বদলে গেছে ডেঙ্গুর লক্ষণ, প্রাদুর্ভাব দীর্ঘায়িত হওয়ায় শঙ্কায় স্বাস্থ্য অধিদফতর

|

প্রতীকী ছবি

শওকত মঞ্জুর শান্ত:

ভাইরাস মিউটেশনের ফলে বদলে গেছে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, বেড়েছে স্থায়ীত্বও। নভেম্বরের মাঝামাঝি এসেও কমছে না প্রকোপ। এমনকি, প্রাদুর্ভাব আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। শিশু, গর্ভবতী নারী এবং প্রবীণদের জ্বর হলেই পরীক্ষার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎকরা। সতর্ক পর্যবেক্ষণে রাখতে বলেছেন ডায়াবেটিস ও হৃদরোগে আক্রান্তদের। একইসাথে, এসেছে ঘরোয়া অপচিকিৎসা বাদ দেয়ারও তাগিদও।

জানা গেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনটা ডেঙ্গু আর কোনটা সাধারণ জ্বর তা আলাদা করতে পারছেন না অনেকে রোগীই। ডেঙ্গু জ্বরকে যেমন অনেকেই পাত্তা দিচ্ছেন না, তেমনি অনেকেই সাধারণ জ্বরেও নিচ্ছেন সর্বোচ্চ প্রস্তুতি। সমস্যা হচ্ছে নতুন ভেরিয়েন্টের কারণে বলাও যাচ্ছে না কোনটা ডেঙ্গু আর কোনটা স্বাভাবিক জ্বর।

গেল বছরের তুলনায় এবার প্রাদুর্ভাব কম হলেও মৃত্যুর মিছিল থেমে নেই। যদিও বছরের এই সময়ে এসে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব থাকার কথা না। তবে কি ডেঙ্গু জ্বরের ব্যাপ্তি বছরব্যাপী হয়ে যাচ্ছে? একই সাথে ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিষ্ঠিত লক্ষণের বাইরেও নতুন কিছু লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ কে এম শামসুল কবীরের সাথে। তিনি বলেন, প্রচুর রোগী আসছেন ডায়রিয়া নিয়ে, ডায়রিয়া-জ্বর, দেখা গেল ডেঙ্গু পরীক্ষায় তারা পজেটিভ। আবার অনেকেই আসছে বুকে ব্যথা নিয়ে, কিন্তু নিউমোনিয়া বা হার্ট অ্যাটাকের সমস্যা নয়। পরে দেখা যাচ্ছে, তারও ডেঙ্গু পজেটিভ। তিনি বলেন, এমন রোগীও আসছে তার প্লাটিলেট লেবেল কম কিন্তু পরীক্ষায় দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গু নেই। ডেঙ্গু রোগীদের হাত-পা ফুলে যাচ্ছে, যেটি আগে ছিল না।

গেল বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ১ হাজার ৭০৫ জন। এবার এতোটা ভয়াবহ না হলেও দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এতো মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে অধ্যাপক ডা. এ কে এম শামসুল কবীর বলেন, অনেক রোগী খারাপ হয়ে আইসিইউতে গেছে বা মারা গেছে বাসায় অপচিকিৎসা নেয়ার কারণে। ডেঙ্গুর একটাই চিকিৎসা, সেটি হচ্ছে প্যারাসিট্যামল খেয়ে জ্বর কমাতে হবে আর শরীর যেন পানিশূন্য না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা। তিনি বলেন, অহেতুক আখের রস বা ডাবের পানি বেশি বেশি খাওয়ার প্রয়োজন নেই।

মৃত্যুর কারণ নির্ধারণে গবেষণা করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডেঙ্গুকে সাধারণ জ্বর মনে করা, একদম শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে নিয়ে আসা এবং আগে থেকেই জটিল রোগে আক্রান্ত থাকাই প্রধান কারণ বলছে অধিদফতর।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ পরিচালক শেখ দাউদ আদনান বলেন, আমরা সহজে হাসপাতালে যেতে চাই না। যখন একেবারেই হচ্ছে না, তখনই হাসপাতালে নেয়া হয়। ফলে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়ে যায়। মারা যাওয়াদের অধিকাংশই হাসপাতালে নেয়ার ২৪ ঘণ্টার আগেই মারা গেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, এবারের ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দীর্ঘায়িত হতে পারে আরও মাস দুয়েক। সেজন্য দিয়েছে মশক নিধনের তাগিদ।এখনও রাজধানীসহ সারাদেশেই এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। সবাই সচেতন না হলে সহসা ডেঙ্গু থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব নয় বলে মনে করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। একইসঙ্গে জ্বর হলে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছে অধিদফতর।

/এনকে


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply