আধুনিক ‘অ্যাটমিক থিওরি’ জনক ডাল্টনের জন্মদিন আজ

|

আধুনিক ‘অ্যাটমিক থিওরি’ বা পারমাণবিক তত্ত্বের জনক ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জন ডাল্টন। পারমাণবিক ভর ধারণার মধ্য দিয়ে বিজ্ঞানকে তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন অন্য উচ্চতায়।

১৭৬৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডের ইগলসফিল্ডে জন্মগ্রহণ করেন জন ডাল্টন। যখন তিনি ধর্মের কিছুই বোঝেন না, তখন থেকেই ধর্মীয় ভিন্নমত পোষণকারী হিসেবে বঞ্চনার শিকার হতে থাকেন ডাল্টন। কারণ তার বাবা-মা উভয়েই জর্জ ফক্সের প্রতিষ্ঠিত ‘কোয়েকা’ নামক ধর্মীয় মতে বিশ্বাসী ছিলেন। আর কোয়েকা সমাজের সদস্যদেরকে ‘বিধর্মী’ বলেই আখ্যা দিয়েছিল ইংল্যান্ডের চার্চ। ফলে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চশিক্ষা, সকল ক্ষেত্রেই বাধার সম্মুখীন হন ডাল্টন। বস্তুত উচ্চশিক্ষায় প্রবেশই করতে পারেননি ডাল্টন!

১১ বছর বয়সে ডাল্টন একটি কোয়েকা স্কুলে ভর্তি হন। অল্প সময়ের মধ্যেই স্কুলের সেরা ছাত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তবে স্কুল নয়, তার শিক্ষক তিনি নিজেই ছিলেন। শৈশব থেকেই ডাল্টন স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হতে শুরু করেন।

তিনি নিজের চেষ্টায় বিজ্ঞান ও গণিতে দক্ষতা লাভ করেন। পাশাপাশি ল্যাটিন, গ্রীক ও ফ্রেঞ্চ ভাষার ক্লাসিক্যাল শিক্ষা লাভ করেন। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, মাত্র ১৫ বছর বয়সে শিক্ষকতা শুরু করেন ডাল্টন।

বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিউশন নয়, স্কুলের শিক্ষকতা! নিজের শহর ইগলসফিল্ড থেকে ৪০ মাইল দূরে কেন্ডাল শহরে তার বড় ভাই একটি কোয়েকা বোর্ডিং স্কুল চালাতেন। সেখানেই শিক্ষকতা শুরু করেন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে ‘বঞ্চিত’ থাকা ডাল্টন। আর শিক্ষকতা ক্যারিয়ারের চার বছরের মাথায় ১৯ বছর বয়সী ডাল্টন সে স্কুলের প্রধান শিক্ষকই হয়ে যান!

১৭৯৩ সাল পর্যন্ত ডাল্টন সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। সে বছরই তিনি ম্যানচেস্টারে ‘নিউ কলেজ’ নামক একটি ভিন্নমত সমর্থনকারী কলেজে গণিত ও প্রাকৃতিক দর্শনের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। আর এখান থেকেই ডাল্টনের বিজ্ঞানী হয়ে ওঠার শুরু। কলেজের ল্যাবে গবেষণা শুরু করেন ডাল্টন। এক বছরের মাথায় লিখে ফেলেন তার প্রথম গবেষণাপত্র, ‘এক্সট্রাঅর্ডিনারি ফ্যাক্টস রিলেটিং টু দ্য ভিশন অব কালারস’।

১৮০০ সালে যখন নিউ কলেজ আর্থিক সংকটে পড়ে, তখন ডাল্টন নিউ কলেজ থেকে পদত্যাগ করেন। এ সময় জীবিকা নির্বাহে তিনি গণিত ও রসায়নের গৃহশিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করলেন। তবে আর্থিক টানাটানির মধ্যেও তার গবেষণা থেমে থাকেনি। তিনি এ সময় তাপের পরিবহন, তাপ দ্বারা গ্যাসের প্রসারণ, আলোর ধর্ম, অরোরা বোরিয়ালিস এবং আবহাওয়াবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করেন।

১৮০২ সালে ম্যানচেস্টার থেকে ডাল্টনের গ্যাস ও তরলের প্রসারণ সম্পর্কিত গবেষণাটি প্রকাশিত হলে হৈচৈ পড়ে যায় বিজ্ঞান মহলে। গবেষণাটি আক্ষরিক অর্থেই গ্যাসের ধর্ম বিষয়ক গবেষণার জন্য যুগান্তকারী ছিল।

১৮০৩ সালে জন ডাল্টন গ্যাসের আংশিক চাপের বৈপ্লবিক সূত্র প্রকাশ করেন যা আজ অবধি বিশ্বের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন গবেষণাগারে গবেষকগণ মেনে চলেন আর প্রতিটি শিক্ষার্থী তার উচ্চমাধ্যমিক বইয়ে পড়ে থাকেন। সূত্রটি হচ্ছে:

“পারস্পরিক বিক্রিয়াহীন একাধিক গ্যাস মিশ্রণ কর্তৃক প্রযুক্ত মোট চাপ এবং ঐ প্রতিটি গ্যাস কর্তৃক প্রযুক্ত আংশিক চাপের যোগফল পরস্পর সমান।”

আজ এই মহান বিজ্ঞানীর ৭৮তম জন্মদিন। ১৮৪৪ সালের ২৭ জুলাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে ম্যানচেস্টারের আর্ডউইক সমাধিস্থলে সমাহিত করা হয়।

/এআই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply