চাকরি ছেড়ে অতিরিক্ত ডিআইজি ফেসবুকে লিখলেন, ‘আজ আমি মুক্ত বিহঙ্গ’

|

ছবি: ফেসবুক থেকে নেয়া

পুলিশের চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসরের আবেদন করেছেন অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মনিরুজ্জামান। রোববার (১১ আগস্ট) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব বরাবর চাকরি থেকে অবসরের আবেদন করেন।

মো. মনিরুজ্জামান ট্যুরিস্ট পুলিশের খুলনা-বরিশাল বিভাগে অতিরিক্ত ডিআইজি পদে কর্মরত ছিলেন। অবসরের আবেদনে তিনি লিখেছেন, ‘বাংলার মানুষের ঘৃণার পাত্র হিসেবে আমি পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করতে ইচ্ছুক নই।’

অতিরিক্ত ডিআইজি লিখেছেন, ‘৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এর আগের কয়েক দিন ও বিগত ১০ বছরে বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের অবৈধ আদেশ পালন করতে হয়েছে। এই আদেশ পালন করতে গিয়ে অবৈধ সরকারকে রক্ষার নামে নিজেদের ক্ষমতা ও অবৈধ অর্থ উপার্জনের পথকে দীর্ঘায়িত করার মানসে পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের হিংস্র ও বর্বর আদেশে শিশু-কিশোরসহ বহু মানুষকে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা হত্যা করেছেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী বর্তমানে গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে।’

স্বেচ্ছায় অবসরের আবেদনে পুলিশের এই কর্মকর্তা লিখেছেন, ‘আমি বুঝতে পারছি যে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে আর চাকরি করা আমার জন্য সমীচীন নয়। এ কারণে ১১ আগস্ট আমি পুলিশে আমার পদ থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করলাম।’

আবেদনের শেষে মো. মনিরুজ্জামান লিখেছেন, ‘বাংলার মানুষের ঘৃণার পাত্র হিসেবে আমি পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করতে ইচ্ছুক নই। আমি চাকরি হতে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করলাম। অতএব আমার এ পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আপনার সদয় মর্জি কামনা করছি।’

এদিকে, অবসরের আবেদনের একটি ছবি নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেছেন ওই কর্মকর্তা। ছবির সাথে বড় একটি ক্যাপশনও লেখেন মনিরুজ্জামান।

এতে তিনি লেখেন,আলহামদুলিল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ! বিগত ১৭ বছরের পরাধীন দাস থেকে আজকে আমার মহান প্রভু স্বাধীন মানুষে পরিণত করলেন। মহান আল্লাহ আমাকে বিবেক দিয়েছেন বলেই বিসিএস পুলিশ অফিসারদের মধ্যে প্রথম নিরস্ত্র শিশু কিশোর ছাত্র জনতাকে গুলি করে হত্যাকারী বিগত সরকার টিকে থাকা অবস্থাতেই আমি চাকুরি ও মৃত্যুর ভয়কে উপেক্ষা করে সরকারকে পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম গণহত্যাকারী হিসাবে অভিহিত করেছিলাম, যা প্রায় এক কোটি মানুষ দেখেছে শুনেছে। এর মধ্যে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ সন্দেহ প্রকাশ করেছে, ভেবেছে সরকারের নিশ্চিত পতন হবে বুঝতে পেরে আমি পরবর্তী সরকারের নিকট থেকে পদোন্নতিসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নেয়ার জন্যই এটা করেছি। আমি মুনাফিক বা ভণ্ড নই। সরকারি অর্থ গরীবের দেয়া ট্যাক্স থেকে আসে তা আমাকে আল্লাহ বুঝিয়েছেন, এ দরিদ্র দেশে আমার জন্য বরাদ্দ কোটি টাকার গাড়ি দুই বডিগার্ড ও দুই ড্রাইভার, অফিসের অর্ডারলি ইত্যাদিসহ মোটা অঙ্কের বেতন ভাতা, সোর্স মানি নেয়া অন্যায় কাজ বলে আমার বরাবরই মনে হয়েছে। তারপরেও আমাকে এসব সুবিধা নিতে হয়েছে কারণ আমি একটা বিবেকহীন আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে ছিলাম। আজ আমি মুক্ত বিহঙ্গ! আহ কী শান্তি!

প্রসঙ্গত, গত ১ আগস্ট নিজের ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্টাটাস দেন এই পুলিশের কর্মকর্তা। ওই পোস্টে তিনি সেসময় কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে পুলিশের গুলিতে অসংখ্য মানুষ মৃত্যুর সমালোচনা করেন। সেসময় তিনি লেখেন, ‘এ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসাবে নিজেকে বড় অপরাধী মনে হচ্ছে, লজ্জিত ও অপমানিত বোধ করছি। এ বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের জন্য তীব্র ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করছি,

/এনকে


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply