আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর চলছে পদত্যাগের হিড়িক। বিচার বিভাগ থেকে সিভিল প্রশাসন, পুলিশ, সেবা খাত- সবখানেই শীর্ষপদে নতুন মুখ। এ অবস্থায় কেবল ব্যক্তি নয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নীতি ও সংবিধান সংস্কারের তাগিদ দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। সেইসাথে সচিবালয় থেকে মাঠপর্যায়ে বিশেষ কোনো দল দখলে নিচ্ছে – এমন ধারণা যাতে তৈরি না হয়, তা নিয়েও সতর্ক করেন তারা।
জানা যায়, শনিবার বিক্ষোভ করে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে জড়ো হয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে। সন্ধ্যার মধ্যেই পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি। তার পরপরই পদত্যাগ করেন আপিল বিভাগের আরও পাঁচ বিচারপতি। তারও আগে পদত্যাগ করেছেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা এম আমিন উদ্দিন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল হয় প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবের। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ভয়ঙ্করভাবে প্রশ্নবদ্ধি হয়েছে পুলিশ। চুক্তিতে থাকা পুলিশ প্রধানের নিয়োগ বাতিল করে অন্তর্বতীকালীন সরকার। সরানো হয় এলিট ফোর্স র্যাবের মহাপরিচালক ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে।
বহু বছর সংকটে যাচ্ছে অর্থনীতি। এজন্য অভিযোগের তীর কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর রাজস্ব বোর্ডের দিকে। পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। পুঁজিবাজার নিয়ে যে অস্থিরতা তাতে ভুক্তভোগী লাখো বিনিয়োগকারী। অন্তর্বতীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর পদ হারিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির আলোচিত চেয়ারম্যান।
বরাবরের মত এবারো শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এই আন্দোলনের ফলে নতুন সরকার গঠনের পর পদত্যাগ করেছেন ঢাকাসহ বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ২০১১ সাল থেকে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে থাকা লিয়াকত আলী লাকীও অবশেষে পদত্যাগ করেছেন। তবে সোমবার পর্যন্ত পদ ছাড়েননি ১৫ বছর ধরে ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান।
কর্মকর্তাদের এমন গণপদত্যাগের বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার করতে হবে। আইনকানুন-বিধি বিধানের সংস্কার করতে হবে। নিয়মনীতির পরিবর্তন আনতে হবে। আমাদের সংবিধানের সংস্কার করতে হবে। এসব অতি জরুরি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, একটি পক্ষ ধরে নিয়েছে তাদের সময় শেষ হয়ে এসেছে। স্থানীয় প্রশাসন থেকে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা সবজায়গায় এ অবস্থা। তারা ভেবেছে নতুন সরকার আসায় টিকে থাকা কঠিন হবে। এটি কিন্তু ভয়াবহ ইঙ্গিত দেয়। এর পরিণতি কখনোই ভালো হবে না।
/এনকে
Leave a reply