শামীম আল মামুন, টাঙ্গাইল:
যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি। বর্তমান বাংলাদেশে যৌতুক প্রথা এক ভয়াবহ সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আইন থাকা সত্ত্বেও প্রায়োগিক দুর্বলতার কারণে যৌতুক প্রথা সমাজ থেকে মুছে ফেলা সম্ভব হচ্ছে না। যৌতুক নারী নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচেছ। যৌতুকের শিকার হয়ে দেশে প্রতি বছর অনেক নারীকে প্রাণ দিতে হচ্ছে। ঠিক সেই সময় বিরল এক ঘটনার সূচনা করলেন আব্দুর রহিম বাদশা নামের এক ব্যক্তি। ১৮ বছর আগের করা ভুল সংশোধন করতে তিনি নিজেই যৌতুকের টাকা ফিরিয়ে দিলেন তার শ্বশুর বাড়ির লোকজনের কাছে।
জানা যায়, টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হাদিরা ইউনিয়নের হাবিবপুর গ্রামের মো. নজরুল ইসলামের ছেলে আব্দুর রহিম। বর্তমানে চার সন্তানের জনক তিনি। ১৮ বছর আগে একই উপজেলার আলম নগর ইউনিয়নের দক্ষিণ নবগ্রামের মো. আব্দুল হালিমের মেয়ে লতা বেগমকে ২০০০ সালে বিয়ে করেন। বিয়ে আগে জানতেন না তার বাবা বিয়ের জন্য মেয়ের পরিবারের কাছে ৪০ হাজার টাকা যৌতুক নিয়েছেন। পরে যখন জানতে পারেন তখন অনেক দেরি। তাই প্রতিবাদ করেও কোন লাভ হয়নি। বেকার ছেলের কথা কেউ শোনে না।
কিন্তু আজ ১৮ বছর পর আব্দুর রহিমের ১৮তম বিবাহ বার্ষিকীকে স্মরণীয় করে রাখতে এবং সমাজের মানুষদের সচেতন করতে তিনি যৌতুকের টাকা ফেরত দেন তার শুশুরকে। শুধু তাই নয়, গৃহপালিত পশুও উপহার দেন তার শশুর বাড়ির লোকজনদের।
বিষয়টি প্রকাশের পর এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টিসহ প্রশংসনীয় কাজ হিসেবে সুনাম কুড়াচ্ছেন আব্দুর রহিম বাদশা।
রহিমের পরিবারের সদস্যরা বলেন, আমরা খুব খুশি। তার এরকম সিদ্ধান্তে আমাদের অনেক ভালো লাগছে। তারমত সমাজের আরো যারা আছেন তারাও যদি এমন কাজ করতো তাহলে ভালো হতো। আর যেন কেউ যৌতুক না নেয়।
রহিমের শশুর মো. আব্দুল হালিম বলেন, আমার জামাতার এমন বুদ্ধিমত্তা দেখে আমার খুব ভালো লাগছে। আমি চাই আর যেন কেউ যৌতুক নিয়ে বিয়ে না করে।
আব্দুর রহিম বাদশা বলেন, যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি। আমি যখন বিয়ে করি তখন বেকার ছিলাম। কিন্তু এখন আমি কর্মজীবী। আমি যৌতুকের টাকা ফিরিয়ে দিলাম। আর আমি কখনো চিন্তা করিনি যৌতুক নিয়ে বিয়ে করবো। এতো বছর পরে হলেও আমি যৌতুকের টাকা ফেরত দিলাম। কারণ যৌতুক নেওয়া ও দেওয়া দুটোই অপরাধ।
Leave a reply