বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছেন, সম্পর্ক বাড়ানো ছাড়া দ্বিতীয় কোনো চিন্তা নেই। আমরা এটাকে উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হিসেবে দেখি।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও বাসভবন যমুনায় অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়ে আলোচনায় বিক্রম মিশ্রি বলেন, আমরা যেখানে ছিলাম সেখান থেকেই আবার শুরু করতে চাই। নয়াদিল্লি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে এবং দুই প্রতিবেশীর মধ্যকার সম্পর্ক জোরদারে ‘সম্মিলিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টা’য় আগ্রহী।
প্রায় ৪০ মিনিটের ওই বৈঠকে সংখ্যালঘু ইস্যু, অপপ্রচার, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ককে ‘খুবই দৃঢ়’ এবং ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে উল্লেখ করেন। এ সময় দুই পক্ষ থেকে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন কারণে দুই প্রতিবেশির সম্পর্কে কিছু মেঘ জমে ছায়া তৈরি করেছে। এই ‘কালো মেঘ’ মুছে ফেলতে হবে।
বিগত ১৫ বছরে শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলের কথা বর্ণনা করে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের লোকজন উদ্বিগ্ন, কারণ তিনি সেখান (ভারত) থেকে অনেক বক্তব্য দিচ্ছেন। এটা উত্তেজনা সৃষ্টি করছে।
প্রধান উপদেষ্টা জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শিক্ষার্থী, শ্রমিক ও জনতা কীভাবে এক হয়ে হাসিনার দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনামলের অবসান ঘটিয়েছে তার একটি বিস্তারিত বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, আমাদের কাজ হলো তরুণদের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখা। এটি একটি নতুন বাংলাদেশ।
অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে, সেসবের সংক্ষিপ্ত রূপরেখাও সে সময় তুলে ধরেন তিনি।
বিক্রম মিশ্রি জানান, তিনি জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সময় প্রায় প্রতি ঘণ্টায় বাংলাদেশের ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণ করেছেন।
অধ্যাপক ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর যে সকল বিদেশি নেতা তাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামনের সারিতে আছেন বলেও তখন উল্লেখ করেন বিক্রম মিশ্রি।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে গণমাধ্যমের বয়ান ও দেশটির সরকারের ধারণা ভিন্ন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আপনার সাফল্য কামনা করি। বাংলাদেশের একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক রয়েছে এটা ভুল ধারণা। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কোনো নির্দিষ্ট দলের জন্য নয়, বরং সকলের জন্য।
বন্যা ও পানি ব্যবস্থাপনায় ঘনিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা এবং সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ভারতকে সাড়া দেয়ার আহ্বান জানান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ।
সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিটি নাগরিকের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা একটি পরিবার। আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
ভিসার বিসয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জানান, তার দেশ গত মাসে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসার সংখ্যা দ্বিগুণ করেছে এবং আগামী দিনে এই সংখ্যা আরও বাড়াবে।
/এমএন
Leave a reply