আন্দোলনকারীদের গুলি-ইটপাটকেলে আবু সাঈদের মৃত্যু দাবি করে পুলিশের এফআইআর

|

সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর:

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে গেলো ১৬ জুলাই দুপুরে গুলিবিদ্ধ হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। পরে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

সেদিন গণমাধ্যমকে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক মো. ইউনুস আলী বলেছিলেন, সাঈদকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। শরীরে ছিল রাবার বুলেটের চিহ্ন।

সেদিনের ঘটনার ভিডিও ফুটেজও আছে যমুনা টেলিভিশনের হাতে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ঘুরছে সে ফুটেজ। যাতে দেখা যায়, আবু সাঈদকে খুব কাছ থেকে গুলি ছুড়ছেন এক পুলিশ সদস্য। সেখানেই লুটিয়ে পড়েন সাঈদ। এরপর তাকে টেনে নিয়ে যান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, রংপুরে গুলিতে এক শিক্ষার্থী মারা গেছে।

তবে, আলোচনা শুরু হয়েছে আবু সাঈদের হত্যার ঘটনার এফআইআর নিয়ে। যেখানে বলা হচ্ছে, আন্দোলনকারীদের ছোড়া গুলি ও ইটপাটকেলের আঘাতে পড়ে যান ওই শিক্ষার্থী। পরে তিনি মারা যান। তবে, পুলিশের গুলির কথা উল্লেখ নেই।

কেন এফআইআর-এ নিজেদের গুলি ছোড়ার কথা বেমালুম চেপে গেলো পুলিশ? এমন প্রশ্নের উত্তরে রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান বলছেন, এফআইআর চূড়ান্ত কিছু নয়। পেশাদার তদন্তের পর বেরিয়ে আসবে সবকিছু।

তিনি বলেন, ঘটনার পর বিভিন্ন এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ফুটেজ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দিও নেয়া হচ্ছে। এফআইআর সুরতহাল প্রতিবেদনের ওপর করা হয়। সেজন্য কখনো এটি ভুল থাকতে পারে। তাছাড়া এতে সব তথ্য থাকেও না। এটি তদন্তের প্রথম ডকুমেন্টস। এফআইআর যাই হোক তদন্ত পেশাদারিত্বের সাথেই করবেন বলে জানান তিনি।

জানা যায়, আবু সাঈদ নিহতের ঘটনায় তাজহাট থানায় এসআই বিভূতিভূষণ বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। কয়েক দিন চাপা থাকলেও প্রকাশ্যে এসেছে মামলার কপি। এজাহারে লেখা হয়, ‘বিভিন্ন দিক থেকে আন্দোলনকারীদের ছোড়া গুলি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে একজন শিক্ষার্থীকে পড়ে যেতে দেখা যায়। তখন তার সহপাঠীরা তাকে ধরাধরি করে জরুরি চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

আবু সাঈদের মৃত্যু নিয়ে ‍পুলিশের মামলার বিবরণ নিয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা। এ নিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, আবু সাঈদকে প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশ গুলি করেছে এবং সেই গুলিতে সে মারা গেছে। গুলি করে হত্যার পরও যদি ঘটনাটিকে অস্বীকার করা ও ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হয়, তাহলে পুলিশের প্রতি মানুষের মনোভাব পরিবর্তন হবে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে হওয়া সংঘাত-সংঘর্ষে রংপুরে ৭ জন নিহত হন। এছাড়া আহত হয়েছে শতাধিক। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ সহিংসতার ঘটনায় শনিবার পর্যন্ত মামলা হয়েছে ১২টি। আর গ্রেফতার করা হয়েছে দুই শতাধিক।

/এনকে


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply