আন্দোলন-সংঘাতে চাপা পড়ে আছে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান

|

আড়াই মাসেও, এমপি আনার হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রমাণ করতে পারেনি খুনের বিষয়টিও। পিছিয়েছে তদন্ত প্রতিবেদন। অন্যদিকে, বেনজীর আহমেদ বা মতিউর রহমান-কারও দুর্নীতির তদন্তই দেখেনি আলোর মুখ। তারওপর, আন্দোলন-সংঘাতে চাপা পড়ে আছে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান। বিশিষ্টজনদের মন্তব্য, অতীতেও ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে হয়নি কারো বিচার। এবারও, রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনার খুনের পর এখনো মরোদেহ মিলেনি বলে দাবি পুলিশের। তদন্ত নামে বাংলাদেশ ও ভারতের গোয়েন্দারা। তাদের দাবি, স্বর্ণ চোরাচালানের দ্বন্দ্বে প্রভাবশালীদের দ্বারাই খুন হন আনার। পরে আবার সামনে আনা হয় স্থানীয় রাজনৈতিক কোন্দল। বাস্তবতা হলো, এখনও তদন্ত প্রতিবেদন দেয়নি পুলিশ।

অন্যদিকে, কলকাতায় উদ্ধার হওয়া লাশের খণ্ডিত অংশের সাথে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য এখনো নমুনা নেয়া হয়নি এমপি আনারের মেয়ে ডরিনের। পরিবারের সদস্যদের কলকাতায় ডাকা হলেও নানা জটিলতায় এখনো যাওয়া হয়নি সেখানে।

ডিএমপি অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ(ডিবি) বলেছেন, মামলাটি ভারতের সিআইডি-তে আছে, তাই বাংলাদেশ ডিবি-র এখানে কোন পার্ট নেই। সবকিছু মিলিয়ে, ভারতের সাথে যোগাযোগ করছে বাংলাদেশ ডিবি।

অন্যদিকে, প্রভাবশালী সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের অনিয়ম-দুর্নীতির খবর চাউর হয় গণমাধ্যমে। কারি কারি সম্পত্তির তথ্য-উপাত্ত সামনে আসে। মনে হচ্ছিলো অনেকটা বাধ্য হয়েই তদন্তে নামে দুদক। জব্দ করা হয় বেশ কিছু সম্পত্তি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকে ডাকা হলেও সেটির তোয়াক্কাই করেনি বেনজীর ও তার পরিবার।

নিজস্ব সক্ষমতায় যাদের অনিয়ম তদন্তের কথা, তাদের ব্যর্থতার প্রতীক হয়ে উঠেছে কোরবানির এক ছাগল। সামনে আসে আরেক প্রভাবশালী কর্মকর্তা মতিউর রহমান। এনবিআর এর মধ্যম সারির অফিসার হলেও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিদের সাথে ওঠা বসা ছিলো তার। সম্পত্তির ফিরিস্তি দেখে দেশবাসীর চক্ষু চরকগাছা। ধারণা করা হচ্ছে, প্রশাসনের নাকের ডগা থেকে তিনিও পালিয়েছেন দেশ ছেড়ে।

সাবেক সচিব মো আউয়াল মজুমদার বলেছেন, ‘এখন আমি মনে করি, বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা দুর্নীতি এবং পারস্পরিক অনাস্থা। কিছু লোক আছে, যারা মনে করে টাকাই সবকিছু। তাছাড়াও সরকারের গাফিলতি নাই এমনটি আমি বলবো না। এখন প্রশ্ন সরকারের গাফিলতি কীভাবে? প্রথম কারণই নিয়োগ দেয়ার সময়।’

দুর্নীতির অভিযোগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক সময়ের আস্থাভাজন জেনারেল আজিজ আহমেদকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের কোন সেনাপ্রধান এই প্রথম পড়েন এমন নিষেধাজ্ঞায়। এ নিয়েও সরকার বা দুদকের কোন ভূমিকা নেই।

এছাড়াও অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাস’সহ অনেকের অনিয়মের অভিযোগও আসে দুদকে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা না হলে আর্থসামাজিক অবস্থা আরো ভয়াবহ হবে। নিরুৎসাহিত হবেন সৎ জীবন যাপন করা কর্মকর্তা কর্মচারীরা।

সাবেক সচিব মো আউয়াল মজুমদার আরও বলেন, যদি নিরপেক্ষভাবে নিয়োগ দেয়া না হয়, তাহলে হিতের বিপরীত হবে। এতে দুর্নীতিবাজেরা আরও আশকারা পাবে। দুর্নীতিবাজেরা ভাববে, কিছুদিন হইহুল্লোড় পর সবকিছু তো থেমেই যায়।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বেসিক ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের আলোচিত ঘটনাগুলো বছরের পর বছর অব্যাহত থেকেছে। মুখে কিংবা কাগজে-কলমে লিখে যে কথাগুলো দেশবাসীর কাছে উপস্থাপন করি, সেগুলো ফাঁকা বলি। বাস্তবে যেটা করছি, দুর্নীতিকে সহায়ক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেয়া হচ্ছে।

এছাড়াও সবখানে এখনো আলোচনায় কোটা আন্দোলনের পরববর্তী প্রভাব । রাজপথের আন্দোলনে গণমাধ্যম থেকে অনেকটা হারিয়ে গেছে দুর্নীতির সব খবর। ঝিমিয়ে পড়েছে তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোও।

/এআই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply