শহর সেজেছে গ্রাফিতির মোড়কে। দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে মিছিলের গান অথবা স্লোগান। রঙমশাল থেকে ঠিকরে বেরুচ্ছে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের কথা। হত্যার বিচার বা ক্ষোভের কথা। শিক্ষার্থীদের তুলির আঁচড় যেন হয়ে উঠেছে পায়রার ডানা। সেই ডানা ঝাপটাচ্ছে আর রঙ ছড়াচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
আজ ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিবাদী গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখন কর্মসূচি। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের হত্যার প্রতিবাদ, গ্রেফতার-গুম হওয়া ব্যক্তিদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দিতে এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিতে আজ ছিল তাদের এই কর্মসূচি।
জহির রায়হান ‘আরেক ফাল্গুন’ নামে একটি বই লিখেছিলেন। বইটি ছিল বাংলা সাহিত্যে ভাষা আন্দোলন ভিত্তিক প্রথম উপন্যাস। সেই বইয়ে বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কথা উঠে এসেছিল। সেখানে গ্রেফতারকৃত ছাত্রদের সংখ্যা দেখে ডেপুটি জেলার একপর্যায়ে বিরক্তি নিয়ে বলেছিল– ‘এত ছেলে জায়গা দেব কোথায়?’ প্রত্যুত্তরে জেলে থাকা একজন বলেছিল– ‘এতেই ঘাবড়ে গেলেন নাকি? আসছে ফাল্গুনে আমরা কিন্তু দ্বিগুণ হবো।’
আজ শহরের দেয়ালে দেয়ালে দেখা গেছে হরেক রকম লিখন। তার মধ্যে অন্যতম ছিল ‘আরেক ফাল্গুন’ বইয়ের এই বিখ্যাত সংলাপটি। কিছু গ্রাফিতিতে আলাদা করে জুলাই মাসকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ‘শোকের মাস জুলাই’, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো জুলাই’সহ বহু বাক্য দেয়াল লিখনে ভেসে উঠেছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বহু শিক্ষার্থীর প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। তাদের মধ্যে একজন নিহত শিক্ষার্থীর মা আহাজারি করে বলেছিলেন, ‘হামার বেটাক মারলু কেনে?’ সেই হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের দেয়াললিখন ছিল– ‘হামার বেটাক মারলু কেনে? বিচার চাই বিচার চাই।’
শাবিপ্রবির প্রধান ফটকে শিক্ষার্থীদের আরেকটি গ্রাফিতি সবার নজর কেড়েছে। সেখানে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাইদের বুক পেতে দেয়া একটি প্রতিকৃতি ছিল। পাশে লেখা ছিল– ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর।’ আরও কিছু গ্রাফিতি দেখা গেছে। সেখানে লেখা ছিল– ‘দেশ স্বাধীন হলে আমরা আবার ছাদে উঠব’, ‘আমি মেট্রোরেল হতে চেয়েছিলাম, খোদা আমাকে ছাত্র বানালো’ প্রভৃতি।
ফেনীতেও দেখা গেছে এমন চিত্র। শিক্ষার্থীরা দেয়াল লিখনে লিখেছে– ‘তোমার ভয় নেই মা, আমরা প্রতিবাদ করতে জানি।’ গ্রাফিতির প্রদর্শনী দেখা গেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়েও। রাজধানী ঢাকার পলাশীর মোড়েও হরেক রকম গ্রাফিতির দেখা মেলে। সেখানে অঙ্কিত ছিল– ‘যুদ্ধ আমি চাই না, তবু রক্ত কেন ঝরে?’, ‘ছাত্রদের ওপর হামলা কেন?’ প্রভৃতি গ্রাফিতি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন নিজের ফেসবুক পেজে এ প্রসঙ্গে একটি কাভার ফটো পোস্ট করেন। সৌহাত রাশেদিন সৌখিন নামের একজনকে উদ্ধৃত করে ক্যাপশনটি দেয়া ছিল। সেখানে লেখা আছে– ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আজকের কর্মসূচি হিসেবে আমরা কিছু সমমনা কার্টুনিস্ট ও চারুকলার শিক্ষার্থীরা পলাশীর মোড়ে জড়ো হই। বুয়েটের দেয়ালে শান্তিপূর্ণভাবে দেয়াল লিখন করতে থাকি। একপর্যায়ে পুলিশ এসে আমাদের কর্মসূচিতে বাধা দেয় এবং আটক করার চেষ্টা করে। তারা আমাদের রংতুলি জব্দ করে এবং কিছু কিছু দেয়াল লিখন মুছে দেয়।
ক্যাপশনে আরও লেখা হয়েছে– এরপর আমি ও আমার সহযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে ফিরে আসি। আমরা সবাই ঠিকঠাক আছি। বেশি ছবি তুলতে পারিনি। আরও অনেক লেখা আছে দেয়ালে। কেউ ওই রাস্তায় গেলে দেয়াল লিখনের ছবিগুলো তুলে পাঠানোর অনুরোধ রইলো।
/এএম
Leave a reply