেউ হলুদ কার্ডের খড়্গে পড়েছেন। এই জায়গা থেকে গ্রুপ পর্বে কিছুটা ব্যতিক্রম ছিল উরুগুয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষের ম্যাচ বাদে আগের দুই ম্যাচে তারা কার্ড না দেখেই ম্যাচ শেষ করেছে। কোয়ার্টারে বিষয়টি ধরে রাখতে পারেনি ডারউইন নুনেজ বাহিনী। লাল কার্ডসহ একাধিক কার্ড দেখতে হয়েছে ব্রাজিলের ম্যাচে।

দুই দলের ডাগআউটে থাকবেন দুই আর্জেন্টাইন—কলম্বিয়ার নেস্তর লরেঞ্জো এবং উরুগুয়ের মার্সেলো বিয়েলসা। কলম্বিয়া একমাত্র কোপা আমেরিকা জিতেছে ২০০১ সালে। ২৩ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটাতে চান নেস্তর লরেঞ্জো। এ সম্পর্কে ৫৮ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন কোচ বলেন, আমরা কোন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি তা দলের সবাই জানে। সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সবাই বদ্ধপরিকর। ম্যাচ বাই ম্যাচ হিসাব করছি আমরা। পরের ম্যাচ সবসময়ই গুরুত্ব পায়। আমরা এখন উরুগুয়ে ম্যাচ নিয়ে ভাবছি। এই দলের সদস্যরা সতীর্থদের জন্য আত্মাহুতি দিতে পারে! কোপা আমেরিকার শুরু থেকেই আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি।

পাঁচ ম্যাচে ১৩ গোল করা উরুগুয়ে মাত্র দুই গোল হজম করেছে। আসরে এখন পর্যন্ত রক্ষণে সবচেয়ে দৃঢ়তা দেখিয়েছে দলটি, যা উরুগুয়েকে এগিয়ে রাখছে। পাঁচ ম্যাচের তিনটি ক্লিনশিট রাখা উরুগুয়ে কোচ মার্সেলো বিয়েলসা বলেন, কলম্বিয়ার আক্রমণভাগ মোটেও সাধারণ নয়। প্রত্যেক বিভাগে বিকল্প রয়েছে তাদের, মানের দিক থেকে খেলোয়াড়দের মধ্যে খুব একটা তফাত নেই। তাদের দারুণ একজন কোচ রয়েছেন। যিনি সবসময়ই সৃজনশীল, মাঠে প্রভাব বিস্তার করার দিকে মনোযোগ দিয়ে থাকেন। যা দলটিতে লড়াইয়ের অনেক রসদ যোগ করেছে।

/আরআইএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply