মিশুক নজিব ⚫
শুক্রবার বিকেল; ঈষৎ মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। যাচ্ছিলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে যেতেই একদল স্বেচ্ছাসেবীর বাধা। তারা বলছিলেন, ‘শাহবাগের দিকে যাওয়া যাবে না। গাড়ি ডানে ঘুরিয়ে গন্তব্যে যান।’
পেছন থেকে এবার দুইজন তরুণ এগিয়ে এলেন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘ওহ যমুনার গাড়ি… কই যাবেন?’ ঢাকা মেডিকেল বলতেই দুই তরুণের একজন বললেন, ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে তো ওখানে যাওয়া যাবে না। শাহবাগ মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ চলছে। বায়ে দিয়ে রমনা হয়ে গেলে ভালো হয়।
আরেক তরুণ ইতস্তত কণ্ঠে বলে উঠলেন, ‘আর সামনে দিয়ে গেলে বায়ে গিয়ে মৎস্য ভবন দিয়ে যেতে পারেন।’ গাড়ি সামনের দিকেই ছুটবে, তখন তারা বললেন, যমুনাকে ধন্যবাদ। প্লিজ, নিকোল আপাকে আমাদের ধন্যবাদ দিয়েন।
যমুনা টেলিভিশনের প্রতি কেন তাদের ভালোবাসা, পাঠক নিশ্চয় আঁচ করতে পেরেছেন। খুলে বলার আগে একটু পরিসংখ্যানের দিকে তাকাই। গোটা বিশ্বে সংবাদভিত্তিক ইউটিউব চ্যানেলে আবারও বিশ্বসেরা বাংলাদেশের যমুনা টেলিভিশন। আজ শনিবার (১০ আগস্ট) সকালেই এলো সেই খবর। বাংলাদেশের মানুষের জন্য নিশ্চয়ই আনন্দের খবর।
বিশ্ব চূড়ায় ওঠার প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সংবাদভিত্তিক এ টেলিভিশন চ্যানেল পেছনে ফেলেছে বিবিসি, আল জাজিরা, সিএনএন, ফক্স নিউজ, এনবিসি, ফোর্বস ব্রেকিং নিউজ ও এবিসির মতো চ্যানেলকে। যমুনা টেলিভিশনের এগিয়ে যাওয়ার এমন খবর বছরের শুরু থেকেই ছিল। চব্বিশের প্রাক্কালেই মার্কিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জরিপ সংস্থা সোশ্যাল ব্লেডের র্যাঙ্কিংয়ে ‘নিউজ অ্যান্ড পলিটিক্স’ ক্যাটাগরিতে ছয়ে উঠে আসে যমুনা। তারপর বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দিন জানা যায়, আরও দুই ধাপ এগিয়েছে। ১৩ জানুয়ারি আরও দুই ধাপ এগিয়ে দ্বিতীয় স্থানে জায়গা করে নেয় যমুনা টেলিভিশন। তারপর ২০ জানুয়ারি জানা যায়, প্রথমবারের মতো বিশ্ব সেরার তকমা জুটিয়েছে যমুনা।
কেবল চব্বিশে নয়, আগের বছরগুলোতেও এই র্যাঙ্কিংয়ে সেরা পাঁচ, সেরা দশে একাধিকবার জায়গা করে নিয়েছিল যমুনা টেলিভিশন। আর চব্বিশে এসে বিশ্ব মঞ্চে একাধিকবার নিজের জাত চেনালো বাংলাদেশের এই গণমাধ্যম।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলন ১ দফায় রূপ নিলে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। আন্দোলনজুড়ে দেশের মানুষ তো বটেই, সারা বিশ্বের নজর ছিল ঢাকার প্রতি। সংবাদ পেতে বাংলা ভাষাভাষীদের বড় অংশের নির্ভরতা ছিল বাংলা ভাষার সংবাদমাধ্যমে। একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও এ সময় বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের তথ্য ব্যবহার করে। আন্দোলনের খবর প্রকাশে যমুনা নিউজ পেশাদারীত্বের পরিচয় দেয়। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে এই গণমাধ্যম ছিল অবিচল। বাংলা ব্লকেড থেকে শুরু করে রংপুরে আবু সাঈদ হত্যার পর শিক্ষার্থীদের শাটডাউন ও একদফা কর্মসূচি, শেখ হাসিনার পতন, খালেদা জিয়ার মুক্তি, বিএনপির সমাবেশ, অন্তর্বর্তী সরকার গঠন— প্রতিটি সংবাদ প্রকাশে আবেগ নয়, সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতা মেনে মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছে টিম যমুনা। আর এরই প্রতিফলন ঘটলো সোশ্যাল ব্লেডের র্যাঙ্কিংয়ে। আর জনগণও প্রতিদানে ভালোবাসা দিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে যমুনার বন্দনা। নগরীর দেয়ালে দেয়ালে রঙ তুলিতে শোভা পাচ্ছে যমুনার মাইক্রোফোন, লোগো, ওয়েবসাইটের ঠিকানা।
কেবল কী সংবাদ প্রকাশে? যমুনা টেলিভিশনের ‘রাজনীতি’ টকশোও আগের চেয়ে বেশি সাড়া পেয়েছে এ সময়। দেশের মানুষের চোখে এখনও লেগে আছে, রাজনীতির উপস্থাপক ও যমুনা টেলিভিশনের অ্যাসাইনমেন্ট অ্যান্ড প্ল্যানিং এডিটর রোকসানা আনজুমান নিকোলের উপস্থাপনা। আগস্টের প্রথম দিনেই রাজনীতি টকশোতে শুরুতেই দুইজন অতিথিকে তিনি প্রশ্ন করেন— ‘পানি লাগবে, আপনাদের পানি লাগবে?’ এরপর একজন আলোচক উত্তর দেন, পানির বোতল আছে। তখন উপস্থাপক বলে উঠেন, ‘হ্যাঁ, মুগ্ধ আমাদের জন্য অনেকগুলো পানির বোতল রেখে গিয়েছে।’ এরপর তার গলা ভারি হয়ে আসে। চোখে জল আসে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ ছড়িয়ে পড়ে এই দৃশ্য। যা বেশ নাড়া দেয় মানুষের মনে। তাই তো রাজধানীর সড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শিক্ষার্থী, তরুণরা তাদের নিকোল আপাকে মনে রেখেছেন। ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। টিম যমুনা সবসময় চেষ্টা করে, পেশাদারীত্ব বজায় রাখতে। সংকটকালীন তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। দর্শক, পাঠক নিশ্চয় তা বুঝতে পেরেছেন। তাই তো তাদের আস্থার ওপর ভর করে গত রোববার (৪ আগস্ট) যমুনা টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার ২ কোটিতে পৌঁছায়। যা এখন ২ কোটি ১৭ লাখ। দ্রুতই বেড়ে চলছে সাবস্ক্রাইবার। ফেসবুকেও ছুটছে যমুনার জয়রথ।
যমুনা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফাহিম আহমেদ এমন অর্জনের প্রতিক্রিয়ায় টেলিভিশন চ্যানেলের দর্শক ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তিনি বললেন, মানুষের খবর জানতে চাওয়ার যে আগ্রহ, আমরা তা সঠিকভাবে দেয়ার চেষ্টা করি। পাশাপাশি বৈচিত্র্যের দিকেও আমরা গুরুত্ব দিয়ে থাকি। বস্তুনিষ্ঠতা টিম যমুনার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ফেরার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এক শিক্ষার্থীর ডাক— ভালোবাসার যমুনা, কোনো অনিয়ম করা যাবে না।
দর্শক, পাঠক, জনতার ভালোবাসার পাশাপাশি এই শিক্ষার্থীর এমন বার্তা আমাদের মনে করিয়ে দেয়— পথ হারানো যাবে না। নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়েই পথে থাকতে হবে। হোক না সে পথ যতই বন্ধুর, যমুনাকে যেতে হবে বহুদূর।
Leave a reply