বাউফলে সরকারি টাকায় খাল দখলের মহোৎসব

|

রইসুল ইসলাম ইমন, বাউফল করেসপনডেন্ট:

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কাশিপুর খালটি শতবর্ষী। দখল ও দূষণে খালটি এখন মৃত প্রায়। তবে খাল খননে দীর্ঘদিনেও নেয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। উল্টো চলছে ভরাটের তোরজোর। কাশিপুর খেয়াঘাট মাছ বাজারের টেকসই উন্নয়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এজন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা। কোনো নিয়মনীতি অনুসরণ না করেই বরাদ্দের টাকায় বালু দিয়ে খালের একটি অংশ ইতোমধ্যে ভরাট করা হয়েছে।

বাউফল উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের ‘কাবিটা’ প্রকল্পের আওতায় কাশিপুর খেয়াঘাট সংলগ্ন মাছ বাজারের টেকসই উন্নয়ন করার নামে ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। সেই টাকায় বাজারের টেকসই উন্নয়নের নামে খালের মধ্যে গাছের খুঁটি দিয়ে পাইলিং করে বালু ফেলে খালের একটি অংশ ভরাট করা হয়েছে।

বরাদ্দকৃত অর্থ কী কাজে ব্যয় হলো জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাজিব বিশ্বাস বলেন, বরাদ্দের টাকা দিয়ে বালু ও মাটি দ্বারা ভরাটের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্ষমতাসীনদের দখল ও পানি প্রবাহ কমায় সৃষ্ট দূষণে খালটি এখন মৃত প্রায়। মাছ বাজার স্থানান্তরের জন্য বেছে নেয়া হয়েছে খালের যায়গা। ইতোমধ্যে খালের একটি বিশাল অংশ বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। বালু ভরাট কার্যক্রম উদ্বোধন করেছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ স ম ফিরোজ।

এ বিষয়ে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক নুর কুতুবুল আলম বলেন, খালের জমি অন্য কাজে ব্যবহারের সুযোগ নেই। কাশিপুর খালের ব্যাপারে আমি ইতোমধ্যে শুনেছি, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খালের জমিতে বালু ভরাট করা হলে, তা অপসারণ করা হবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।

স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি বিশ্লেষণ করেও পাওয়া গেছে খালের অস্তিত্ব। তাহলে কীভাবে সরকারি বরাদ্দে খাল ভরাট করেছে উপজেলা প্রশাসন— এমন প্রশ্নের জবাবে বাউফলের এসিল্যান্ড প্রতীক কুমার কুন্ডু জানান, খালের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কখনও কোনো আবেদন করা হয়নি। শ্রেণি পরিবর্তন না হলে কোনো খালের জায়গাই ভরাটের সুযোগ নেই বলে স্বীকার করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে একই এলাকার হাজিরহাটে গরুর ও ধানের হাট টেকসই উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। অভিযোগ আছে, বাউফল প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাজিব বিশ্বাস এরকম বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের জন্য প্রতি অর্থবছরে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। প্রতিটি প্রকল্পের কাজ করেছে আওয়ামী লীগ নেতারা। দাশপাড়া ইউনিয়নে সড়ক নির্মাণ না করেই বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে এই কর্মকর্তা ও একজন যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে দুদক মামলাও করেছিল।

/এটিএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply