‘এই শহরে পাখিদের ঘুম ভাঙ্গে গুলির শব্দে,
এই শহরে ছাত্র পড়ে থাকে মগজ ভর্তি বারুদের গন্ধে’
২৯ জুলাই ‘ঋষি কাব্য’ নামক ফেসবুক পেইজে সবশেষ এই পোস্ট করেন কুমিল্লার শিক্ষার্থী কাজী আশরাফ আহমেদ রিয়াজ। এরপর গুলি কেন, আর কোনো শব্দেই ঘুম ভাঙেনি তার। ৩০ জুলাই রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বাসা থেকে রিয়াজের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া ‘ঋষি কাব্য’র কথা হয়তো অনেকেই ভুলে গেছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হওয়া নির্যাতনের বহুচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করা হতো তার ফেসবুক পেইজ থেকে।
তার মৃত্যু নিয়েও অনেক গুজব ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অনেকেই বলেছেন আত্মহত্যা, আমার অনেকেই বলেছেন হার্ট এট্যাক। তবে তার কোনোটিই সঠিক নয়।
‘ঋষি কাব্য’ রিয়াজের মরদেহ উদ্ধার হলেও তার স্মৃতি ভুলতে পারছে না স্বজন-এলাকাবাসী। মৃত্যু নিয়েও তাদের মধ্যে রয়েছে চাপা ক্ষোভ ও ধোয়াশা।
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের বাগড়া গ্রামের ব্যবসায়ী কাজী বাবুল ও রোকেয়া আক্তার দম্পতির বড় ছেলে রিয়াজ। ঢাকা কমার্স কলেজে অধ্যায়নের পাশাপাশি পাঠশালা ইউনিভার্সিটিতে ফটোগ্রাফি নিয়ে লেখাপড়া করতেন।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকেই রাজপথে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব ছিলেন এই শিক্ষার্থী । সরকারবিরোধী আন্দোলনের তকমা থাকায় ১ আগস্ট অনেকটা নিভৃতেই পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় রিয়াজের মরদেহ।
রিয়াজের মা রোকেয়া আক্তার যমুনা টিভিকে বলেন, ছেলে বলতো, ‘আম্মু বের হলেই ওরা আমাকে মেরে ফেলবে’। আমার ছেলে প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার ছিল। বহু হুমকি ধামকি পেলেও সে তার কাজ করে গেছে, থামেনি। বিভিন্নভাবে আন্দোলনে অংশ নিছে।
আন্দোলনের নানা মূহুর্ত ক্যমেরাবন্দি করেছিলেন রিয়াজ। বাসা থেকে মরদেহ উদ্ধার হওয়ায় রিয়াজের মৃত্যু নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা গুঞ্জন, কাটেনি ধোয়াশা।
এলাকাবাসী বলছে, দেশের পরিস্থিতি অনেক খারাপ থাকায় তাকে চিকিৎসা দেয়া যায়নি। কিন্তু যারা গোসল করিয়েছে তারা রিয়াজের মুখে মারধরের চিহ্ন পেয়েছে। পিঠে একাধিক গুলির চিহ্ন পেয়েছে। ছাত্রদের সাথে আন্দোলনের পাশাপাশি ফটোগ্রাফির মাধ্যমে সাংবাদিকতার ভূমিকায়ও রিয়াজ বেশ সরব ছিল বলেও জানান তারা। অভিযোগ, হয়তো এজন্যই তাকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রিয়াজের মতো অকাতরে প্রাণ ঝরেছে আরও অনেকের। তাদের সবাইকে খুজে বের করে তালিকা তৈরির দাবি জানিয়েছে সাধারণ মানুষ ও এলাকাবাসী।
/এমএইচ
Leave a reply