নরসিংদী কারাগারের সুপার ও জেলার বরখাস্ত, মাইক্রোবাসসহ নানাভাবে পালায় কয়েদি

|

স্টাফ করেসপনডেন্ট, নরসিংদী:

১৯ জুলাই, বিকেল ৫টা। কোটা সংস্কার ইস্যুতে সারাদেশ উত্তাল… তখন নজিরবিহীন কাণ্ড ঘটে নরসিংদী জেলা কারাগারে। হামলা চালায় কয়েকশ দুর্বৃত্ত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে তখন ঘণ্টাতিনেক চলে গোলাগুলি। কারারক্ষীদের মারধরের পর অর্ধশতাধিক অস্ত্র ও গুলি লুটে নেয় দুর্বৃত্তরা। পালাতে থাকা কয়েদিরা।

ওই সময় দুটি মাইক্রোবাসে করে চিনিশপুর হয়ে চর্ণগরদী সড়ক দিয়ে পালিয়ে যেতে দেখা যায় কয়েকজন কয়েদিকে। সেই সড়ক দিয়ে কেউ হেঁটে, আবার কেউ রিকশায় চড়েও সটকে পড়ে। এভাবে পালিয়ে যায় ৮২৬ কয়েদির সবাই।

এর নেপথ্যে কারা, সেটা জানতে কাজ করছে তদন্ত কমিটি। আর কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে নরসিংদী জেলা কারাগারের সুপার আবুল কালাম আজাদ ও জেলার কামরুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

নরসিংদীর পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, জুমার নামাজের পর মাধবদী বাসস্ট্যান্ডে প্রথমে জড়ো হয় দুর্বৃত্তরা। পরে পৌরসভা ও ডাকঘরে হামলা-অগ্নিসংযোগ করে তারা। জেলা কারাগারের পর ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে চালানো হয় তাণ্ডব। ঘটনার পরদিন পাঁচদোনাতেও চালানো হয় সহিংসতা।

কারারক্ষীরা জানায়, প্রথমে কারাগারের পকেট গেট দিয়ে প্রবেশ করে দুর্বৃত্তরা। তখন সেখানে থাকা একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়া হয়। হামলা ঠেকাতে কারারক্ষীরা এগিয়ে এলে তাদের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়া হয়। তখন চারদিক থেকে কারাগারে ঢুকছিলেন দুর্বৃত্তরা। অবস্থা বেগতিক দেখে কারারক্ষীরাও পরে কয়েদিদের সাথে মিশে যান।

তাদের দাবি, ওই সময় দুর্বৃত্তরা কারারক্ষী ও সুপারকে খোঁজছিলেন, কয়েদিদের সাথে মিশে না গেলে জীবন বাঁচানো দায় ছিল। তাই তারা এই পন্থা অবলম্বন করেন।

মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই আক্রমণ কোনো আন্দোলনের অংশ নয়, এটা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত; এটা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, যেসব জঙ্গিরা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জড ছিল, তাদেরকে তারা মুক্ত করে নিয়ে গেছে। তাহলে উদ্দেশ্যটা কী তা নিশ্চয় বুঝা যায়।

পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, জঙ্গি-অপরাধীরা যাতে ছাড়া পায় এবং দেশের মধ্যে যেন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে সেজন্য তারা আক্রমণ চালিয়েছে।

এই সহিংসতার ঘটনায় ৪টি মামলা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন অর্ধশতাধিক। উদ্ধারও হয়েছে কারাগার থেকে লুট হওয়া বেশ কিছু অস্ত্র। ইতোমধ্যে আত্মসমর্পণ করেছে পালিয়ে যাওয়া শতাধিক কয়েদি। আর কারাগার থেকে পালানো দুই জঙ্গি ইসরাত জাহান মৌ ও খাদিজা পারভীন মেঘলাকে গ্রেফতার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)।

আত্মসমর্পণ করা কয়েকজন কয়েদি জানালেন, দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে তালা ভেঙে ফেলে। আর সবাইকে বের করে দেয়। কারাগারে হামলা চালানোর এ ঘটনায় হতবাক জেলাবাসী।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply