জাকারিয়া হৃদয়, পটুয়াখালীঃ
জাতীয় পার্টির মহাসচিব যিনি এলাকায় পরিচিত‘হেলিকপ্টার এমপি’ হিসেবে। আজ নিজ নির্বাচনী এলাকা পটুয়াখালী-১(সদর,দুমকী,মির্জাগঞ্জ)আসন ঘুরে গেলেন হেলিকপ্টারে। কড়াপুলিশী পাহারায় তিনি হেলিপ্যাড থেকে নেমে জেলা প্রশাসকের রুমে প্রবেশ করে কিছুক্ষণ পর বের হয়ে যান। বিগত দিনের তুলনায় মঙ্গলবার জাপার মহাসচিবের পটুয়াখালীতে আগমনের চিত্র ছিল একেবারে ভিন্ন।
দীর্ঘ ৫ বছর জেলা আওয়ামী লীগের কাধে ভর করে পটুয়াখালী আসলেও আজ তিনি পুলিশ প্রহরায় হেলিকপ্টার যোগে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে অবতরন করেন এবং জেলা প্রশাসকের সাথে সাক্ষাত করেন। এসময় যেকোন ধরনের উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শহরের কয়েকটি পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন ছিল।
এর আগে মনোনয়ন গুঞ্জন শুরু হওয়ার পর থেকে জাপার এই নেতার বিরুদ্ধে পটুয়াখালী জেলায় আওয়ামী লীগ এবং সর্বস্তরের মানুষ পালন করেছে দফায় দফায় বিভিন্ন কর্মসুচী। আজ স্লোগান দিতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগ ও মহিলা লীগের নেতা-কর্মীদের। জেলা আওয়ামীর সভাপতি সাবেক ধর্মপ্রতিমন্ত্রী এ্যাড. শাহাজাহান মিয়ার বাসার সামনে জাপা নেতার বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা গেছে “বাকেরগঞ্জের রুহুল আমিন বাকেরগঞ্জে চলে যা”।
জেলা যুবলীগ নেতা কিবরিয়া জানান, রুহুল আমিন হাওলাদার পটুয়াখালীর বাসিন্ধা না। তার জন্মস্থান পার্শবর্তী জেলা বাকেরগঞ্জে। এখানে তিনি রোহিঙ্গা হিসাবে পরিচিত। তার কারণে গত পাঁচটি বছর জেলা আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যা পুষিয়ে উঠতে আগামী ২০ বছর সময় লাগবে।
ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাবেক ছাত্র নেতা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান মোহন। তার মতে এই আসনে দলীয় এমপি না থাকায় জেলা আওয়ামী লীগের অনেক ক্ষতি হয়েছে। যে কারণে এবার তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী মোঃ শাহজাহান মিয়াকে নৌকার মাঝি হিসাবে দেখতে চান।
মহিলা আওয়ামীলীগ নেতা শিল্পী বেগম জানান, রুহুল আমিন হাওলাদারের গত পাঁচ বছরে তারমত একাধিক নেতৃবৃন্দ নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছে। রুহুলকে ব্যবহার করে কতিপয় লোক এ কাজ করেছে বলে জানান তিনি।
যুবলীগ নেতা মিরাজ জানান, গত পাঁচ বছরে রুহুল আমিনের নিজের পকেট ভারী হলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বেকার ছিল। কোন কাজকর্মে যেতে পারেনি তারা। তিনি বলেন, রুহুল আমিন পাঁচ বছরে কুয়াকাটায় জমি দখল করে থ্রী ষ্টার হোটেল নির্মাণ করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। গত পাঁচ বছরে পটুয়াখালীবাসী তাকে পাঁচ বারের জন্যও দেখেনি। হেলিকপ্টারে এসে কুয়াকাটায় তার ব্যবসায়িক কাজ সেরে আবার হেলিকপ্টারে চড়ে উড়ে বেড়ানোই ছিল তার কাজ। মাঝে মধ্যে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে হেলিপ্যাডে ল্যান্ড করে সার্কিট হাউজ ব্যবহার করতেন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে।
এদিকে রুহুল আমিনের এসব ব্যবহারে জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দরাও হতাশ। গত পাঁচ বছরে দলকে গোছাতে পারেননি তিনি। সদর রোডের ভাড়া করা দলীয় অফিসে পাঁচ বছরে একবার এসেছিলেন কিছুক্ষণের জন্য। পটুয়াখালী শহরে বসবাসের জন্য স্থায়ীভাবে কোন বাসাও নেই রুহুল আমিন হাওলাদারের।
ভোটার বাউল শিল্পী জানান, “গত পাঁচ বছরে ডিসি কোর্টের সামনে কয়েকবার হেলিক্পটার দেখেছি কিন্তু দুঃখিত মোগো এমপি রুহুল সাহেবের চেহারা দেহি নি” তাই এমন এমপি মোরা আর চাইনা।
জাপার পটুয়াখালীর জ্যেষ্ঠ পদে থাকা আরো এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমি তার নির্বাচনে ২০ লাখ টাকা খরচ করেছি এবং দলের জন্য অনেক কিছু করেছি। কিন্তু আমাদের এমপি সাহেব একদিন আমার খোঁজ খবর নেয়নি। তাই দল থেকে দুরে সরে আছি।
তিনি জানান, মঙ্গলবার তিনি পটুয়াখালী আসবেন এ তথ্যটিও তাদের জানানোও হয়নি। তিনি শুধু নিজের ভালটাই বোঝেন অন্যেরটা না। একইভাবে পটুয়াখালী জাপার অনেক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে তার বিরুদ্ধে নানা কটুক্তি করেন।
এদিকে আজকে রুহুল আমিনের পটুয়াখালী আসাকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোঃ মতিউল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য রুহুল আমিন এসেছে আর ডিবি সূত্র জানায়, আজকে রুহুল আমিন হাওলাদারের মনোনয়ন পত্র জমা দেয়ার কথা ছিল তাই পুলিশ মোতায়েন ছিল।
এ ব্যপারে রুহুল আমিনের সাথে যোগাযোগের জন্য তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি রিসিপ করেননি।
Leave a reply