আগের দিনের ৫ উইকেটে ৩০৩ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহিম ১১১ এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ শূন্য রান নিয়ে খেলা শুরু করেন। প্রথম ইনিংসে চারশ, সাড়ে চারশ ছাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে ব্যাটিং শুরু করেন তারা। তাদের অসাধারণ নৈপুণ্যে দুর্দান্ত গতিতে সেই পথে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। দারুণ মেলবন্ধন গড়ে উঠে তাদের মধ্যে। কোনো উইকেট না দিয়ে প্রথম সেশনে ৬২ রান যোগ করেন তারা।
উইকেটশূন্য সেশনে বড় একটা ধাক্কা খায় জিম্বাবুয়ে। স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়েন দারুণ বোলিং করা টেন্ডাই চাতারা। টানা পঞ্চম ওভার করছিলেন তিনি। কিন্তু ওভার শেষ করতে পারেননি। তৃতীয় বল করার পর বাম পায়ের পেশিতে টান পান। স্ট্রেচারে দ্রুত মাঠের বাইরে নেয়া হয়। ম্যাচে তাকে পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। ওভারের বাকি চার বল করেন ডোনাল্ড তিরিপানো।
সাবলীল ব্যাটিংয়ে নির্বিঘ্নে কঠিনতম সেশনটা কাটিয়ে দেন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু লাঞ্চ বিরতির পর হঠাৎই কক্ষচ্যুত হন মাহমুদউল্লাহ। কাইল জার্ভিসের বলে রেজিস চাকাভাকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক (৩৬)। এর আগে মিস্টার পার্টনারের সঙ্গে ৭৩ রানের জুটি গড়েন তিনি।
খানিক বাদেই তার পথ অনুসরণ করেন আরিফুল হক। ফের শিকারী কাইল জার্ভিস। তার বলে ব্রায়ান চারির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন গেল টেস্টে বাংলাদেশের সেরা পারফরমার। তাকে শিকার বানানোর বদৌলতে ক্রিকেটের অভিজাত সংষ্করণে তৃতীয়বারের মতো ৫ উইকেট ঝুলিতে ভরেন জার্ভিস।
লাঞ্চ বিরতির পর মাহমুদউল্লাহ ও আরিফুল ফিরলেও একপ্রান্ত আগলে থেকে যান মুশফিক। পরে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে জুটি বাঁধেন তিনি। মিস্টার ডিপেন্ডেবলকেও দারুণ সঙ্গ দেন নতুন ব্যাটসম্যান। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে দারুণ মেলবন্ধন গড়ে ওঠে। ছোটান একের পর এক স্ট্রোকের ফুলঝুড়ি। তাতে উড়ন্ত গতিতে ছুটতে থাকে বাংলাদেশ।
দলকে রানের মহাসড়কে রাখার পথে অষ্টম উইকেটে জুটির রানের রেকর্ড গড়েন মুশফিক-মিরাজ। ২০১০ সালে চট্টগ্রামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অষ্টম উইকেটে নাঈম ইসলামের সঙ্গে ১১৩ রানের জুটি গড়েন মুশি। মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে সেই রান ছাড়িয়ে যান তিনি।
শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেটে ৫২২ রানের পাহাড় গড়ে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। মিরাজ ৬৮ ও ২১৯ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন মুশফিক। এ পথে দারুণ এক বিশ্বরেকর্ড গড়েন মিস্টার পার্টনার। বিশ্বের প্রথম উইকেটকিপার- ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে দুইবার দ্বিশতক করার কীর্তি গড়েন তিনি।
এর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০১৩ সালে গলে কাঁটায় ২০০ রান করেন এ নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান। সেটিও ছিল দেশের টেস্ট ইতিহাসে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি আছে কুমার সাঙ্গাকারা, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, মহেন্দ্র সিং ধোনিসহ সব কিংবদন্তি উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যাদের। তবে দুইবার করে নেয় কারও।
এদিন বাংলাদেশ ক্রিকেটেও অনন্য নজির গড়েন মুশফিক। দেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে দুইবার ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানোর রেকর্ড গড়েন তিনি। টাইগারদের হয়ে ক্রিকেটের আদি ফরম্যাটে দ্বিশতক আছে কেবল দুজনের-সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের।
টিম বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি ছিল ছিল সাকিবের, ২১৭। ২০১৭ সালে ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এ ইতিহাস গড়েন তিনি। আর ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনায় ২০৬ রানের অনিন্দ্যসুন্দর ইনিংস খেলেন তামিম। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ও ড্যাশিং ওপেনারকেও ছাড়িয়ে গেছেন মুশফিক। এখন এ ফরম্যাটে টাইগারদের সর্বোচ্চ রান স্কোরার তিনি।
Leave a reply