স্বপ্নদ্রষ্টা নুরুল ইসলামের চতুর্থ প্রয়াণ দিবস আজ

|

শরিফুল ইসলাম খান:

একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, দেশপ্রমিক ও সফল উদ্যোক্তা। যিনি কঠোর পরিশ্রম করে স্বপ্নের বিশাল আকাশ স্পর্শ করতে চেয়েছেন সবসময়, সফলও হয়েছেন প্রতিটা পদক্ষেপে। প্রতিকূলতায় নিরাশার বদলে বলেছেন আশার কথা, অন্ধকারে দেখিয়েছেন আলোর পথ। শত সংকটেও সম্ভাবনার কথা বলতেন, চলতেন সত্যকে সাথে নিয়ে। লক্ষ্য পূরণে অবিচল ছিলেন সবসময়, সাহস নিয়ে মোকাবেলা করতেন সব বাধা। নানা গুণে অসাধারণ হয়েও জীবনযাপন করতেন একেবারেই সাধারণের মত।

গুণি এই মানুষটির ভাবনার জগতজুড়েই ছিলো গণমানুষের উন্নয়ন-অগ্রগতি। তিনি যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান– বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম। তার হাত ধরে হাজার-হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। গড়ে উঠেছে অসংখ্য শিল্প-কারখানা। আজ এই স্বপ্নদ্রষ্টার চলে যাওয়ার ৪ বছর। মহান এই কর্মবীরের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

২০২০ সালের বৃষ্টিভেজা-বিষন্ন এক দিনে অনন্ত পথের পথিক হন মৃত্যুর মুখে জীবনের জয়গান গাওয়া দুঃসাহসী এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। পরিবার-পরিজন আর স্বজন-সহকর্মীদের ভাসান শোকের সাগরে। রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধায় নেন চির বিদায়।

স্বপ্নবাজ এ মানুষটির আকস্মিক মৃত্যু কর্মবীরের এ জীবনকে স্তব্ধ করেছে ঠিকই, কিন্তু থামাতে পারেনি তার আর্দশ আর স্বপের পথচলা। এখনও অনেকের কাছে তিনি প্রতিদিনের প্রেরণার উৎস। কর্মগুণে হয়ে উঠেছেন সততা, নিষ্ঠা আর ধৈর্য্যশীলের প্রতীক।

যা বিশ্বাস করতেন তাই বলতেন নুরুল ইসলাম, চলতেনও ঠিক সেভাবেই। দেশের অন্যতম সফল এই শিল্পপতির জন্ম পদ্মা পাড়ের বিস্তৃত জনপদ নবাবগঞ্জের কামারখোলা গ্রামে। তার মেধা-মননে ছিলো স্বাধীনতার চেতনা। চিন্তা-চেতনায় ছিল দেশপ্রেম। সবসময় চাইতেন দেশের সমৃদ্ধি, ভাবতেন সবার কথা।

১৯৭১ সালেও জীবন বাজি রেখে সম্মুখ সমরে অংশ নিয়েছিলেন নুরুল ইসলাম। কেবল দেশকে শত্রু মুক্তি করেই খান্ত হননি, নতুন উদ্দীপনায় ঝাপিয়ে পড়েন দেশ গঠনে। সংগ্রামের ইতি টানেননি, মনযোগ দেন নতুন পরিকল্পনায়– কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে। সে লক্ষ্যেই ১৯৭৪ সালে গড়ে তোলেন যমুনা গ্রুপ। যা এখন বাংলাদেশের স্বনামধন্য মহীরুহ।

রূপকথার গল্প নয়, এক জীবনে অনেক সফল শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। কিন্তু কখনও ঋণ খেলাপি হননি নুরুল ইসলাম। যেখানে হাত দিয়েছেন সেখানেই সোনা ফলিয়েছেন। সৃষ্টি করেছেন নতুন এক অধ্যায়ের। স্বপ্ন দেখতেন এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলস পরিশ্রম করতেন। সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলায় ব্যক্তিগত জীবনে ভীষণ ররকমের স্পষ্টবাদী এই মানুষটি ছিলেন নির্ভয়।

অর্থনীতির পাশপাশি ভীষণ রাজনীতি সচেতন ছিলেন নুরুল ইসলাম। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা ইস্যুতে শত ব্যস্ততার মধ্যেই পারিবারিক বন্ধন ছিলো অন্যরকম। বিপুল সম্পদের মালিক হলেও বিলাসিতা কখনও স্পর্শ করতে পারেনি তাকে।

এক জীবনে অনেক কিছু করেছেন এই স্বপ্নদ্রষ্টা, পেয়েছেন সম্মান। পৃথিবীর মায়া ছাড়লেও কর্মগুণে বেঁচে আছেন কর্মীদের অন্তরে অন্তরে। থাকবেন যুগ যুগ ধরে, কখনও বাংলাদেশের ইতিহাসে উজ্জল নক্ষত্র হয়ে আবার কখনও জ্বলজ্বলে ধ্রুব তারা হয়ে।

/এমএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply