গণেশ থাপা: সাবেক নেপালি অধিনায়কের ‘ঢাকা ডায়েরি’

|

বাংলাদেশের ঘরোয়া লিগে খুব পরিচিত একটি নাম গণেশ থাপা। ১১ বছরের ক্লাব ক্যারিয়ারে বেশিরভাগ সময়েই এখানকার ক্লাবেই খেলেছেন সাবেক এই নেপালি অধিনায়ক। ১৯৮১ সালে নাম লেখান মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে। এরপর আবাহনীসহ খেলেন বেশ কিছু ক্লাবে। এখনও বাংলাদেশ নিয়ে সেই পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করে বেড়ান গণেশ থাপা।

নেপালের ফুটবল জাগরণে নিজেকে অন্য সবার চেয়ে আলাদা করেছেন গণেশ। ১৯৭৯ সালে জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেক হয় তার। এরপর থেকেই বাংলাদেশের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে জুড়ে আছে তার নাম। ক্লাব ক্যারিয়ারে মোহামেডান-আবাহনীর পাশাপাশি তিনি খেলেছেন ঢাকা ওয়ান্ডারার্স, রহমতগঞ্জসহ কলকাতার ক্লাব ইস্ট বেঙ্গলেও।

গণেশ থাপা বলেন, নেপালে যখন খেলা শুরু করি তখন কোনো প্রফেশনাল লিগ ছিল না। বাংলাদেশে এসে দেখলাম এখানকার ঘরোয়া লিগের জনপ্রিয়তা। গ্যালারিতে দর্শকদের বাধভাঙা উচ্ছ্বাস পৌঁছে যেত মাঠে। সেই স্বর্ণালী দিনগুলো আজও স্মৃতিকাতর করে আমায়।

ঢাকার মাঠে একসাথে খেলেছেন সালাম মুর্শেদী, মোনেম মুন্না, বাদল রায়দের সাথে। তখনকার ঘরোয়া লিগের উত্তাপ আজও স্মরণ করেন গণেশ থাপা বলেন, একবার মোহামেডানের হয়ে খেলতে নেমে আবাহনীর বিপক্ষে পেনাল্টি পাই আমরা। তবে সালাম ও বাদল রায় নিজেরা কিক না নিয়ে আমাকে নিতে বলে। কারণ হিসেবে জানায় আমি সেই সময়ে মোহামেডানের টপ স্কোরার ছিলাম; তাই আমি মিস করলে দর্শকরা কিছু বলবে না। কিন্তু তারা মিস করলে অবস্থা বেগতিক হয়ে যাবে।

১৯৮৬ সালে ঢাকা লিগের একটি ম্যাচ পূর্ববর্তী দলীয় ফটোসেশনে মোহামেডানের জার্সি গায়ে গণেশ থাপা (বাঁ দিক থেকে পঞ্চম)।

বর্তমানে বাংলাদেশের ফুটবলের গ্রাফ নীচের দিকে চলে যাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন গণেশ। তবে প্রশংসা করেন নারী ফুটবলের অগ্রগামীতায়। বলেন, সত্যি বলতে বাংলাদেশের ফুটবলের শুরুটা যেমন ছিল; এখন তা সম্পূর্ণ বিপরীত। এটা আসলেই দু:খজনক ব্যাপার যে সালাহউদ্দিন-বাদল রায়দের মত ফুটবলার তৈরি করতে পারেনি তারা। তবে ভিন্ন চিত্র মেয়েদের ক্ষেত্রে। তাদের উন্নতি চোখে পড়ার মত। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে খুব শীঘ্রই তারা নিজেদের সাফল্যে পৌঁছাতে পারবে।

ফুটবলকে বিদায় জানানোর পর সংগঠক হিসেবেও সফল ছিলেন গণেশ থাপা। ফিফার গোল প্রজেক্টের আগেই দেশের ফুটবল উন্নয়নে কার্যক্রম গ্রহণ করেন তিনি। সংগঠক হিসেবে নিজের অবস্থান জানান তিনি। বলেন, ঢাকা লিগে খেলার সময় স্বপ্ন দেখতাম নেপালেও এমন লিগ চালু করার। ধীরে ধীরে আমরা তা বাস্তবায়ন করেছি। আজকের আনফা কমপ্লেক্স আমি নেপাল ফুটবলের সভাপতি থাকা অবস্থায় তৈরি করেছি। পরে ফিফা গোল প্রজেক্টের মাধ্যমে সংস্কার হয় এখানে। বলতে গেলে শুন্য থেকে আজকের এই অবস্থায় দাঁড়িয়েছে এখানকার ফুটবল।

সার্বক্ষণিক ফুটবল নিয়ে ভাবতে থাকা এই মানুষটি নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেন বাংলাদেশকে। তাই তো ১১ বছরের ক্লাব ক্যারিয়ারে আবাহনী-মোহামেডানসহ বেশ কয়েকটি ক্লাবে এখানেই কাটিয়ে দেন অর্ধেকেরও বেশি সময়। আজও বাংলাদেশ প্রসঙ্গ এলেই স্মৃতিচারণ করেন গণেশ, হারিয়ে যান আশির দশকে, স্মরণ করেন নিজের ঢাকা ডায়েরিকে।

/এমএইচআর


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply