ক্রমেই স্বাভাবিক হচ্ছে রংপুর

|

সিনিয়র করেসপনডেন্ট, রংপুর

সপ্তম দিনে কারফিউ শিথিল থাকায় সকাল ৬ টা থেকে রংপুর মহানগর এলাকায় লোকজনের চলাচল ও যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিস্থিতি আগের চেয়ে আরও স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। বৃহস্পতিবার রাতেই বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন ঘোষণা দেন রংপুরসহ বিভাগের ৮ জেলায় ৬ টা থেকে সন্ধা ৭ টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে। এর আগের দিন কারফিউ শিথিল ছিল সকাল ৬ টা থেকে সন্ধা ৬ টা পর্যন্ত।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) হলেও নগরীতে অনেক রিকশা, অটো রিকশা, মোটরসাইকেলসহ ছোট ও মাঝারি যানবাহনের দেখা মেলে। অনেকেই ঘর থেকে বাইরে বের হয়ে প্রয়োজনীয় কাজ সারছেন। বাইরে বের হতে পেরে স্বস্তিতে সাধারণ মানুষ। দুরপাল্লা, আন্তজেলা ও উপজেলা রুটে বাস ছেড়েছে। বাস স্ট্যান্ডগুলোতে যাত্রীদের ভির লেগেছে সকাল থেকেই। খুলেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। নগরবাসির মধ্যে সব ধরণের আতংকও কেটে গেছে।

কামারপাড়া ঢাকা কোচ স্ট্যান্ডের যাত্রী ফারুকুজ্জামান জানান, আল্লাহর ওপর ভর করে আমি ঢাকা রওনা দিলাম। আশাকরি ঠিকঠাক সময়ে পৌছাতে পারবো। নাবিল পরিবহনের পিকেট কাউন্টার ম্যানেজার মুকুল মিয়া জানান, আমরা নির্ধারিত সময়ে গাড়ি ছাড়ছি। তবে সব গাড়ির সব সিট পূরণ হচ্ছে না। মানুষের মধ্যে আতংক আছে। সেকারণে স্বাভাবিকের তুলনায় যাত্রি কম। গুপ্তপাড়ার বাসিন্দা খলিলুর রহমান জানান, দমবন্ধ পরিস্থিতি আর নেই। দিনের বেলা আমরা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা কেনাকাটা করতে পারছি। এখন রাত হলে আতংক বাড়ে। দ্রুত কারফিউ তুলে নিলে আমরা ভালোভাবে কর্ম সম্পাদন করতে পারি।

ইন্টারনেট ব্যবসায়ী ইনজয় সাইবার ক্যাফের মালিক বাবু জানান, ব্রড ব্যান্ড আসলেও স্পীড নেই। সেকারণে ব্যবসা চলছে না। সাবিহা আখতার নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী জানালেন, দ্রুত নেট কানেকশন এবং কারফিউ তুলে নেয়া উচিত। তা না হলে সাধারণ মানুষের জীবিকা সংগ্রহ এবং ব্যবসা বাণিজ্যের ঘাটতি পূরণ সম্ভব নয়।

রংপুরের ডিসি মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, পরিস্থিতি বিবেচনায় সকাল ৬ টা থেকে সন্ধা ৭ টা পর্যন্ত আমরা কারফিউ শিথিল করেছি। দ্রুতই সব কিছু স্বাভাবিক হবে বলে আশাবাদি তিনি।

রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন জানান, রংপুর মহানগরীসহ আট জেলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যেই কারফিউ স্থায়ীভাবে তুলে নেয়া হবে। জনগন ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিবেচনায় শিথিল সময় ছাড়া অন্য সময়ে সবাইকে ঘরে থাকার আহবান জানান তিনি।

পুলিশ, বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, রংপুরে ১৬, ১৮ ও ১৯ জুলাইয়ের এর সংঘর্ষে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র পীরগঞ্জের বাবনপুরের আবু সাঈদ, অটো চালক পুর্ভ ঘাঘটপাড়ার মানিক মিয়া, জুম্মাপাড়ার কলা ব্যবসায়ি মেরাজুল হক মিরাজ, বৌরানী জুয়েলার্সের ম্যানেজার মুসলিম উদ্দিন মিলন, নিউ শালবন, আরসিসিআই মোড়ের রাজমিস্ত্রি সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, জুম্মাপাড়ার আব্দুল্লাহ তাহের, সিও বাজার এলাকার মোজাম্মেল হক মারা যায়। এছাড়াও হাসাপাতালে নথিভুক্ত না করেই লাশ নিয়ে যায় আতিকুর রহমান ও আরমান হোসেন নামের দুইজনের। এসব ঘটনায় আহত হয়েছে শতাধিক। এরমধ্যে ৫৭ জনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের সবাই রাবারবুলেট ও ছররাগুলিবিদ্ধ।

পুলিশ, বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, রংপুরে তিনদিনের সংর্ঘর্ষের সময় দুর্বৃত্তরা পুড়িয়ে দেয় তাজহাটা থানা ভবন, ডিবি ও অপরাধ কার্যালয়, নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িসহ বিভিন্ন পুলিশ বক্স, জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ কার্যালয়, প্রাণি ভবন, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগীয় অফিস, মুক্তিযোদ্ধা ভবন। র্যা ব-বিজিবি, পুলিশের ৭ টি গাড়ি, ৩ টি ট্রাকসহ ২৫ টিরও বেশি গাড়ি এবং ১২০ টিরও বেশি মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।

তাজহাট থানা থেকে মোটরসাইকেল ও রিকশাসহ, কম্পিউটার মামলার আলামত, ফোর্সের ট্রাংক ভেঙ্গে সবকিছু লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এই সময়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান ফটক, সিসিটিভি ক্যামেরা, ২ টি ময়লারগাড়ি,মডার্ন মোড়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য অর্জন ও শাপলা চত্তরের রেলিং, টাউন হলে মুজিববর্ষের ডিসপ্লে, সোনালী ব্যাংক, সমবায় ভবন, সাদমান হোটেল, জেলা পরিষদ কমিউনিটি মার্কেট, সিটি করপোরেশনের তিনটি প্রচার এলইডি টিভিসহ নগরীর বিভিন্নস্থানে ট্রাফিট পুলিশের বিভিন্ন রোড ডিভাইডার, ধাপ পুলিশ ফাঁড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা। কারাগার, জেলা পুলিশ লাইন্স, ট্রাফিক অফিস, সার্কিট হাউজ, ডিসি এসপির বাংলোয় হামলার চেস্টা করে দুর্বৃত্তরা। ভাংচুর ও লুটের চেস্টা হয় সোনালী ব্যাংক, বুথ, অজর্ন ভাষ্কর্যসহ বিভিন্ন স্থাপনায়।

এসব ঘটনায় অন্তত শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। চুড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহনের কথা বলেছেন মহানগর পুলিশ কমিশনার। রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো: মনিরুজ্জামান জানান, এরমধ্যে এসব ঘটনায় ১২ টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় শুক্রবার সকাল পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ১৩৫ জনকে। অপরাধে সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। তদন্ত চলছে অর্থের জোগানদাতা ও মদদদাতাদের ব্যাপারে।

এরমধ্যে দুস্কৃতিকারীদের চিহ্নিত করা গেছে। নিরপরাধ কাউকেই গ্রেফতার করা হবে না। তিনি নগরবাসির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, এই ঘটনার সময় এবং ঘটনার পরে নগরবাসির সহযোগিতায় পুলিশ কৃতজ্ঞ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে নগরবাসির সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

/আরআইএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply