গুলিবিদ্ধ সন্তানকে হাসপাতালে নেয়া হয় পিতার রিকশায়

|

রইসুল ইসলাম ইমন, বাউফল করেসপনডেন্ট:

সারাদেশে শিক্ষার্থীদের কোটা বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নিহতদের তালিকায় যুক্ত হয়েছে অনেক শিশু। এদেরই একজন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বাসিন্দা ছিলেন আমিনুল ইসলাম ওরফে মোহাম্মদ আমিন। বয়স ১৬ বছর। অভাবের সংসারে পরিবারের সহযোগী হতে বা-মায়ের সাথে ঢাকায় পাড়ি জমান তিনি। বসবাস করতেন ঢাকার দনিয়া এলাকায়। কাজ করতেন একটি বৈদ্যুতিক সুইচ নির্মাণ কারখানায়। পরিবারের হাল ধরতে কাজে যোগ দেয়া এই কিশোরের প্রাণ কেড়ে নেয় একটি বুলেট। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ রিকশাচালক পিতা।

যমুনা টেলিভিশনের সাথে কথা হয় একমাত্র সন্তান হারানো পিতা ওবায়দুর খানের। আবেগঘন কণ্ঠে তিনি ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, সন্তানের লাশের বোঝা যে বাবা কাঁধে নেন তিনিই বোঝেন সন্তান হারানোর বেদনা। সন্তান হারানো এতটা কষ্টের, যা কাউকে বলে বোঝানো যায় না। যতদিন বাঁচি, এই বেদনা বয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেন, সেদিন ২১ জুলাই ছেলে আমিন সারাদিন বাসায় ছিল। বিকেল ৫টার সময় বাসার সামনেই রাস্তায় গেলে মানুষের দৌড়াদৌড়ি দেখে ভয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে থাকে। হঠাৎ একটি বুলেট এসে ওর বুকের বাম পাশে ঢুকে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে যায়। সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আমিন। দুইজন লোক তাকে নিকটস্থ বেসরকারি হাসপাতাল অনাবিলে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। এমন সময় সেই হাসপাতালের সামনে দিয়ে রিকশা চালিয়ে যাচ্ছিলাম আমি। তখন ওই দুইজন লোক আমাকে ডেকে রোগী নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে যাওয়ার কথা বলে। আমি রাজি হলে, আমিনকে রিকশায় ওঠানোর সময় আমি ওকে দেখতে পাই। দেখেই চিৎকার দিয়ে উঠি এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে আমাকে ও আমার ছেলেকে ওই রিকশাতেই ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মেডিকেলের কর্তব্যরত চিকিৎসক আমিনকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে আমিনের এই অকাল মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ পুরো গ্রাম। বন্ধু ও স্থানীয়দের দৃষ্টিতে অত্যন্ত ভালো এবং শান্ত স্বভাবের ছিল আমিন। আর একমাত্র নাতির মৃত্যুতে পাগল প্রায় দাদী লাভলী বেগম। কান্নায় ভেঙে পড়ছেন, বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, নিহত শিশুশ্রমিক আমিনুল ইসলাম ওরফে মোহাম্মদ আমিনের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের ভরিপাশা গ্রামে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর দনিয়া এলাকায় পুলিশের সাথে কোটা বিরোধীদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে নিহত হয় তিনি।

/এটিএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply