গণমাধ্যম নীতি কেমন চাই

|

মিশুক নজিব ⚫

মঞ্চ প্রস্তুত। অতিথিরাও চলে এসেছেন। শপথ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। সব টেলিভিশনে দেখানো হচ্ছে এ অনুষ্ঠান। এর মাঝেই ইন্ডিয়া ২৪X৭ চ্যানেলের সিইও অমিতাভ বচ্চন হাজির হলেন নিউজ স্টুডিওতে। বসে পড়লেন হটসিটে।

দর্শকদের উদ্দেশে অমিতাভ বচ্চন বলে চললেন, আমি সবসময় মেনে এসেছি, টেলিভিশনে আপনাদের যা দেখানো হবে, তার সবই সত্য। গত ৩০ নভেম্বর আমি এমন একটা সংবাদ করেছি, যেটি অসত্য, খুবই নোংরা। যে খবরে সরকার পড়ে যায়….

ততক্ষণে পরেশ রাওয়ালকে প্রধানমন্ত্রীর শপথ পাঠ পড়ানো শুরু হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে, টিভির দর্শকরা চ্যানেল পাল্টিয়ে চলে যাচ্ছেন ইন্ডিয়া ২৪X৭-এ।

শপথ পাঠের মাঝপথে অতিথিদের কাছে আসতে লাগলো ফোন-এসএমএস; সাংবাদিকদের কাছেও। এর মধ্যে ফোন শেষ করেই কেউ কেউ চেয়ার ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। একই সময়ে সবার মুঠোফোনের রিংটোন বেজে ওঠা ও অতিথিদের চেয়ার ত্যাগ করায় বিস্মিত পরেশ রাওয়াল। এমন কাণ্ডে শপথ পাঠও থামলো।

রামগোপাল ভার্মার রণ সিনেমা যারা দেখেছেন, তাদের নিশ্চয় মাথায় রয়েছে এই দৃশ্য। একটি খবরে পতন হয়েছিল সরকারের, এর কদিনের মাথায় শপথ নিতে যাওয়া নতুন সরকার দায়িত্ব নিতে পারেনি ইন্ডিয়া ২৪X৭ এর অনুসন্ধানে। চোখ দিয়ে পানি গড়াতে গড়াতে অমিতাভ বচ্চন নিজেদের প্রকাশিত ভুল সংবাদের ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন, যেখানে জড়িত ছিলেন তার মেয়ের জামাতা, ছেলেও। সরকার ফেলে দেয়ার ষড়যন্ত্রে প্রচারিত খবর ও এর প্লট তৈরি এবং অন্য টেলিভিশনও এ ঘটনার সত্যতা জানতে পেরেও তা প্রচার না করে হাত মেলায় পরেশ রাওয়ালের সাথে। তবে, ইন্ডিয়া ২৪X৭ ঘটনার সত্যতা জেনে পিছপাঁ হয়নি।

গণমাধ্যমের দায়িত্ব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তখন অমিতাভ বচ্চন বলে ফেলেন— খবর তখনই বানানো বা তৈরি করা হয়, যখন টাকা আর ক্ষমতার প্রতিযোগিতায় গণমাধ্যমও অংশ নেয়।

গণমানুষের সবসময় চাওয়া থাকে সত্য খবরটি পাওয়ার। তারা বেশি বা কম দেখতে চায় না। যা ঘটেছে তা-ই দেখতে চায়। প্রতিদানে মানুষ কী দেয়, তা তো বাংলাদেশের মানুষ ও গণমাধ্যম দেখেছে। সাম্প্রতিক সময়ে যমুনা টেলিভিশনের প্রতি মানুষের জয়গান তো সবাই দেখলো। এর কারণ সবার জানা।

কেবল একটি বা কয়েকটি গণমাধ্যম নয়; সবার কাছ থেকেই তারা একইরকম ভূমিকা দেখতে চান। যা কি না আংশিক সত্য নয়। কিংবা নিউজ হাইড করাও নয়।

বাংলাদেশের গণমাধ্যম একেবারে মুক্ত কিংবা সবাই পুরোপুরি দায়বদ্ধভাবে কাজ করে, তা বলা যাবে না মোটেও। আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে, তা সত্য। এ দায় কেবল একপক্ষের নয়। সবপক্ষই জড়িত। সরকারের চাপ, মালিক পক্ষের নানা হিসাব-নিকাশ যেমন থাকে, তেমনি পাঠক-দর্শকরাও কম যান না। নিজের দল বা মতাদর্শের বিরুদ্ধে খবর কয়জন মানতে চান? কিন্তু সবাইকে মানতে হবে, বাংলাদেশের জয় দেখতে চাইলে আমাদের সঠিক পথে চলতে হবে। সাদাকে সাদা বলতে হবে, কালোকে কালো।

এই প্রত্যাশায় নিশ্চয় গঠিত হয়েছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। তারা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। আগামী মাসে প্রতিবেদন জমা দেবে বলে জানা গেছে। গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে বলতে চাই, কেমন গণমাধ্যম দেখতে চাই—

গণমাধ্যমের দেখভাল এবং কোনো অভিযোগ থাকলে তা জানানোর জন্যই এই কমিশন হতে পারে। সংবাদপত্র, টেলিভিশন চ্যানেল, নিউজ পোর্টাল, রেডিও চারটি মাধ্যমই গণমাধ্যম কমিশনের আওতায় থাকবে। এক্ষেত্রে প্রেস কাউন্সিলের মতো পুরনো প্রতিষ্ঠানগুলো বিলুপ্ত হবে।

কেমন হতে পারে এই কমিশন? এর গঠন প্রক্রিয়ার আগে কাজ নিয়ে আলোচনা করা যাক। গণমাধ্যমের অনুমোদন দেবে কমিশন। সরকারের হাতে কোনোভাবেই অনুমোদন প্রক্রিয়া রাখা যাবে না। অনুমোদন প্রক্রিয়ার জন্য নির্দিষ্ট একটি মানদণ্ড থাকবে। যা পূরণ হলেই অনুমোদন পাবে।

এ-তো গেলো অনুমোদনের বিষয়। গণমাধ্যমগুলোকে নিয়মিত মনিটরিং করবে কমিশন। প্রতি বছর বছর সার্বিক প্রতিবেদন দেবে। কোন পত্রিকার সত্যিকার সার্কুলেশন কত ছিল, টিআরপি কত, অনলাইনে পাঠক কত, সোশ্যাল মিডিয়ায় অবস্থান কেমন ছিল, কারা কতটি নিউজ সরিয়েছে এবং কেন, কারা কতটি ভুল নিউজ করেছে, কর্মীবান্ধব প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা, আর কোনো গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তালিকা এবং তা প্রমাণিত হয়েছে কি না তা প্রতিবেদনে থাকবে।

গণমাধ্যম কমিশন হতে পারে ৭ সদস্যের। ছয়জন পরিচালক ও একজন চেয়ারম্যান। এরমধ্যে ৪ জন হবে সাংবাদিক; থাকতে পারেন একজন সাংবাদিকতার শিক্ষক, সুপ্রিমকোর্টের সাবেক বিচারপতি বা জেলা জজ, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা। আর তথ্য মন্ত্রণালয়ের মনোনীত প্রতিনিধি থাকতে পারে দুইজন। যে দুইজনও হবে সাংবাদিক। এক্ষেত্রে সরকার তাদের দুই প্রতিনিধির সরাসরি মনোনয়ন দিতে পারবে না। ৫টি নাম সুপারিশ করলে এর থেকে দুইটি নামের অনুমোদন দেবে গণমাধ্যমকর্মীরা। বাকি দুই সংবাদকর্মীকেও মনোনীত করবে গণমাধ্যমকর্মীরা।

পাঠক নিশ্চয়ই প্রশ্ন জেগেছে, কোন প্রক্রিয়ায় আর কোন গণমাধ্যমকর্মীরা তা বাছাই করবেন। প্রতিটি কমিশনের মেয়াদ হবে ৩ বছর। তাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩০ দিন আগ থেকে পরবর্তী কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। যা শুরুর পর তিন সপ্তাহের মধ্যে শেষ করতে হবে। কেউ পরপর দুই কমিশনে থাকতে পারবে না। আর কেউ দুইটির বেশি কমিশনের সদস্য হতে পারবে না।

কমিশনে থাকতে ইচ্ছুক দুই সাংবাদিকদের নাম চাইবে রানিং কমিশন। যারা আগ্রহী তারা অনলাইনে আবেদন করবেন। গণমাধ্যম কমিশনের অনুমোদিত যেকোনো সংবাদমাধ্যমে (জাতীয় পর্যায়ে) ৭ বছরের বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন যে কেউ এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদনকারী কাউকে বাদ দিতে পারবে না কমিশন। আবেদনকারীরা নিজেদের প্রস্তাবনা অনলাইনে জমা দেবেন। সবার প্রস্তাবনা একই সময়ে অনলাইনে প্রকাশিত হবে। তাদের মধ্যে দুইজনকে ভোট দিয়ে বেছে নেবেন প্রেসক্লাবের সদস্যরা। আর তাদেরকে বাছাই করার আগে তথ্য মন্ত্রণালয় ৫ জনের নাম সুপারিশ করবে। সেখান থেকেও দুইজনকে বাছাইয়ের বিষয়টি একইসময়ে করবেন সংবাদকর্মীরা। পুরো প্রক্রিয়াটা হবে অনলাইনে। প্রেসক্লাবের গঠন কেমন হবে সেই আলোচনাও নিচে করবো।

চার সদস্য মনোনীত হওয়ার পর তারা প্রথমে একজন শিক্ষককে মনোনীত করবেন। এই ৫ জন মিলে বাকি দুই সদস্যকে মনোনীত করবেন। তারপর ৭ জনের মধ্যে কে প্রধান হবেন তা তারাই ঠিক করবেন।

স্বায়ত্তশাসিত আকারে এই প্রতিষ্ঠান চলবে। কমিশনের সদস্যরা মন্ত্রীর মর্যাদা, সুবিধা পাবেন। তবে তাদের নিয়োগপ্রক্রিয়া থেকে শুরু করে এর আইন-কানুন বদলানোর ক্ষেত্রে সরকারের সরাসরি কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না। আইন বদলাতে হলে তা সংবাদকর্মীদের অনুমোদন নিয়েই করতে হবে।

এই কমিশনের অধীনে কাজভেদে কয়েকটি ইউনিট থাকবে। যেমন, একটি ইউনিট অনুমোদনের প্রক্রিয়া সারবে। আর মনিটরিংয়ের জন্য পাঁচটি ইউনিট (জাতীয় পর্যায়ের পত্রিকা, টিভি চ্যানেল, অনলাইন, রেডিও এবং স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর জন্য একটি ইউনিট), অভিযোগ বা বিচার সংক্রান্ত ইউনিট ইত্যাদি। এসব ইউনিটে বিসিএস তথ্য ক্যাডার এবং স্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক কর্মী (যাদেরকে নিয়োগ দেবেন কমিশন) থাকতে পারে। আর বিচার বা অভিযোগ নিষ্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ক বিভাগ পরিচালনার জন্য নিম্ন ও উচ্চ আদালত থেকে দুই বা তিন বছরের জন্য বিচারক নিয়োগ বা সুপ্রিম কোর্টে ১০ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আইনজীবী নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। যারা কি না অভিযোগ নিষ্পত্তি করবে।

প্রচলিত ফৌজদারি ও দেওয়ানি ছাড়া সংবাদ বা সংবাদমাধ্যম সংক্রান্ত সকল অভিযোগের নিষ্পত্তি হবে গণমাধ্যম কমিশনের গঠিত এ সংক্রান্ত বিভাগে। লেখালেখি, ভিডিও ফুটেজ, রম্য, কমিকের জন্য রাষ্ট্র যে আইনই করুক না কেন, তা নিয়ে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলেও তা নিষ্পত্তি করতে হবে গণমাধ্যম কমিশনে। এমনকি, কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের হলে গ্রেফতারের পূর্বে কমিশনের বিচার সংক্রান্ত বিভাগের মতামত নেয়া জরুরি। অভিযোগের সুস্পষ্ট প্রমাণ ও ভিত্তি আছে কি না এবং অভিযোগ টিকবে কি না— এ নিয়ে মতামত জানা। তাহলে সাংবাদিককে হয়রানি এবং বিশেষ কোনো এজেন্সি বেকায়দায় ফেলতে পারবে না। আর এসব এজেন্সি ডাকলে কোনো সাংবাদিকের হাজিরা দেয়ার ভয় থাকবে না। গণমাধ্যমকর্মী ভুল ও অপরাধ করলে কমিশন ব্যবস্থা নেবে আইন অনুযায়ী। তার প্রতিষ্ঠানও উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে ব্যবস্থা নিতে পারবে।

গণমাধ্যম ব্যবসা নাকি সামাজিক দায়বদ্ধতা? যতদূর মনে পড়ে, দেশের একটি টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে এমন একটি প্রশ্ন শুনেছিলাম অনেক বছর আগে। আমার মতে, আগে দায়বদ্ধতা, এর পাশাপাশি ব্যবসাকে রাখবো। কোনোভাবে আগে ব্যবসা নয়।

এই দায়বদ্ধতাকে মাথায় রেখে বিনিয়োগ করতে হবে বিনিয়োগকারীকে। আর সকলের জন্য এই ব্যবসা আসে নাই। গণমাধ্যম কখনই রাত-দিন টাকা বানানোর মেশিন হতে পারে না। কিংবা লাঠিয়াল বাহিনীও নয়। গণমাধ্যমের অনুমোদনের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের পলিসি, কারা সেখানে কাজ করবেন, অবকাঠামো, গণমাধ্যম কমিশনের নীতিমালা মেনে চলতে পারবে কি না এবং আর্থিক সামর্থ্য আছে কি না সেগুলো হোক গুরুতূপূর্ণ। একই শিল্পগ্রুপকে তিনটির বেশি মিডিয়ার অনুমোদন না দেয়া হোক। আর একই ধরনের মিডিয়া একটির বেশি নয়।

গণমাধ্যমের অনুমতি পেতে হলে অবকাঠামো তৈরির পর দুই বছরের পরিচালন ব্যয় নিশ্চিত করতে হবে। যা খুবই জরুরি। এতে গণমাধ্যম সঠিক পথে হাঁটার সম্ভাবনা তৈরি হবে। কর্মীদেরও দ্রুত চাকরি হারানোর ভয় কমবে। সাম্প্রতিককালে দেশে বহু উদাহরণ তৈরি হয়েছে, প্রচার বা প্রকাশিত হওয়ার পর দ্রুত মুখ থুবড়ে পড়েছে গণমাধ্যম। এসব প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে আর্থিকভাবে সামর্থ্য থাকলে মালিকপক্ষের ভিন্ন কোনো প্রতিষ্ঠানকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সরকার বেকায়দায় ফেলতে চাইলেও তার প্রভাব গণমাধ্যমে এসে পড়ার সম্ভাবনা কমবে।

প্রতিটি গণমাধ্যমের বাৎসরিক অন্তত ৫ শতাংশ লভ্যাংশ কর্মীদের মধ্যে শেয়ার করা যেতে পারে। প্রতি দুই বছর পরপর প্রতিটি গণমাধ্যমের বোর্ড গঠন করতে হবে। যা হতে পারে ১০ সদস্য বিশিষ্ট। তাতে মালিকপক্ষের ৫ জন, গণমাধ্যম কমিশনের মনোনীত একজন প্রতিনিধি, বাকি চারজনের মধ্যে একজন হবেন প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক বা সিইও, বার্তা সম্পাদক, রিপোর্টারদের একজন প্রতিনিধি ও সহ-সম্পাদকদের একজন প্রতিনিধি। প্রতিষ্ঠান অনুমোদনের পর বোর্ড গঠন করতে হবে। বোর্ডেই পরিচালনা সংক্রান্ত সব সিদ্ধান্ত নেবে। এক্ষেত্রে একাধিক বার্তা সম্পাদক থাকলে তাদের মধ্যে কে বোর্ডে যাবেন, তা মনোনীত করবেন গণমাধ্যমটির কর্মীরা। আর রিপোর্টাররা তাদের প্রতিনিধি এবং সহসম্পাদকরা তাদের প্রতিনিধি মনোনীত করবেন।

মালিকপক্ষকে বুঝতে বা বোঝাতে হবে মিডিয়া ঠিক পথে হাঁটলে এর বাণিজ্য ‘বে-পথের’ চেয়ে বেশি হয়। আর সাথে ভ্যালুর হিসাব তো রয়েছেই। ইউনিক পরিকল্পনা থাকলে এবং মান ভালো হলে বাংলাদেশে গণমাধ্যম ব্যবসা লাভজনক। যত্রতত্র গণমাধ্যম ও মানহীন কর্মী নিয়ে কাজ চালিয়ে গেলে ভিন্ন কথা।

গণমাধ্যমকর্মী নিয়োগে মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে সবোর্চ্চ পর্যায়ে নিয়োগে একটি মানদণ্ড তৈরি করতে হবে। যে কেউ চাইলে সংবাদকর্মী হতে পারবে, তা বন্ধ করতে হবে। নূন্যতম স্নাতক বা সমমান পাশ হতে হবে। আর সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী হলে স্নাতক শেষের আগে শিক্ষানবীশ হিসেবে কাজ করতে পারে। শিক্ষানবীশ ও পরামর্শক ছাড়া সবাইকে স্থায়ী কর্মী করতে হবে। নিয়োগ দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির কপি ও নিয়োগের চিঠি কর্মীকে দিতে হবে। চুক্তিতে বা নিয়োগের চিঠিতে এমন কোনো শর্ত থাকা যাবে না, যা গণমাধ্যম কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত নয়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাঠামো গণমাধ্যম কমিশনে জমা দিয়ে তা অনুমোদন নিতে হবে। কেউ চাইলেও হুট করে চাকরি ছাড়তে পারবে না। নির্দিষ্ট সময় আগে প্রতিষ্ঠানকে জানাতে হবে। কর্মীর বিষয়ে চাইলে প্রতিষ্ঠান কমিশনে অভিযোগ করতে পারবে। আর কর্মীও চাইলে এ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে পারবে।

ওয়েজ বোর্ড বাতিল করে সব গণমাধ্যমের জন্যই সমন্বিত একটি বেতন কাঠামো তৈরি করা যেতে পারে। সকল স্থায়ী কর্মী এই বেতন কাঠামোর মধ্যে থাকবে। আর এই বেতন কাঠামো হতে হবে প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরির চেয়ে বেশি। প্রভিডেন্ট ফান্ড থাকতে হবে, সাপ্তাহিক ছুটি অবশ্যই ২ দিন করতে হবে। তিন বছর পর পর ভ্রমণ ছুটি দিতে হবে। তৃণমূল পর্যায়ে যারা সংবাদিকতা করবেন, তাদের বেতন কাঠামোও সন্তোষজনক হতে হবে।

সাংবাদিকদের সকল সংগঠন বাদ করে দিতে হবে। এই পেশার মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির মতো নানা মতের সংগঠন বা গ্রুপ করে সংগঠন থাকতে পারে না। প্রফেশনালিজেমের পুরোপুরি চর্চা হলে তখন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ফোরাম, পরিবেশ বিষয়ক সাংবাদিকতা ফোরাম ইত্যাদি হতে পারে। তবে অন্তত ১০ বছরের আগে এসব না। এখন হলে প্রচলিত রাজনৈতিক ঘেরাটোপই আবার সেই সংগঠনগুলো ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যেহেতু এখানে এসবের প্র্যাকটিস বেশ। সকল সাংবাদকর্মীর ঠিকানা হোক একটি, প্রেসক্লাব। গণমাধ্যম কমিশনের অনুমোদিত বা আওতাভুক্ত জাতীয় পর্যায়ের কোনো গণমাধ্যমে টানা তিন বছর বা বিভিন্ন সময়ে মিলে মোট ৫ বছর সাংবাদিকতা করলে প্রেসক্লাবের প্রাথমিক সদস্য হতে আবেদন করতে পারবেন যে কেউ। যা অনুমোদন করতে হবে আবেদনের এক মাসের মধ্যে। আর প্রাথমিক সদস্য হওয়ার পর দুই বছর সাংবাদিকতা করলে স্থায়ী সদস্য হওয়ার সুযোগ পাবেন। জেলা পর্যায়েও একই কাঠামো হোক। বর্তমানে প্রেসক্লাবে কোনো অপেশাদার সাংবাদিক সদস্য হয়ে থাকলে তা বাতিল করতে হবে। নির্ধারিত মানদণ্ডের বাইরে যেমন সদস্য করা যাবে না, তেমনি কেউ ইতোমধ্যে যদি সদস্য হয়ে থাকেন, যিনি এমন মানদণ্ডের আওতায় পড়েন না, তাকে বাদ দেয়া যাবে। প্রেসক্লাব হোক পেশাদার সাংবাদিকের ঠিকানা। বিদেশি গণমাধ্যমে কর্মরত বাংলাদেশি সংবাদকর্মীদেরও এতে সদস্য হওয়ার রূপরেখা দিতে হবে।

যে কোনো সংবাদকর্মীরই রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতে পারে। কিন্তু সরাসরি রাজনৈতিক দলের কর্মী হয়ে গেলে তিনি প্রেসক্লাবের সদস্য পদ হারাবেন। দলীয় নেতাকর্মীর জায়গা সাংবাদিকতায় না হোক, এটাই প্রত্যাশা।

লেখক গণমাধ্যমকর্মী
ই-মেইল: mishuknajib@proton.me


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply