কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে কী বলছেন তারকারা

|

গত কয়েকদিন ধরেই সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে উত্তাল সারাদেশ। এক দফা এক দাবিতে রাজপথে নেমে এসেছে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের রেশ ধরে সোমবার (১৫ জুলাই) ছাত্রলীগের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে শিক্ষার্থীদের।

আজ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) রংপুরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে আবু সাঈদ নামে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি।

এছাড়া, চট্টগ্রামে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছে। রাজধানীর ঢাকা কলেজের বিপরীত পাশে সংঘর্ষে অজ্ঞাত এক যুবকের প্রাণহানির খবর হয়েছে।

প্রথমদিকে শোবিজ তারকারা কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে চুপ থাকলেও গতকাল শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পর সরব হয়েছেন অনেকে। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে কোটা সংস্কারের পক্ষে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়েছেন শোবিজ অঙ্গনের একাধিক তারকা। তারকাদের ফেসবুক ঘুরে দেখা গেল তাদের অভিমত। সেগুলো তুলে ধরা হলো–

নায়িকা বুবলী তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি ছবি শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরবে কেন?’ ভক্ত-অনুরাগীরা সেই পোস্টের কমেন্টবক্সে বুবলীর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।

কণ্ঠশিল্পী লুৎফর হাসানকে ক্রেডিট দিয়ে চিত্রনায়িকা পরীমণি তার ফেসবুক হ্যান্ডেলে এক ছাত্রীর ওপর হামলার ছবি প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতায় আপনার জবান বন্ধ থাকলে আপনি একজন মুনাফিক।’

সোশ্যাল মিডিয়ায় চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস লিখেছেন, ‘সহিংসতা কাম্য নয়।’ তবে নেটিজেনদের একাংশ বলছেন, কোটা আন্দোলনে সরাসরি সমর্থন নিতে ভয় পাচ্ছেন এই নায়িকা।

চিত্রনায়িকা মিষ্টি জান্নাত এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আমার নানা-দাদা মুক্তিযোদ্ধা। আমার কোটা লাগে না। অনেক চাকরি আছে। কেন শুধু সরকারি চাকরিই করতে হবে। আর কিছু কোটা থাকলে সমস্যাটা কী? এত মারামারি কেন?’

অভিনেত্রী রুনা খান হামলার শিকার ভীত এক ছাত্রীর ছবি প্রকাশ করে হৃদয়ভাঙা ইমোজি দিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদ সামাজিকমাধ্যমে লেখেন, ‘আমার ক্যাম্পাস রক্তাক্ত কেন? শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরবে কেন?‌’

‘মহানগর’খ্যাত নির্মাতা আশফাক নিপুণ তিন শব্দের এক স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছেন, ‘ছাত্রদের পাশে দাঁড়ান।’

নির্মাতা সুমন আনায়ারও আন্দোলনকারী ছাত্রদের পক্ষে লিখেছেন, ‘দেশটা তাহলে শুধুই আপনাদের, আমরা ধইঞ্চা? আসলে যেখানে দায়িত্ব শব্দটা ‘ক্ষমতা’ হিসেবে ব্যবহার হয়, সেখানে নাগরিক ধইঞ্চা!’

‘কুঁড়েঘর’ ব্যান্ডের প্রধান ভোকাল তাসরিফ খান লিখেছেন, ‘ছাত্ররা সম্পূর্ণ যৌক্তিকভাবে তাদের মেধার মূল্যায়ন চায়। এই নূন্যতম চাওয়াটুকু যদি না দেয়া হয়, তাহলে এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের কিছু আর হতে পারে না।’

আলোচিত ইউটিউবার ও অভিনেতা সালমান মুক্তাদির হামলায় আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এমন কোনো ছাত্র আছেন, যিনি হামলার শিকার হয়েছেন বা হলে ঢুকতে পারছেন না? আমি আপনাদের দায়িত্ব নেব। যদিও লাখ লাখ মেসেজ বা পোস্টের মাঝে তোমাদের ফিল্টার করা আমার পক্ষে অসম্ভব। তাই যদি তোমাদের কোনো বন্ধু থাকে আমার বন্ধু তালিকায়, তাহলে তাদের মাধ্যমে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করো। আমি দুঃখিত, এটাই সর্বোচ্চ হয়তো এখন করতে পারছি। যদি তোমাদের কোনো থাকার জায়গা প্রয়োজন হয় বা চিকিৎসা সেবার প্রয়োজন হয়, আমি আছি। মাত্রই কিছু ভিডিও দেখলাম, যেখানে কিছু ছাত্র তাদের হলে প্রবেশ করতে পারছে না।’

অভিনেতা ও অভিনয়শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসান লিখেছেন, ‘কোটা সংস্কার হতেই পারে। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের জন্য কোটা এমনিতেই দু-চার বছর পর অকার্যকর হয়ে যাবে! রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সম্মানসূচক একটি ন্যূনতম কোটা থাকা উচিত।’

অভিনেতা নিলয় আলমগীরও তার স্ট্যাটাসে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে লিখেছেন, ‘আজকের ছাত্রছাত্রীরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তারাই একটা সময় দেশের হাল ধরবে। এতো এতো ছাত্রছাত্রী ভুল দাবি করতে পারে না। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়েও বলছি, দয়া করে কোটা সংস্কার করে দিন। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারকে যে সম্মান ও ভালোবাসা আপনি সব সময় দেখিয়েছেন, তার জন্য আমরা আপনার কাছে কৃতজ্ঞ…।

দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘শিরোনামহীন’-এর লিডার জিয়াউর রহমান ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের কারণেই আমরা স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে বেঁচে আছি। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু লক্ষ্য করুন, নিশ্চয়ই মুক্তিযোদ্ধা বা ওনাদের নিকটাত্মীয় তরুণ নয়। বঞ্চিত গোষ্ঠীর বিবেচনাতেও একই রকম ইক্যুয়েশন আছে। তার মানে, কোটাব্যবস্থা একটা প্রবল মিসইউজের রাস্তা তৈরি করা ছাড়া এখন আর কোনো ভূমিকা রাখছে না। মাঝখান থেকে মেধাবী, যোগ্য তরুণ হারাচ্ছে তার সুযোগ। ফ্রাস্ট্রেশন নিয়ে পাড়ি দিতে হচ্ছে তার দৈনন্দিন জীবন।’

পোস্টের শেষে জিয়া আরও লিখেছেন, ‘কোটাব্যবস্থা থেকে তরুণ সমাজকে মুক্ত করা হোক। মেধা ও যোগ্যতা স্বীকৃতি পাক। এটা অনস্বীকার্য যে, আমাদের দেশে সঠিক জায়গায় যোগ্য মানুষের অভাব আছে। বঞ্চিতকে বেনিফিট দিতে গিয়ে যোগ্য কাউকে বঞ্চিত করা কোনো সুফল নিয়ে আসে না।’

/এএম

 


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply