কূটনৈতিক শিষ্টাচার মানছে ভারত?

|

আহমেদ রেজা

বিভিন্ন দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়ন ও কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে ১৯৬১ সালে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় এক সম্মেলনের মাধ্যমে একটি চুক্তি সাক্ষর করেন বিশ্বনেতারা। কূটনৈতিক সম্পর্ক ও আচরণ বিষয়ক এই চুক্তি ‘ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপ্লোম্যাটিক রিলেশনস’ নামেও পরিচিত।

তাতে প্রতিবেশি দেশের সাথে সম্পর্ক, কূটনৈতিক শিষ্টাচার কিংবা সংকটকালে আচরণের সীমারেখা নির্ধারণ করে দেয়া আছে। চুক্তিটিতে মোট ৫৩টি ধারা রয়েছে, সাক্ষরকারী রাষ্ট্রসমূহ যেগুলো সব সময় মেনে চলার চেষ্টা করে। কোনো দেশ ওইসব ধারার পরিপন্থী কাজ করলে সেটাকে ‘চুক্তির বরখেলাপ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশেষ করে চুক্তির ২২ নম্বর ধারায় বলা আছে, কূটনীতিক মিশনের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে স্বাগতিক দেশকেই। সেখানে কোনো প্রকার হামলা, ক্ষতি, শান্তি নষ্ট বা মর্যাদাহানি যেন না হয়, সে বিষয়ে স্বাগতিক দেশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

ঢাকা-দিল্লির সাম্প্রতিক টানাপোড়েনে প্রশ্ন উঠেছে, ভারত এই শিষ্টাচার কতটা মেনে চলছে? বিশেষ করে ভারতের আগরতলার সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনার পর, ভিয়েনা কনভেনশন চুক্তি রক্ষায় ভারত কতটুকু আন্তরিক সে প্রশ্ন উঠেছে?

বিশ্লেষকরা বলছেন, কর্তৃত্ববাদী আচরণ কেবল প্রতিবেশির সাথে সম্পর্কে তিক্ততা বাড়ায়। দুই দেশের সম্পর্ক হতে হবে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এবং পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে। গুজব, অপপ্রচার বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি শুধু প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সাথে দূরত্ব বৃদ্ধি করবে— এমনটাও সতর্ক করেছেন তারা।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) নাঈম আশফাক চৌধুরী বলেন, সহকারী হাইকমিশনে হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর আগে কলকাতায় উপ-হাইকমিশনে হয়েছে। এর পরপরই তাদের উচিত ছিল, আগরতলা-দিল্লি অন্যান্য মিশনে নিরাপত্তা বাড়ানো। কিন্তু তা হয়নি। ভিডিও ফুটেজে আমরা দেখেছি, সেখানে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের শারীরিক অঙ্গ-ভঙ্গি এমন ছিল, যেন তারাই হামলার অনুমতি দিয়েছে।

রাজনৈতিক ও নিয়াপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) আহমেদ ফেরদৌস বলেন, বাংলাদেশের হাইকমিশনে আক্রমণ, ওইটা কিন্তু বাংলাদেশ। ধরে নিতে হবে তা বাংলাদেশের ওপর আক্রমণ।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রতিবেশি দেশের এমন অনাহুত আচরণে সংকট বাড়ছে দুই দেশের মধ্যে। একই সাথে তারা মনে করিয়ে দিলেন, প্রতিবেশি রাষ্ট্র হিসেবে প্রত্যেকেরই আছে সমান দায়িত্ব।

মেজর জেনারেল (অব.) নাঈম আশফাক চৌধুরী বললেন, একটা দেশের সাথে প্রতিবেশির সম্পর্ক কেবল সরকারে সাথে সরকারের হওয়া উচিত না। কিংবা একটি রাজনৈতিক দলের সাথে আরেকটি দলের হওয়া উচিত না। এটা হওয়া উচিত জনগণের সাথে জনগণের। দুইটা প্রতিবেশির সাথে যে সর্ম্পক হবে, তা পারস্পরিক সহায়তা ও আত্মমর্যাদা বজায় রেখে হওয়া উচিত।

মেজর (অব.) আহমেদ ফেরদৌস বলেন, ঢাকার বারিধারায় যে প্রতিবাদ কর্মসূচি চিল, তা কিন্তু সরকার নিরাপত্তা দিয়ে ভারতীয় দূতাবাসকে রক্ষা করেছে। তাতে ভারত ও বাংলাদেশ কী দায়িত্ব পালন করেছে তা উঠে এসেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রপচার কিংবা অপতথ্য না ছড়িয়ে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য উপস্থাপনে নজর দিতে মতামত বিশ্লেষকদের।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply