পুলিশের লুট করা অস্ত্রে মাদক কারবারিদের সংঘর্ষ

|

রাশেদ নিজাম:

পুলিশের লুট করা অস্ত্রে আধিপত্য বিস্তারে হামলা-পাল্টাহামলা হচ্ছে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে। প্রায়ই গোলাগুলি চলছে বিভিন্ন গ্রুপে। ৬ আগস্ট থেকে আজ পর্যন্ত গুলিতে দুজন নিহতের পাশাপাশি আহত হয়েছে প্রায় অর্ধশত। স্থানীয় বাসিন্দারা তুলে ধরছেন নিজেদের অসহায়ত্বের কথা। খুব দ্রুত সেখানে সমন্বিত অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানাচ্ছে পুলিশ।

৬ আগস্ট থেকে চলছে গুলি। কারও হাতে পিস্তল, আবার কারও হাতে শটগান। ওই দিন জেনেভা ক্যাম্পে গুলিতে আহত হয়ে পরে মারা যান শাহেন শাহ নামের একজন।

প্রায় প্রতিদিনই সংঘর্ষ চলছে বিহারীদের এই ক্যাম্পে। গত মঙ্গলবারও সেখানে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। সেই ধারাবাহিকতায় বুধবার ভোরে দু’পক্ষের গোলাগুলিতে নিহত হয় সনু নামের এক যুবক।

বুধবারের ঘটনায় আহতদের ভর্তি করা হয়েছে লালমাটিয়ার একটি হাসপাতালে। সেখানে আহতদের স্বজনদের পাশাপাশি পুলিশের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। আহতদের স্বজনদের দাবি, দু’পক্ষের গোলাগুলিতে আহত হয়েছেন তারা।

আহতদের নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ ক্রিটিক্যাল কেয়ার হাসপাতালের ম্যানেজার আশিকুজ্জামান তুষারের কাছে জানতে চাওয়া হয় রোগীদের অবস্থা নিয়ে। তিনি বলেন, মূলত আহতদের সামনে এবং পাশ থেকে গুলি করা হয়েছে। গুলির ধরন ছিল ছররা।

স্বজনেরা যে দাবি করছেন তার সাথে বাস্তবতার মিল কতটুকু। আর কাদের হাতে রয়েছে এসব অস্ত্র। তা জানতে অনুসন্ধান চায় যমুনা টিভি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মূলত মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতেই এই অস্ত্রের ঝনঝনানি। ক্যাম্পে আগে থেকেই মাদকের নিয়ন্ত্রণ ভুইয়া সোহেলের হাতে। তার গ্রুপে আছেন সৈয়দপুরিয়া বাবু, বোম নামে আরও দুই জন। এছাড়া আরও দুই অস্ত্রধারী কালিম জাম্বু ও মোহাম্মদ আলীও সোহেলের লোক। তাদের সাথে আছে ক্যাম্পের নামকরা কামাল বিরিয়ানির কামাল ও তার ছেলে ইরফান।

গোলাগুলির একটি ভিডিও ভিডিও আসে যমুনা নিউজের হাতে। এতে দেখা যায়, পিস্তল দিয়ে গুলি চালাচ্ছেন চুয়া সেলিম নামের একজন। তিনি এখন নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছেন পুরোটার। তার সাথে আছেন পার মনু, আকরাম ও শাহআলম। এছাড়া বোবা বিরিয়ানীর মালিক আলতাব, তার ছেলে ইরফান এবং ভাই কামরানও আছেন সেলিমের সাথে।

জেনেভা ক্যাম্পের পাশে প্রায় ৩৫ বছর ধরে বসবাস তাহের সিদ্দিকীর। তার কাছে ক্যাম্প মানেই আতংকের নাম। তিনি যমুনার কাছে বলেন, আমরা এখানে বিহারিদের জ্বয়ালায় অতিষ্ঠ। সারারাত চিৎকার চেচামেচি করে। এছাড়া এরা মাদক ব্যবসার সাথেও জড়িত বলে অভিযোগ করেন এই ব্যক্তি।

থানা পুলিশ জানায়, সাধারণ নাগরিকের জমা দেয়া প্রায় ৬০০ অস্ত্র এবং ২০ হাজার গুলিসহ ৫ আগস্ট রাতে মোহাম্মদপুর থানা থেকে লুট হয় ৭০০ অস্ত্র। গুলির সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। ক্যাম্পে যে পুলিশেরই অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে তা স্বীকার করে নিজেদের সংকটের কথা জানান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী ইফতেখার হাসান।

মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প যেন এক শহরের ভেতর আরেক নগর। দেশজুড়ে যখন চলছে অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ অভিযান তখন এই ক্যাম্প যেন একেবারেই অধরা। বরাবরের মতো এবারও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী বিফল হবে না এমন আশা স্থানীয় মানুষের।

/এটিএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply