টেন মিনিট স্কুলের বিনিয়োগ প্রস্তাব বাতিল কেন?

|

অনলাইনভিত্তিক শিক্ষামাধ্যম টেন মিনিট স্কুলের ৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব বাতিল করেছে স্টার্টআপ বাংলাদেশ। আজ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকালে স্টার্টআপ বাংলাদেশের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকও ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে তা নিশ্চিত করেন।

কিন্তু কেন এমন সিদ্ধান্ত:

টেন মিনিট স্কুলের বিনিয়োগ প্রস্তাব বাতিলের সিদ্ধান্তের ঘোষণায় স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়নি বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগের ফ্ল্যাগশিপ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি স্টার্টআপ বাংলাদেশ। তবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযোগ করা হচ্ছে, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আয়মান সাদিক স্ট্যাটাস দেয়ায় বিনিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।

এই অভিযোগের প্রসঙ্গে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকালে সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত বিএসআরএফ সংলাপে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, আসলে আমাদের চুক্তি থাকে, বিনিয়োগ করি বা না করি, তাদের (স্টার্টআপ কোম্পানি) যে তথ্য-উপাত্ত বা তাদের সঙ্গে যে নেগোসিয়েশন হয়, এটা আমরা কোথাও প্রকাশ করতে পারি না। সেই জায়গাতে আমাদের কিছু বিধিনিষেধ আছে।

তিনি আরও বলেন, কেন আমরা টেন মিনিট স্কুলের প্রস্তাবটি বাতিল করলাম, আমরা যদি ওদের কোনও নেগেটিভ বিষয় প্রকাশ করি এটা তো অন্য বিনিয়োগকারীর কাছেও যাবে, কিংবা ভবিষ্যতে যেতে পারে। তাহলে কেন দিলাম না, সেই কারণটা যদি আমি প্রকাশ্যে বলি বা আমরা প্রকাশ করি, তাহলে এটা আসলে আমাদের নৈতিকভাবে চুক্তির বরখেলাপে পড়ে যায়। সে কারণেই আমি বলব, কেন বিনিয়োগ প্রস্তাব বাতিল করলাম, এই ব্যাখ্যা দেয়ার কারণটা আমরা কোনও বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বলতে পারি না।

তবে এরপর তিনি এ-ও বলেছেন, কেউ যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে কোনও মতামত বা অবস্থান নেয়, অবশ্যই আমাদের তো কথাই আছে যে, দুর্জন বিদ্বান হইলেও পরিত্যাজ্য। এটা যে ব্যক্তি বা যে প্রতিষ্ঠানই হোক না কেন, তাদের অবশ্যই বাংলাদেশের প্রতি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা- এগুলোকে সমুন্নত রাখা উচিত। কেউ সফল উদ্যোক্তা হতে পারে, কেউ সফল শিল্পী হতে পারে, সাংবাদিক হতে পারে, আইনজীবী হতে পারে, রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন-ভিন্ন হতে পারে কিন্তু বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ এবং আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু- এসব বিষয় নিয়ে কোনও বিরোধ বা কোনও বিতর্ক থাকতে পারে না।

যদিও অতীতে জুনাইদ আহমেদ পলক ও আয়মান সাদিকের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়। আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর নির্বাচনী আসন ও তার মন্ত্রণালয়ের নানা অনুষ্ঠানে অতিথি করা হয় আয়মন সাদিককে। আজ বিনিয়োগ প্রস্তাব বাতিলের ঘোষণায় সে সম্পর্কে ‘ছেদ’ পড়ার বিষয়টি ওঠে আসছে।

এই বিনিয়োগ প্রস্তাব বাতিলের ঘোষণার আগে টেন মিনিট স্কুলকে অবহিত করা হয়েছিল কি না এবং করা হলে কী কারণে তা বাতিল করা হয়েছে, এর ব্যাখ্যা দিয়েছে কি না জানতে আয়মান সাদিক ও তার প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে যমুনা নিউজ। তারা এ বিষয়ে এই মুহূর্তে কোনো কথা বলবে না বলে জানিয়েছে।

আইসিটি প্রতিমন্ত্রী ও আয়মন সাদিকের পোস্টের স্ক্রিনশটের কোলাজ

কোটা সংস্কার আন্দোলনে আয়মান ও টেন মিনিট স্কুল:

গত ১৩ জুলাই রাত ৯টা ৫ মিনিটে আয়মান সাদিক তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেয়া স্ট্যাটাসে লিখেন, কোটা সংস্কার চাই। এর সঙ্গে দেয়া হ্যাশট্যাগে বলেন কোটা মুভমেন্ট।

ওই পোস্টে কালো ব্যাকগ্রাউন্ডের একটি গ্রাফিক্স ছবিও যুক্ত করেন। তাতে সাদা রঙের হরফে লেখা, কোটা সংস্কার চাই। মেধা হোক সবচেয়ে বড় কোটা। সেখানেও হ্যাশট্যাগে বলা হয়, কোটা মুভমেন্ট।

তার এই পোস্টের নিচে অনেককে ধন্যবাদ দিতে দেখা যায়। আয়মান সাদিকের এই অবস্থানকে স্বাগত জানায় সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

ঠিক দুইদিন পর গতকাল সোমবার আয়মান সাদিক তার ফেসবুক পেজে আরেকটি স্ট্যাটাস দেন। তাতে লিখেন, রক্তাক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়! আমার ক্যাম্পাসে রক্ত কেন? প্রতিবাদ জানাই।

এই স্ট্যাটাসের সাথেও একটি গ্রাফিক্স ছবি ছিল কালো ব্যাকগ্রাউন্ডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো, তাতে রক্তের ছাপ। যেটি কি না গতকাল থেকে অনেককেই ব্যবহার করতে দেখা যায়।

এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার পর থেকে এই গ্রাফিক্স ছবিটি ব্যবহার করতে দেখা যায় অনেককে।

টেন মিনিট স্কুলের পেজের প্রোফাইল ছবিও বদলানো হয় সোমবার রাত ১১টা ৫৪ মিনিটে। তাদের প্রোফাইল ছবিতে যুক্ত করা হয় কালো ব্যাকগ্রাউন্ডের ছবি।

সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া:

খাত সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় টেন মিনিট স্কুলের বিনিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া, এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। আর সরকার পক্ষের লোকজনেরা সাধুবাধ জানিয়েছেন।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply