আলমগীর হোসেন:
দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ, ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ বেশকিছু কারণে অনেকেই টাকা তুলে নিয়েছিলেন ব্যাংক থেকে। ফলে বেড়েছিল ব্যাংকের বাইরে মানুষের কাছে থাকা টাকার পরিমাণ। তবে পট পরিবর্তনে আবারও সেই টাকা ফিরতে শুরু করেছে ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে ব্যাংকের বাইরে ছাপানো টাকার পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ১ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা। অক্টোবর শেষে সেই টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭৯ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। এটিকে, ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থার প্রতিফলন বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বলেন, জুলাইয়ের পর তিন লাখ কোটি টাকা ব্যাংকের বাইরে ছিল। অক্টোবরে ব্যাংকে ঢুকেছে ২১ হাজার কোটি টাকার বেশি। ফলে ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা নেই, সেটি বলা যাবে না। মানুষ হাতের টাকা আবারও ব্যাংকে রাখছেন।
ঘরের টাকা ব্যাংকে ফিরলেও কিছু ব্যাংকের তারল্য সংকট কাটছে না। বরং দিনে দিনে প্রকট আকার ধারণ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, আমানত ফেরাতে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে আরও উদ্যোগী হতে হবে। প্রয়োজনে নতুন পণ্য আনতে হবে।
হুসনে আরা শিখা বলেন, কিছু ব্যাংক এখনও টাকার জন্য ভুগছে। এখানে তারা কিছু কৌশল অবলম্বন করতে পারে। তারা ইউনিক কোনো উদ্যোগ নিয়ে ব্যাংকে টাকা ফেরাতে পারে।
ব্যাংকার ও বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি আর্থিক খাতে সংস্কারে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে বন্ধ হয়েছে লুটপাট এবং অর্থ পাচার। যে কারণে ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে বলে মনে করেন তারা। তবে এটি অব্যাহত রাখতে ব্যাংকিং খাতের সুশাসন আরও জোরদার করার পরামর্শও দিয়েছেন তারা।
বিষয়টি নিয়ে সিটিজেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাসুম বলেন, মানুষের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি হয়েছে দেশে এখন লুটেরারা নেই। তারা বিশ্বাস করতো, ব্যাংক টাকা রাখার জন্য নিরাপদ। তবে আগের বেশকিছু ঘটনায় মানুষ ব্যাংকের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে। সেই আস্থা আবার ফিরতে শুরু করেছে, সেজন্যই ব্যাংকে টাকা ফিরছে।
অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, গত পনেরো বছরে পুকুর, সাগর ও মহাসাগর চুরি হয়েছে। সেই চুরির টাকা আবার দেশেও রাখা হতো না, চলে যেতো বাইরে। ফলে মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখতে অনিরাপদ ভেবে সেগুলো তুলে নিয়েছিল। পট পরিবর্তনের পর কিছু ইতিবাচক ঘোষণায় মানুষ ভরসা করছে ব্যাংককে।
ঘরের টাকা ব্যাংকে ফেরার ফলে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়বে। যা অর্থনীতি এবং কর্মসংস্থানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলেও আশা বিশ্লেষকদের।
/এনকে
Leave a reply