ভয়ঙ্কর ১৯ জুলাইয়ে ঢামেকেই নেয়া হয় অসংখ্য মরদেহ ও ১২ শতাধিক গুলিবিদ্ধকে

|

আখলাকুস সাফা:

১৯ জুলাই, শুক্রবার। চতুর্দিকে গোলাগুলি-সংঘর্ষ। আন্দোলনে থাকা নিরস্ত্র মানুষগুলো গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়ে একের পর এক। রাজধানীর রামপুরা, বনশ্রী, প্রগতি সরণি, যাত্রাবাড়ী, শনিরআখরা, রায়েরবাগ, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, মহাখালী, উত্তরা; সবখানেই আন্দোলনকারীদের ওপর চলেছে নির্বিচার গুলি। হেলিকাপ্টার থেকেও চালানো হয় গুলি। দূর থেকে স্নাইপারের একেকটি গুলিতে মুহূর্তেই প্রাণ যায় আন্দোলনকারীদের।

আহতদের নিয়ে আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে ছুটোছুটি করতে থাকে সাধারণ মানুষ। ঘটনাস্থলেই যারা প্রাণ হারান, তাদের মরদেহ ঘিরে আরও উত্তপ্ত হয় পরিস্থিতি।

দুপুরের পর থেকে মরদেহগুলো নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে। আগে থেকেই সেখানে মরদেহ ছিল শ’খানেক। তার ওপর প্রতি ঘণ্টায় নতুন করে কত যে লাশ গিয়েছে, তার হিসাব এখনও করা যায়নি। ওই একদিনেই ঢামেকে নেয়া হয় ১২শ’র বেশি গুলিবিদ্ধ রোগীকে।

রামপুরায় আহতদের নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলেন হাসান মাহমুদ নামের এক তরুণ। নিজেও আহত হন আন্দোলনে। সেসময় কী দেখেছেন ঢাকা মেডিকেলে, এমন প্রশ্নের জবাবে যমুনা টেলিভিশনকে তিনি বলেন, মেডিকেলের ১০২ নম্বরের দুই নম্বর ওয়ার্ডের পাশে টয়লেটের দরজায় একটা রোগী পড়ে থাকতে দেখি প্রথমে। সে অজ্ঞাত, কেউ নেই। বোবা ছিল ছেলেটা তাকে দেখলাম গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে সেদিন হাজার হাজার মানুষের ছুটোছুটি আর শত লাশ দেখেছি, তার হিসেব নেই। সবাই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। কারও মুখে, মাথায়, কানে, বুকে পেটে শরীরের বিভিন্ন অংশে গুলি লেগে ছিদ্র হয়ে গেছে।

হাসান নিজেই সেদিন হাসপাতালের ভিডিও করেন ও ছবি তুলেছেন। দেখেছেন টানা রোগী সামলাতে চিকিৎসকদের ক্লান্তিও। বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, দুইটা মর্গের এমন অবস্থা হয় যে, লাশ রাখার জায়গা ছিল না। একটার ওপর আরেকটা করে লাশ রাখা ছিল। পরে সেখানেও জায়গা না থাকায় মরদেহ বাইরেও রাখা হয়।

ঢাকা মেডিকেলের মর্গে লাশের স্তুপ থেকে কেউ কেউ খুঁজে পেয়েছেন স্বজনের মরদেহ। কেউ এখনও খুঁজে পাচ্ছেন না প্রিয় সন্তানের দেহটা। সন্তানহারা এক বাবা বলেন, আন্দোলনের সময় ছেলে উত্তরা গিয়েছিল। এরপর থেকে আর তার খোঁজ পাচ্ছি না। কতো খোঁজ করেছি…. এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন এই বাবা। বিচার দেন আল্লাহর কাছে।

১৯ জুলাই ইমার্জেন্সি, আইসিইউ, সাধারণ ওয়ার্ড সবখানেই ছিল আন্দোলনে আহতরা। মেঝের পর সিঁড়িতে জায়গা হয় কারও। কারো গায়ে গুলি ১০টি, কারো ১৫ থেকে ২০টি। অথচ আইসিইউতে আগেই শেষ হয়ে যায় বেড।

বিষয়টি নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, একসাথে এত মানুষ সামাল দেয়া কঠিন ছিল। এই ধরনের পরিস্থিতি সামাল দেয়ার মতো অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। চিকিৎসক-নার্সরাও ভয় পাচ্ছিল। শত শত আহত মানুষকে চিকিৎসা দিতে হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেলসহ হাসপাতালে মৃত্যু এখনও থামেনি। লাইফ সাপোর্টে যারা আছেন তারা চরম শঙ্কায়। বিভিন্ন ইনফেকশনে আহতরা এখনও মৃত্যুঝুঁকিতে। চোখ হারিয়েছেন বহু মানুষ, স্থায়ী পঙ্গুত্ব বরণও করেছেন অনেকে।

/এনকে


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply